আসুন জেনেনিই নাসার প্রথম সূর্যের মিশন, পার্কার সোলার প্রোব

নাসার প্রথম সূর্যের মিশন। পার্কার মিশন

সূর্য হলো সৌরজগতের এমন এক নক্ষত্র যার অধীনে ৮টি গ্রহ রয়েছে, পৃথিবীর বুকে প্রায় সমস্ত শক্তির উৎস সূর্য। কিন্তু ২০১৮ সাল পর্যন্ত মহাকাশ বিজ্ঞানের কোনো মিশনই সূর্য্য পর্যন্ত যেতে সক্ষম হয়নি। মহাকাশ বিজ্ঞানিদের কাছে সূর্য একটি খুবই আকর্ষণীয় বিষয় কারন এখনো পর্যন্ত সূর্যের সম্পর্কে বিশদে কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। সেই কারণে নাসা ২০০৯ সালে একটি মিশন পরিকল্পনা করে যার নাম দেওয়া হয় ‘সোলার প্রোব‘।

পার্কার সোলার প্রোব মিশনটির উদ্দেশ্য

কিন্তু নাসা কেনো এই মিশনটি লঞ্চ করলো বিজ্ঞানিদের জন্য কি মিশনটি খুবই দরকার ছিল?, তবে তার উত্তর অবশ্যই হ্যা হবে। সূর্যের ভূপৃষ্টের তাপমাত্রা প্রায় ৫৫০০° সেলসিয়াস কিন্তু আপনি যতই উপরের দিকে আসবেন ততই সূর্যের তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে। সূর্যের এই সারফেসের নাম কোরোনা, এটি সূর্যের সবচেয়ে বাইরের স্তর। সূর্যের বাইরের সারফেসের তাপমাত্রা প্রায় ৫ লক্ষ থেকে ৮ লক্ষ ডিগ্রী সেলসিয়াস। কিন্তু কেন এই তাপমাত্রার পরিবর্তন এই তথ্য জানার কারনেই নাসা এই সোলার প্রোব মিশনটির পরিকল্পনা করে।  

পার্কার সোলার প্রোব নামকরণের কারণ

২০১৭ সালে নাসা মিশনটির নাম পরিবর্তন করে ‘পার্কার সোলার প্রোব’ করে দেয়, এর কারণ হলো আমেরিকার একজন পদার্থ বিজ্ঞানী যার নাম ‘ইউজিন পার্কার‘ তিনি ১৯৫০ সাল নাগাদ সর্ব প্রথম সূর্যের বাইরের পৃষ্ঠ বা কোরোণা সারফেসের কথা বলেছিলেন। তিনি সর্বপ্রথম সূর্যের বাইরের যে এমন কোন স্তর আছে যার তাপমাত্রা ৫ লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ ডিগ্রী সেলসিয়াস হতে পারে এমন ধারণা দিয়েছিলেন। সেই কারণেই নাসা তার দেশের বিজ্ঞানী সম্মানে মহাকাশ যানটির নামকরণ ‘পার্কার সোলার প্রোব‘ রাখে। নাসা এই সর্বপ্রথম কোন জীবিত ব্যক্তির নামে তাদের মিশনের নাম রাখলো।  

পার্কার সোলার প্রোব যানটির বিবরণ

২০০৯ সালে মিশনটির পরিকল্পনার পর দীর্ঘ ৮ বছরের প্রচেষ্টার পর মহাকাশযানটি তৈরি হয়। মহাকাশ যানটিকে এমন ভাবে তৈরি করা হয় যাতে যানটি সূর্যের তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। মহাকাশযানটির যে দিকটি সূর্যের দিকে থাকবে সেই দিকে একটি গোলাকার প্লেট বসানো আছে সাদা বর্ণের। যানটি যখন সূর্যের কাছে যাবে তখন সূর্য থেকে আগত তাপ এই প্লেটের সাহায্যে প্রতিফলিত হয়ে পুনরায় ফিরে যাবে। যানটি তৈরি করতে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। এর ওজন ৫০০ থেকে ৬৯০ কেজি, লঞ্চের ওজন সহ।

