বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় হীরে। কোহিনুর হীরের রহস্য

বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় হীরে, কোহিনুর হীরের রহস্য: হিরে এমন দামি পাথর যে তা পেতে চায় সকলেই। হিরে দেখতে যতটা সুন্দর হয় তেমনি এগুলি বেশ মজবুতও হয়। সারা বিশ্বে প্রাচীনকাল থেকে হীরের খনি হিসাবে ভারত প্রসিদ্ধ। ১৬ শতাব্দীর পরবর্তী সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় ও ব্রাজিলে হীরের খনি খুঁজে পাওয়া যায়। তার আগে ভারত এবং তার আশে পাশের অঞ্চলগুলিই হীরের একমাত্র উৎস ছিল। ভারতের নানা খনি থেকে এমনই বহুমূল্য হিরে পাওয়া যায় যা আজ দেশ-বিদেশের মিউজিয়াম গুলোর শোভা বাড়াচ্ছে। এই সমস্ত হীরের মধ্যে সবচেয়ে পুরনো আর প্রসিদ্ধ একটি হীরে হল কোহিনুর। এটি দেখতে অন্যান্য হীরের থেকে বেশ বড় এবং সুন্দর। ভারতে পাওয়া নানা হীরের মধ্যে এটি ছিল সর্বশ্রেষ্ঠ হীরে।

কোহিনুর হীরে কি? কোহিনুর হীরের রহস্য

বহু বছর ধরে এই কোহিনুর হীরে মানুষের মধ্যে চর্চার বিষয় হয়েছে। মনে করা হয় ইতিহাসের সময় এই হীরে যার যার কাছে ছিল তারা প্রত্যেকেই দুর্ভাগ্যের শিকার হয়েছে এবং তাঁদের সাম্রাজ্য বিনষ্ট হয়েছে। অনেক সাম্রাজ্যের সূচনা আর বিনাশের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এই কোহিনূর হীরে।কোহিনুর কথার অর্থ হল আলোর পাহাড়। হীরেটি দেখতে এতটা চকমকে এবং সুন্দর তাই তার নাম কোহিনুর রাখা হয়েছে এমনটাই মনে করা হয়। এই নামটি দিয়েছিলেন পারস্য সম্রাট নাদির শাহ। কোহিনূরের ওজন ১০৫.৬ ক্যারেট বা ২১.১২ গ্রাম। বর্তমানে ব্রীটেনের রাজধানীর লন্ডনে অবস্থিত লন্ডন টাওয়ারে যত্ন করে রাখা হয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় কোহিনুর প্রথমদিকে ৭৯৩ ক্যারেট ছিল।

কিন্তু বারবার হীরেটিকে কাটা ও মসৃণ করতে করতে এটি ১০৫.৬ ক্যারেটে পরিণত হয়। সবচেয়ে জনপ্রিয় ও মূল্যবান হীরে বললেও কম বলা হয় কারণ এটি ভারতের ইতিহাস, সভ্যতা ও সংস্কৃতির অঙ্গ। দক্ষিণ ভারতে অবস্থিত গোলকুন্ডার খনি থেকে পাওয়া যায় কোহিনুর নামের এই হীরেটি। যা অবাক করে দেয় সকলকে। হীরেটি সর্বপ্রথম কার কাছে ছিল তা সঠিক বলা না গেলেও প্রচলিত আছে সর্বপ্রথম হীরেটি কাকাতিয় রাজবংশের কাছে ছিল। সেই সময় গিয়াস উদ্দিন তুঘলক কাকাতিয় রাজা প্রতাপ রুদ্রেকে যুদ্ধে পরাস্ত করে হীরেটিকে দিল্লীতে নিয়ে যায়। 

আরও পড়ুন – জনপ্রিয় কার্টুন মিকি মাউজের ধারনা কোথা থেকে এল

বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় হীরে: এরপর অন্যান্য ব্যক্তিদের দ্বারা এই হীরাটি দখল করা হয়। রাজা প্রতাপ রুদ্রের সময় থেকেই শুরু হয় কোহিনূরের হস্তান্তর হওয়া। বাবরনামায় লেখা আছে পানিপথের যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদীকে হারিয়ে হুমায়ুন যে সমস্ত ধনরত্ন সংগ্রহ করেন তার মধ্যে বড় মাপের একটি হীরে ছিল। মনে করা হয় ওরঙ্গজেব এই হীরেটিকে আরো বেশি ঝকমকে করার জন্য একজন জহুরী কে দেন সেই সময় এটি আকারে ছোট হয়ে যায়।মুঘলদের কাছে থাকা এই হীরাটির আকর্ষণ ছড়িয়ে পড়েছিল দেশ-বিদেশে। আর এর আকর্ষণেই নানা আক্রমণ শুরু হয়েছিল। এরপর আক্রমণ করে হীরেটি পারস্য সম্রাট নাদির শাহ ইরানে নিয়ে যায়। সেখানেও হস্তান্তরিত হয়।

পরবর্তীকালে আফগান সম্রাট আহমেদ শাহ হামলা করে হীরেটি দখল নেয়। তার মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র হীরেটিকে নিয়ে সমস্যায় পরতে শুরু করেন। তাই তিনি সেটিকে পাঞ্জাবের রাজা রঞ্জিত সিং কে দিয়ে দেন। এর বদলে রাজা রঞ্জিত সিং তাকে আফগানের সম্রাট বানিয়ে দেন। এর পরবর্তী সময়ে ১৮৪৮ সালে অ্যাংলো-শিখ যুদ্ধের সময় নাবালক রাজা দিলীপ সিং এর থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কোহিনুর হীরা নিয়ে যায়। ১৮৫০ সালে ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসি ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির তরফ থেকে মহারানী ভিক্টোরিয়া কে উপহার স্বরূপ দেয়।

ইতিহাস সাক্ষী আছে কোহিনূর হীরে কখনো বিক্রি হয়নি। শুধুমাত্র একজনের কাছ থেকে অন্যজনের কাছে হস্তান্তরিত হয়েছে। তখন থেকেই প্রসিদ্ধ এই হীরাটি ব্রীটেনের রাজ পরিবারের অংশ। হীরেটিকে নিয়ে একটি মত প্রচলিত আছে যে কোনো পুরুষ নিজের কাছে এটি রাখতে পারবেনা। কোন নারীর কাছেই তা রাখা যেতে পারে। তাই পরম্পরাগত ভাবে কহিনুরকে ব্রীটেনের রানীরা মুকুটে ধারণ করে থাকে। 

মন্তব্য করুন