চীনে ভয়াবহ বন্যা। বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ ভাঙ্গার আশঙ্কা

করোনা মোকাবেলায় সারা বিশ্ব বর্তমানে সংকটের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। এরই মধ্যে প্রকৃতির আরেক রোষানলের কবলে চীন। যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ। যার অবতলে ৪০কোটি মানুষের বাস। টানা ১মাস ধরে অতিবৃষ্টি যাতে ১৩টি নদী ফুসছে, ২৬টি প্রদেশ জলের নিচে এমনি সংকটের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে চীনের মানুষ।

জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে দক্ষিণ চিনে একনাগাড়ে প্রবল বর্ষণের সূত্রপাত। অতিবৃষ্টিতে চীনের প্রায় ১৬টি প্রদেশ প্লাবিত। ১ কোটি ৫০ লক্ষ্য মানুষের বাসভূমি জলের নিচে। লক্ষাধিক বাড়ি তলিয়ে গেছে জলের নিচে। সম্পত্তির খয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪ কোটি ডলার, শুধু তাই নয় লক্ষ্য লক্ষ্য হেক্টর জমির শস্য,শাকসবজি সমস্তই বন্যার কবলে।

থ্রি গর্জেস বাঁধটির নির্মাণকার্যের সূচনা থেকে অনেকেই এটির বিরোধিতা শুরু করেছিলেন। শেষের দিকে চীন কারো কথায় কর্ণপাত না করে ২০০৬ সালে এটি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে। বাঁধ নির্মাণের পর এ এটিকে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে রূপান্তর করতে আরও ছয় বছর সময় লাগে। ৪ ঠা জুলাই ২০১২ সালে বাধটিতে বিদ্যুৎ প্রকল্পের কার্য সম্পূর্ণরূপে সমাপ্ত হয়। এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যকারী হয়। সম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন হবার পর বাঁধ টিতে নির্মিত ভূগর্ভস্থ প্রধান টারবাইন এর বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৭০০ মেগাওয়াট। বাধটিতে ছিল মোট ৩২টি প্রধান টারবাইন যার প্রতিটিতে দুটি করে ছোট ছোট জেনারেটর ব্যবহার করা হয়েছিল ৫০ মেগাওয়াটএর। এই জেনারেটর গুলি টারবাইনে বিদ্যুৎ পরিবহন করতো।

এই সব মিলিয়ে সম্পূর্ণ বাঁধটি থেকে ২২,৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হতো। ইয়ঙটজ নদীর উপর অবস্থিত এই বাঁধ ১.৪ মাইল প্রশস্থ (২.৩ কিলোমিটার) এবং উচ্চতা ৩০ ফুট (১৯৯ মিটার)। যা বিশ্বের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হিসেবে গড়ে ওঠে। এরপরে এটিতে জাহাজ উপরে উঠানোর জন্যে লিফ্ট নির্মাণ করা হয়। যেটির নির্মাণ কাজ ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসের সম্পন্ন হয়েছিল। পৃথিবীর বৃহত্তম বাঁধ এই থ্রি গর্জেস ড্যাম, যা ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে চীন।

আরো পড়ুন- পৃথিবীর ভেতর কি আছে। পৃথিবীর ভেতরের ভূভাগ কেমন

এত বড় বাঁধ নির্মাণের চীনের ওই অঞ্চল ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের বাসিন্দাদের অনেক সুবিধা হলেও তার ফল এখন খুবই মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। বাঁধ নির্মাণের ফলে পার্শ্ববর্তী প্রত্নতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক স্থানগুলি মারাত্মক ক্ষতি সাধন করেছে। ১.৩ মিলিয়ন মানুষ গৃহহীন, ১ কোটিরও বেশি মানুষের প্রাণ সংশয়ে। এছাড়া এটি নির্মাণের পর থেকেই ভূমিধসের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিবর্তন ঘটিয়েছে পার্শ্ববর্তী পরিবেশের।

চলতি জুন মাসে চীনের দক্ষিণ পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চল জুড়ে মুষলধারে বর্ষণের ফলে পার্শ্ববর্তি বিস্তর এলাকা প্লাবিত। বেশিরভাগ নদীর জল বিপদ সীমার উপর দিয়ে বইছে। প্রবল বর্ষণের কারণে চীন সরকার থেকে জরুরি সতর্কতা জারি করা হয়। ইয়াঙটজি নদী ও থ্রি গর্জেস বাঁধের পার্শ্ববর্তি এলাকা প্রবল ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

বিতর্কিত এই বাঁধ নিয়ে ভারত, কম্বোডিয়া ও বাংলাদেশ এর পক্ষ থেকে একাধিক বার আপত্তি তোলা হয়েছিল। কিন্তূ চীন সরকার তার কোনো গুরুত্বই দেইনি। বিশেষজ্ঞের মতে চীনের বেশিরভাগ বাঁধগুলোর জলধরণের ক্ষমতা সীমিত। অবৈজ্ঞানিক ভাবে সৃষ্ট বাঁধ গুলির আয়ু প্রায় শেষ। তবে চীন সরকার সমস্ত মতামত গুলি কে উড়িয়ে দিয়ে জানিয়েছে বাঁধ গুলি অতিরিক্ত জলধারণের ক্ষমতা সম্পন্ন ও আসন্ন বিপদের কথা মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়েছে।

চীনের পক্ষ থেকে বাঁধের গেট একেরপর এক খুলে দেওয়ার ফলে নিচু এলাকা গুলি বন্যার কবলে চলে আসছে জেনেও কেন এরকম করা হচ্ছে তার কোনো উত্তর চীন সরকারের কাছে নেই। এবিষয়ে আপনাদের মতামত কমেন্টে বক্স এ জানতে ভুলবেন না।

Leave a Reply