নাসা এই পার্কার মিশনটি ২০১৮ সালের ১২ই আগস্ট লঞ্চ করা হয়। মিশনটির মেয়াদকাল হল ৭ বছর, এই ৭ বছরে পার্কার সূর্যের মোট ২৪ বার প্রদক্ষিণ করবে। প্রত্যেকবার প্রদক্ষিণের সময় মহাকাশযানটি সূর্যের আরো কাছে পৌঁছাবে। এই ২৪ বার আবর্তনের সময় মহাকাশ যানটির গতি থাকবে প্রায় ৭ লক্ষ কিমি/ঘন্টা। ২০২৪ সাল পর্যন্ত মিশনটির মেয়াদকাল রয়েছে। এই সময়ের মধ্যেই পার্কার সূর্যের বিভিন্ন তথ্য নাসাকে পাঠাবে, হয়তো এর পরেই আমরা জানতে পারব সূর্যের ভূপৃষ্ঠে চেয়ে সূর্যের কোরোনা স্তরের তাপমাত্রা বেশি কেনো। যানটি সূর্য থেকে প্রায় ৬৪ লক্ষ কিলোমিটার দূর দিয়ে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করবে।   

পার্কার সোলার প্রোব, সৌরআধি কি?

সূর্য থেকে এক রকমের ‘সৌর আধি‘ বের হয়, একে আপনি সৌর ওয়েভ বলতে পারেন। যে তরঙ্গ সূর্য থেকে নির্গত হয় এবং সমগ্র সৌরমণ্ডলে ছড়িয়ে পরে। পৃথিবীর নিজস্ব বায়ুমণ্ডলের কারণে এই তরঙ্গ পৃথিবীতে পৌঁছাতে পারেনা। পৃথিবীর যে অংশে বায়ুমণ্ডলের প্রভাব কম অর্থাৎ উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরুতে রাতের আকাশে এক ধরনের ‘পোলার লাইট‘ দেখতে পাওয়া যায়, এই লাইট সৌর তরঙ্গেরই প্রভাব।   

সৌর আধির প্রভাবে আমাদের পৃথিবীর কোনো ক্ষতি না হলেও পৃথিবীর কক্ষপথের স্যাটেলাইট গুলোর ক্ষতি হয়। এর ফলে স্যাটেলাইট গুলোর গড় আয়ু কমে যায়, যার ফলে প্রত্যেকটি মহাকাশ কেন্দ্রকে প্রচুর টাকা খরচ করতে হয়। মহাকাশযানটির সাদা প্লেটটিতে ইউজিন পার্কারের নাম লেখা আছে। তার সঙ্গে নাসা লঞ্চের পূর্বে সমগ্র পৃথিবী জুড়ে একটি বিজ্ঞাপন বের করেছিল নাম নথিভুক্ত করার জন্য যেখানে মোট ১১ লক্ষ লোকের নাম নথিভুক্ত করা হয় এবং নাসা ১১ লক্ষ লোকের নাম একটি চিপে ভরে মহাকাশযানটিতে লাগিয়ে দেয়। ঘটনাটি একটু অদ্ভুত হলেও এটাই সত্যি, সোলার প্রোব এর সাথে মানবজাতির কিছু অস্তিত্ব নাসা জুড়ে দেয়।   

পার্কার সোলার প্রোব এখনো পর্যন্ত সূর্যকে মোট ৬ বার প্রদক্ষিণ করেছে প্রত্যেকবার প্রদক্ষিণের পর নাসা তাদের ওয়েবসাইটে মিশনের বিবরণ প্রকাশ করে আপনি নিজে গিয়ে নাসার ওয়েবসাইটটিতে আরো বিশদে জানতে পারবেন।

মন্তব্য করুন