মহাভারতের অশ্বত্থামাকে নিজের চোখে দেখার দাবি করছেন অনেকে

মহাভারতের অশ্বত্থামাকে নিজের চোখে দেখার দাবি করছেন অনেকে

বিগত পাঁচ হাজার বছর পর আজও নাকি অশ্বথামা বেঁচে আছেন এমনই শোনা যায় লোকমুখে। সন্দেহ আর রহস্য দানা বেঁধেছে অশ্বথামার বেঁচে থাকার এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে। শোনা যায় আজও নাকি অশ্বথামা মধ্যপ্রদেশের আসিরগড় নামক স্থানে এক দুর্গের মধ্যে অবস্থিত একটি শিবমন্দিরে আসেন এবং শিবলিঙ্গে ফুল বেলপাতা দিয়ে পূজা-অর্চনা করেন।

মহাভারতের অশ্বত্থামা

অশ্বথামা মহাভারতের এক বিশিষ্ট চরিত্র। অশ্বত্থামা ছিলেন কৌরব ও পাণ্ডবদের গুরু দ্রোণাচার্যের পুত্র। ইনি মহাভারতের যুদ্ধে কৌরবদের সঙ্গ দেন। কিন্তু তার একটি ভুল বা অন্যায়ের কারনে তিনি অভিশপ্ত হন যার জন্য ব্রহ্মান্ড ধ্বংস হওয়া পর্যন্ত তিনি ঘুরে বেড়াবে কিন্তু মৃত্যু হবে না। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে এই অভিশাপ দেন।

মহাভারতের যুদ্ধের সময় বীর অশ্বথামা হত্যা করেছিল পান্ডব পুত্রদের এবং ব্রহ্মাস্ত্র দিয়ে নষ্ট করেছিল উত্তরার গর্ভ। গর্ভে পালিত শিশুর হত্যায় রেগে গিয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাকে অভিশাপ দেন। কিন্তু তার এই কাজের পেছনে কিছু কারণ ছিল।

আরও পড়ুন- সারেগামাপার ৭টি ধ্বনি বার হয় মন্দিরের স্তম্ভ গুলি থেকে

মহাভারতের যুদ্ধের সময় গুরু দ্রোণাচার্য কৌরবদের হয়ে পান্ডবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিল। দ্রোণাচার্য ছিলেন কৌরব ও পাণ্ডবদের গুরু। তার যুদ্ধকৌশলের সাথে পেরে ওঠা সহজ নয়। কিন্তু ধর্ম স্থাপনার জন্য পাণ্ডবদের এই যুদ্ধে জয় প্রয়োজন ছিল। প্রথম থেকেই কৌরবরা ছলনার আশ্রয় নিয়েছিল আর তাদের সঙ্গ দিয়েছিল দ্রোণাচার্য। তাই দ্রোণাচার্য কে যুদ্ধে পরাস্ত করার জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণ একটি ছলনার আশ্রয় নেয়। তার পরিকল্পনা এইরকম ছিল-যুধিষ্ঠির ছিল সত্যবাদী, যুধিষ্ঠির যদি কাউকে কিছু বলে তাহলে সেটা সে সত্যিই বলে তা সকলের দৃঢ় বিশ্বাস। সেই সময় যুদ্ধ ভূমিতে দ্রোণাচার্যের পুত্র অন্য স্থানে ব্যস্ত ছিল। সেই সুযোগে দ্রোণাচার্যকে অশ্বত্থামার মৃত্যুর খবর দিলে তার যুদ্ধের মানসিকতা নষ্ট হয়ে যাবে এরকম কৌশল করা হয়। কিন্ত যুধিষ্ঠির মিথ্যা কথা বলে না। যুদ্ধে একটি হাতি মারা গেছিল যার নাম ছিল অশ্বথামা। শ্রীকৃষ্ণ যুধিষ্ঠিরকে বলেন শুধুমাত্র অশ্বথামা নিহত হয়েছে এই কথা দ্রোণাচার্যকে বলতে। এতে করে তার সত্যি কথা বলা হয় এবং কৌশল ও পরিকল্পনা মতো হয়।

মহাভারতের অশ্বত্থামা

যুধিষ্ঠিরে কাছ থেকে অশ্বথামার মৃত্যুর খবর শুনে দ্রোণাচার্য যুদ্ধে মনোনিবেশ করতে পারে না এবং পান্ডবদের তারা পরাস্ত ও নিহত হয়। পরে অশ্বথামা জানতে পারে কিভাবে ছলনার দ্বারা পাণ্ডবরা তার পিতা দ্রোণাচার্যকে বধ করেছে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই অশ্বত্থামা প্রতিশোধ গ্রহণের তৎপর হয়ে ওঠে। রাত্রি বেলা পাণ্ডব শিবির গিয়ে ক্রুদ্ধ অশ্বথামা পান্ডব ভেবে পান্ডব পূত্র দের বধ করে। এরপর তিনি যে অপরাধ করেন তাহল তিনি ব্রহ্মাস্ত্র উত্তরার গর্ভের দিকে নিক্ষেপ করেন। ঘটনাচক্রে সেই বান অশ্বত্থামা থামাতে চেয়েছিলেন কিন্তু ব্রহ্মাস্ত্র ফেরানোর বিদ্যা তার জানা ছিলো না। ভ্রুন হত্যার মতো ঘটনা ঘটে যায়। এই ঘটনায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ প্রচন্ড রেগে যায় এবং অশ্বত্থামাকে অভিশাপ দেয়।

জন্ম থেকেই অশ্বথামার কপালে একটি মনি ছিল যা তাকে নির্ভীক থাকতে সাহায্য করত। অভিশাপ পাওয়ার সময় শ্রীকৃষ্ণ তার কপাল থেকে মণিটি নিয়ে নেন।এরপর কপালের ক্ষতস্থান নিয়ে অশ্বথামা চলে যান। তারপর থেকে কেটে গেছে কয়েক হাজার বছর আজ এই কলিযুগেও উঠে আসে অমর অশ্বত্থামার বেঁচে থাকার কিছু গল্প। মধ্যপ্রদেশের আসিরগড় দুর্গের আশেপাশের কিছু গ্রামের লোকজন দাবি করেন তারা দেখেছেন অশ্বথামাকে। তবে এর সত্যতা প্রমাণ না হলেও রহস্যময় ভারতবর্ষের নানা বিচিত্র ঘটনার মধ্যে এই ঘটনাটি নিজের স্থান করে নিয়েছে।

Previous articleবিড়ালের রাস্তা কাটলে দাঁড়িয়ে যেতে হয় কেন? অন্ধবিশ্বাস নয়, জেনে নিন বৈজ্ঞানিক কারণ
Next articleপরিযায়ি পাখি, শীতকালিন ভারতীয় পাখি
আমরা Extra Gyaan এর সদস্যরা পেশাগতভাবে ব্লগিং এর সঙ্গে যুক্ত। আমরা ইন্টারনেট, প্রযুক্তি, নাসা, মহাকাশের বিভিন্ন তথ্য, শিক্ষাগত দিক ও খেলাধুলার বিষয়ে নিবন্ধ লিখে থাকি সম্পূর্ণ বাংলা ভাষায়। আমাদের উদ্দেশ্য হলো বাংলা ভাষায় আপনাদের সামনে সেরা তথ্য তুলে ধরা।

1 COMMENT

Leave a Reply