পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় ফুল কী

পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় ফুল কী: সারা বিশ্ব জুড়ে রয়েছে নানা রকমের ফুলের বাহার। যেগুলি সারা বিশ্বের নানা স্থানে আলাদা আলাদা আবহাওয়ায় বেড়ে ওঠে। আর তাদের মধ্যে থেকেই কিছু কিছু ফুল নানা দেশের বা রাজ্যের জাতীয় ফুলের স্বীকৃতি পায়। ঠিক তেমনই ভারতবর্ষের জাতীয় ফুল হিসাবে পদ্মফুল কে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ভারতের নানা রাজ্যেরও কিছু জাতীয় ফুল রয়েছে। তবে ভারতের জাতীয় ফুল কি আমরা সকলেই জানি, কিন্তু অনেকেরই হয়তো জানা নেই পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় ফুল কী বা পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য ফুল কী।

পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় ফুল পশ্চিমবঙ্গের আবেগের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে রয়েছে। যার গন্ধ শরৎকাল কে আরো স্নিগ্ধ করে তোলে, সেটি হল শিউলি ফুল। শিউলি ফুল কে প্রায় সবাই চিনে থাকলেও অনেকেরই জানা নেই যে এটি পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় ফুল বা রাজ্য ফুল।

পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় ফুল কী?

উ – শিউলি ফুল।

West Bengal State flower name?

Ans – Night flowering jasmine.

পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় ফুল কী, পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় ফুল
পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় ফুল

পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় ফুল কী, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জাতীয় ফুল কি

শিউলি ফুলের অন্যান্য নাম –

নিকটান্থেস প্রজাতির একটি ফুল হলো শিউলি ফুল। শিউলি ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম হল- নিকটেন্থিস অর্বোর ট্রিসটিস (Nyctanthes Arbor tristis)। ইংরেজিতে এটিকে Night Flower Jusmine (নাইট ফ্লাওয়ার জেসমিন) বলা হয়। শুধু শিউলি নয় এই ফুলের রয়েছে আরও বেশকিছু নাম, যেমন – বাংলায় এই ফুলকে শিউলি ছাড়াও শেফালী, শেফালীকা বলা হয়। মারাঠি ভাষায় এটিকে ‘পারিজাত‘ বলা হয়। উড়িষ্যায় শিউলি ফুলকে ‘গঙ্গা শিউলি‘ বলা হয়ে থাকে। এছাড়াও সংস্কৃত ভাষায় এই ফুলকে হার্সিঙ্গার পুষ্পক, মালিকা ইত্যাদি নামে ডাকা হয়।

শিউলি গাছ ও ফুলের বিবরণ –

মূলত শরৎকাল অর্থাৎ ইংরেজি অক্টোবর মাসে এই ফুল ফুটতে দেখা যায়। শরতকালের হালকা কুয়াশা ও শীতের মধ্যে শিউলি ফুলের সুগন্ধ পরিবেশ কে আরো সুন্দর করে তোলে। পশ্চিমবঙ্গের শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজার সময় ফোটে এই ফুল। শরৎকাল এর শুরুতে বাতাসে শিউলি ফুলের গন্ধ মনে করিয়ে দেয় পুজো আসছে। রূপে ও গন্ধে এই ফুল অসাধারণ। এটি ছোট ছোট পাপড়ি বিশিষ্ট ফুল, যার মাঝের অংশটা এবং বৃন্ত কমলা রঙের হয়, বাকিটুকু সাদা রঙের। ফুলগুলি হাতের আংগুলের ২ টি কড়ের থেকেও ছোট হয়। ফুলগুলি দেখতে যেমন চমৎকার তেমনি চমৎকার এগুলির গন্ধ। শিউলি গাছ গুল্ম জাতীয় গাছ। তবে বাগানে এই গাছ রোপন করলে এটি আকৃতিতে অনেকটাই বড় হয়। এই গাছের পাতা গুলি খসখসে প্রকৃতির হয়ে থাকে। এছাড়া এই গাছে ফুল ঝরে যাওয়ার পরে ছোট ছোট ফল বা বীজ দেখতে পাওয়া যায়। এইগুলি গোল গোল চ্যাপ্টা ধরনের হয়ে থাকে।

শিউলি ফুলের নামের অর্থ –

শিউলি ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম হল নিকটেন্থিস অর্বোর ট্রিসটিস (Nyctanthes Arbor tristis)। সন্ধ্যায় এর ফুল ফোটে আর সকালে ঝরে যায়, দিনের আলোতে এই গাছ তার সৌন্দর্য হারায়। তাই একে বিষণ্ন বা দুঃখের গাছ বলা হয়ে থাকে। শিউলি ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম কি ল্যাটিন ভাষাতে রয়েছে ‘নিকটেন্থিস অর্বোর ট্রিসটিস‘ এই পুরো নামটির অর্থ হলো সন্ধ্যায় ফোঁটা এবং বিষন্ন গাছ।

পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় ফুল কী, জাতীয় ফুল পশ্চিমবঙ্গ

পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় ফুল কী, পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় ফুল
পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় ফুল

শিউলি গাছের ঔষধি গুন ও উপকারিতা –

শরতকালের আমেজকে যেমন শিউলি ফুল অনেক গুণে বাড়িয়ে দেয়, তেমনি রয়েছে এই গাছের বেশ কিছু ঔষধি গুণ। যা গাছটিকে একটি আকর্ষণীয় এবং চমৎকার গাছ বানিয়েছে। গাছের যে বিশেষ ঔষধি গুন গুলি রয়েছে সেগুলি হল –
১. শিউলি পাতা তেতো স্বাদের হয়ে থাকে তাই পেটে কৃমির সমস্যা হলে শিউলি পাতার রস পান করলে কৃমির সমস্যা কমে যায় নিম ও কালমেঘ পাতার মতো শিউলি পাতা ও কৃমি সারাতে সক্ষম।
২. শিউলি গাছের পাতার পাশাপাশি শিউলি গাছের ছাল বা বাকোলের রয়েছে বিশেষ গুণ। শিউলি গাছের ছাল রোদে শুকিয়ে চূর্ণ করে সকালে ও বিকালে হালকা গরম জলের সাথে খেলে শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমে যায়।
৩. ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রেও শিউলি বিশেষ ফলদায়ী। ম্যালেরিয়া হলে তার সারাতে শিউলি পাতার রস খেলে উপকার পাওয়া যায়।
৪. ব্রণের মতো চর্ম রোগ নিরাময়ে শিউলি পাতার রস বিশেষ উপকারী। প্রতিদিন দু’তিনটে শিউলি পাতার রস পান করলে দ্রুত ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
৫. এছাড়াও মাথার খুশকি দূর করতে সাহায্য করে এই পাতার রস।
৬. আর্থারাইটিস এর ব্যথা সারানোর মোক্ষম ঔষধ হলো শিউলি পাতা। যদি প্রতিদিন দুটি তুলসী পাতা এবং দুটি শিউলি পাতা একসঙ্গে জলে ফুটিয়ে সেই জল পান করা যায় তাহলে আর্থ্রাইটিসের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
৭. আর্থারাইটিস শুধু নয় এর পাশাপাশি বাঁধ ও সাইটিকা ব্যথার ক্ষেত্রেও বেশ উপকারী শিউলি। কয়েকটি তুলসী পাতা ও শিউলি পাতা অল্প জলে ফুটিয়ে ছেকে খেলে আরাম পাওয়া যাবে।
৮. জ্বর কমাতেও বেশ কার্যকরী শিউলি পাতার রস।
৯. ত্বককে উজ্জ্বল করতে শিউলি পাতার রস খাওয়া যেতে পারে।

শিউলি ফুলের অন্যান্য ব্যবহার –

পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় ফুল বা রাজ্য ফুল হলো শিউলি। আর এই ফুল জাতীয় বা রাজ্য ফুলের মর্যাদা পেয়েছে তার নানা গুণের কারণে। বেশ কিছু ঔষধি গুনের পাশাপাশি রয়েছে এর আরো কিছু ব্যবহার। বাঙালির ঘরে ঘরে পুজোতে এবং মণ্ডপে দুর্গাপূজার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে এই ফুল ব্যবহার করা হয়। পুজোর ছাড়াও রং তৈরিতে ব্যবহার হয়ে থাকে শিউলি ফুল। হিন্দু ধর্ম মতে শিউলিফুল এমন একটি ফুল যা মাটিতে পড়ার পরও পুজোয় ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

আরো পড়ুন- বাংলাদেশের জাতীয় ফুল কি

শিউলি ফুল কোথায় কোথায় পাওয়া যায় –

পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় ফুল শিউলি ফুল,যা পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও থাইল্যান্ডের কাঞ্চাবুরির প্রাদেশিক বা রাষ্ট্রীয় ফুল। পশ্চিমবঙ্গ এবং কাঞ্চাবুরি শুধু নয় এই ফুল দক্ষিণ এশিয়ার অনেক স্থানেই পাওয়া যায়, যেমন – ভারত, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান ইত্যাদি।

পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় ফুল, West Bengal State flower name

পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় ফুল শিউলি ফুলের প্রচলিত গল্প –

এই শিউলি গাছ সম্বন্ধে একটি সুন্দর গল্প প্রচলিত আছে। গল্পটি হলো একদা পারিজাতিকা নামের এক রাজকন্যা সূর্যকে ভালোবেসে কামনা করেন। কিন্তু তাকে কোনো ভাবে না পেয়ে আত্মহত্যা করে নেন। তারই দেহের ভস্ম থেকে এই গাছের জন্ম হয়। রাজকন্যা পারিজাতিকার ব্যর্থ প্রেমের মতই এই ফুলও সূর্যের আলোর স্পর্শে অশ্রুর মত পৃথিবীর বুকে ঝরে পড়ে। আর শুধু বাকি থেকে যায় ভালোবাসায় ভরা সুগন্ধ।

জুঁই ফুল ও শিউলি ফুল কি একই ফুল?

জুই ও শিউলি দুটি আলাদা ধরনের ফুলগাছ। তবে এই দুটি ফুলকেই জেসমিন প্রজাতি বা গোত্রের অন্তর্ভুক্ত মনে করা হয়। জুঁইফুল বা বেলিফুল ঈষৎ গুল্ম লতানো জাতীয় গাছ এবং এর ফুল অধিক পাপড়িযুক্ত। অন্যদিকে শিউলি গুল্ম এবং কাষ্ঠল জাতীয় গাছ। এটি পাঁচ পাপড়ি বিশিষ্ট ফুল। জুঁইফুল সম্পূর্ণ সাদা রঙের হয়। আর শিউলি ফুলের মাঝখান এবং বৃন্তটা কমলা রঙের হয় পাপড়ি টুকু সাদা হয়। তাই এই দুটি সম্পূর্ণ আলাদা ফুল।

শিউলি ফুল ফোটার সময়কাল –

পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় শিউলি ফুল ইংরেজি আগস্ট মাসের শেষ থেকে নভেম্বর মাসের শুরুর দিক পর্যন্ত ফুটে থাকে। অর্থাৎ বাংলার শরৎ ও হেমন্তকাল জুড়ে এই ফুল পাওয়া যায়। যা শিশির ভেজা সকালকে সুগন্ধে ভরিয়ে রাখে।

পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় ফুল কী, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজ্য ফুল কি

টবে শিউলি ফুল চাষ পদ্ধতি –

এই গাছ বাগানের মাটিতে বিশেষ পরিচর্যা ছাড়াই ভালো ভাবে বেড়ে ওঠে ও ফুল দেয় তবে এই ফুল টবেও চাষ করা সম্ভব। যারা ছাদে এই গাছ করতে চান তারা করতে পারেন সহজেই। তবে টবে চাষের ক্ষেত্রে কিছু পরিচর্যা প্রয়োজন।

এই গাছ টবে চাষ করার জন্য নার্সারি বা দোকান থেকে একটি শিউলির চারা কিনে তাকে একটি টবের রোপণ করতে হবে। যেহেতু এটি একটি গুল্ম জাতীয় গাছ এবং অনেকটাই বৃদ্ধি পায় তাই গাছটির বৃদ্ধির সাথে সাথে টব পরিবর্তন করতে হবে। প্রথমে ছোট টবে রোপন করে পরে বড় টবে দিলে ভালো হয়।

এই গাছের মাটি তৈরির জন্য পরিমান মত সাধারন বাগানের মাটি বা দোআঁশ মাটি নিতে হবে এবং এর সাথে কিছুটা গোবর সার বা পাতা সার এবং সামান্য সরষের খোল আর সামান্য হাড় গুড়ো মেশাতে হবে। এরপর খোলামকুচি ও বালি দিয়ে টবের নিচের ছিদ্র বন্ধ করে দিয়ে মাটি দিয়ে চারাগাছটিকে রোপণ করতে হবে। এই গাছের ক্ষেত্রে মাসে একবার জৈব সার প্রয়োগেই যথেষ্ট। শিউলি গাছের ক্ষেত্রে রাসায়নিক সারের বিশেষ প্রয়োজন নেই। তবে অবশ্যই নজর রাখতে হবে গাছের গোড়ায় যাতে কোনভাবে জল না জমে। বিশেষ যত্ন নিলে প্রথম বছরে তেমন ফল না পাওয়া গেলেও পরবর্তী ২-৩ বছর থেকে প্রচুর পরিমাণে ফুল পাওয়া যাবে।

শিউলি গাছের শেকর খুব তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পায়। তাই মাটি পরিবর্তনের সময় কখনোও কখনোও বাড়তি শেকর কেটে বাদ দিতে হবে। এছাড়াও এই গাছে প্রচুর শুঁয়োপোকা ও পোকামাকড় এসে পাতা নষ্ট করে। তাই পোকা ধরা পাতা বাদ দিতে হবে। এছাড়া প্রয়োজনে নিম তেল জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। ফুলের মরশুম শেষ হলে গাছের ডালপালা কয়েকবার ছাটতে হবে, যাতে নতুন শাখা প্রশাখা বের হয়। এতে যেমন গাছটি দেখতে সুন্দর হবে তেমনি প্রতিটি আগায় ফুলও ফুটবে।

“পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় ফুল কী”-এ 1-টি মন্তব্য

Leave a Reply