এতদিন যাবৎ যা অসম্ভব ছিল তাই সম্ভব করে দেখালো আমেরিকার অন্যতম মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (NASA)। রহস্যের ঘেরাটোপে লুকিয়ে থাকা ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণ গহবরের অন্তহীন অন্ধকার এতদিন অচেনা, অজানাই ছিল। তবে এবার হয়তো সেই অন্ধকারের সামান্য আশার আলো দেখাতে পেরেছে নাসা। ব্ল্যাকহোলের অন্ধকারে কি ঘটছে, কিভাবে ঘটছে সেই গোপন রহস্যের কথা কিছুটা হলেও জানতে পারা গেছে অবশেষে।
এই প্রথম ব্ল্যাকহোলের চারপাশের চৌম্বক ক্ষেত্রের ছবি তুলেছে নাসা
ব্ল্যাকহোলের চারপাশে থাকা অতি শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্রের ছবি তোলা সম্ভব হয়েছে এই প্রথম। এই চৌম্বক ক্ষেত্র কিভাবে সাজানো রয়েছে ব্ল্যাকহোলে চারপাশে, তার আচার-আচরণ বোঝা সম্ভব হবে এই ছবির মাধ্যমেই।
আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল’-এ এই ছবি সম্পর্কিত গবেষণা পত্রটি প্রকাশ করা হয়।
ঠিক দু’বছর আগে মহাকাশে থাকা ব্ল্যাকহোলের প্রথম ছবি তোলা হয়েছিল। তার আগে পর্যন্ত ব্ল্যাকহোল কেবলমাত্র ধারণায় আবদ্ধ ছিল বিজ্ঞানীদের কাছে। প্রথম ব্ল্যাকহোলের ছবি গ্রহণের দুই বছর পর তার চৌম্বক ক্ষেত্রের ছবি তোলা জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাসে আরো এক যুগান্তকারী ঘটনা।
প্রথম ব্ল্যাকহোলের ছবি :
আজ থেকে ঠিক দু’বছর আগে অর্থাৎ ২০১৯ সালে পৃথিবী থেকে প্রথম ব্ল্যাকহোলের ছবিটি তোলা সম্ভব হয় ‘ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ’– এর সাহায্যে। পৃথিবী থেকে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত নক্ষত্রপুঞ্জ ‘এম ৮৭’ এর ভিতরে থাকা একটি সুপারম্যাসিভ ব্লাকহোল ছিল সেটি। এটিই ছিল প্রথম ব্ল্যাকহোল যার ছবি তোলা সম্ভব হয়েছিল।
আরো পড়ুন – নাসা আবিষ্কার করল নতুন এক নীলাভ গ্যালাক্সির
প্রথম ব্ল্যাকহোলের চৌম্বক ক্ষেত্রের ছবি :
২০১৯ সালে প্রথম ব্ল্যাকহোলের ছবি তুলতে পারাটা কিছুটা অসাধ্য সাধনের মতই। তবে দুই বছর পর আরও এক অসাধ্য সাধন সম্ভব হয়েছে সেই ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ-এর সাহায্যেই। দুই বছর আগে পাওয়া সুপারম্যাসিভ ব্লাকহোল ‘এম ৮৭’ এর চারপাশের চৌম্বক ক্ষেত্রের সম্পূর্ণ ছবি তুলেছে ‘ইএইচটি’। যা থেকে চাক্ষুষ করা সম্ভব হয়েছে চৌম্বক ক্ষেত্রের পরিধি, গতিবিধি সম্পর্কে।
For the first time, EHT scientists have mapped the magnetic fields around a black hole using polarized light waves. With this breakthrough, we have taken a crucial step in solving one of astronomy’s greatest mysteries.
— Event Horizon ‘Scope (@ehtelescope) March 24, 2021
Credit: EHT Collaboration#MagnetizedBlackHole #EHTBlackHole pic.twitter.com/sey42kAMSx
কিভাবে সম্ভব হলো?
দুই বছর পূর্বে ব্ল্যাকহোলের ছবি এবং এক এবছরে সেই ব্ল্যাকহোলের চৌম্বক ক্ষেত্রে ছবিটি তোলা সম্ভব হয়েছে ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ-এর মাধ্যমে। ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ পৃথিবীর ৮টি বিভিন্ন জায়গায় বসানো ৮টি রেডিও টেলিস্কোপ-এর সমষ্টি। এই টেলিস্কোপ গুলি পৃথিবীর ৮টি জায়গায় এমন ভাবে বসানো রয়েছে যাতে এদের লেন্স গুলির ব্যাস যোগ করলে পৃথিবীর ব্যাস এর সমান হয়। অর্থাৎ ইএইচটি এর ৮টি লেন্সের ব্যাস পৃথিবীর ব্যাস এর সমান, এবং এভাবেই ব্ল্যাকহোল এবং তার চুম্বক ক্ষেত্রের ছবি তোলা সম্ভব হয়েছে।
চৌম্বক ক্ষেত্রের অবস্থান :
ইএইচটি দ্বারা প্রাপ্ত ব্ল্যাকহোলের চৌম্বক ক্ষেত্রের ছবি থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এই ক্ষেত্রটি ব্ল্যাকহোলের ব্যাসার্ধের আয়তনের পাঁচ থেকে ছয় গুণ দূরত্বে অবস্থিত। এই চৌম্বক ক্ষেত্রের দূরত্বের আড়াই থেকে তিন গুণ কম দূরত্বে ব্ল্যাকহোলের সেই অঞ্চলের অবস্থান, যেখানে পৌঁছানো কোন কিছুই আর ফিরে আসে না, এমনকি আলোর ফোটন কণারও রক্ষে নেই সেখানে। তলিয়ে যায় ব্ল্যাকহোলের অন্তহীন অন্ধকারে। আগামী দিনে এই আবিষ্কার ব্ল্যাকহোল কে আরও ভালোভাবে জানতে সাহায্য করবে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের।