আশ্চর্য এক সমুদ্র, যেখানে কোনো প্রাণী বা বস্তু ডুবে যায় না

মৃত সাগর|Dead sea

পৃথিবী এক আশ্চর্য গ্রহ যা বিভিন্ন অজানা রহস্যময় বস্তুতে পরিপূর্ণ। তেমনই এই গ্রহের আরেক আশ্চর্য রহস্যময় সৃষ্টি হল মৃত সাগর বা ডেড সি

মৃত সাগর কোথায় অবস্থিত

মৃত সাগরের পশ্চিমে পশ্চিম তীর ও ইজরায়েল এবং পূর্বে জর্ডান নদী। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪২০ মিটার নিচে অবস্থিত যা জিবুতির আসাল হ্রদ এর পর বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লবণাক্ত জলের প্রাকৃতিক আধার। এই হ্রদের লবনতার শতকরা ভাগ ৩০ এবং এটি সমুদ্র জলের চাইতে ৮.৬ গুণ বেশি লবণাক্ত। লবণের পরিমাণ এত বেশি হওয়ার জন্য এই সাগরে কোন প্রাণী বেঁচে থাকতে পারে না।

মৃত সাগর কি

৬৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট এই সাগর প্রস্থে ১৫ কিলোমিটার এবং এর পৃষ্ঠতলের অঞ্চল প্রায় ৮১০ কিলোমিটার। মাত্রা অতিরিক্ত লবণযুক্ত এই সাগরের গভীরতা ১২০ মিটার (গড়ে)। এর সর্বাধিক গভীরতা যতটা পরিমাপ করা গেছে আজ পর্যন্ত তা হল ৩৩০ মিটার বা ১,০৮৩ ফিট।

আরো পড়ুন- মোনালিসার ছবির অজানা রহস্য

মৃত সাগরে চারপাশের অঞ্চল মোটামুটি উষ্ণ হয়, এখানে গরমের সময় মোটামুটি অনেকটাই গরম পরে, যে কারণে এখানকার লবণ জল উত্তপ্ত হয়ে পড়ে। মৃত সাগর সর্বোচ্চ উষ্ণতা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট। শীতের সময় এর উষ্ণতা কমে গিয়ে কুড়ি ডিগ্রী সেলসিয়াস অর্থাৎ ৬৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত পৌঁছে যায়। সমুদ্রের আকার অনেকটাই বেশি হওয়ার কারণে এটি তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে বেশি হয় স্থলভাগের চেয়ে।

floating 4621490 4802
মৃত সাগর

মৃত সাগর | Dead Sea

মৃত সাগরের সৃষ্টি নিয়ে বিভিন্ন গবেষণার পর এর সৃষ্টি সম্পর্কে অনেক তথ্য সামনে এসেছে। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে আজ থেকে প্রায় ৩ মিলিয়ন বছর পূর্বে বর্তমান জর্দান নদী, মৃত সাগর এবং ওয়াদি আরবহ অঞ্চল লোহিত সাগরের জলে বারবার প্লাবিত হতো। এর ফলে একটি সরু উপসাগরে সৃষ্টি হয় যা জেজরিল উপত্যকায় একটি শুরু সংযোগের মাধ্যমে লোহিত সাগরের সঙ্গে যুক্ত ছিল। প্রকৃতি থেকে পাওয়া বিভিন্ন তথ্য অনুযায়ী প্রায় ২ মিলিয়ন বছর পূর্বে উপত্যকা এবং ভূমধ্যসাগরের মধ্যবর্তী স্থলভাগ যথেষ্ট উচ্চতা লাভ করে। ফলে মহাসাগরের প্লাবনের ফলে এই অঞ্চলে সৃষ্ট উপসাগর পরিবেষ্টিত হয়ে হ্রদে পরিণত হয়।

আরো পড়ুন- যমজ বাচ্চার গ্রাম কেরালা। ৫০০ বেশি যমজ বাচ্চা আছে এই গ্রামে

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে মৃত সমুদ্রের জলে খনিজগুলির পরিমাণ সমুদ্রের জলের থেকে অনেক বেশি পৃথক। মৃত সমুদ্রের জলে নুনের মধ্যে ১৪% ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড, ৪% পটাসিয়াম ক্লোরাইড, ৫০% ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড এবং ৩০% সোডিয়াম ক্লোরাইড রয়েছে। এই সমুদ্রের লবণাক্ততা ৩০ শতাংশ। ফলস্বরূপ জলের ঘনত্ব ১.২৪ কেজি / লিটার।  উচ্চ উচ্ছ্বাসের কারণে যে কেউ মৃত সাগরের জলে ভাসতে পারে। এই আচরণটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উটাহের গ্রেট সল্টলেকের মতো।

মৃত সমুদ্রের জলে খনিজগুলির উপস্থিতি বর্তমানে গবেষক এবং চিকিত্সকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। গবেষকদের মতে, হ্রদে খনিজগুলির উপস্থিতির কারণে সেখানে জলবায়ু পরিবর্তন লক্ষ্য করা সম্ভব। বায়ুতে অ্যালার্জেন এবং পরাগের ঘাটতি, উচ্চ বৈশ্বিক চাপ এবং সৌর বিকিরণে অতিবেগুনী উপাদানের কম উপস্থিতি এই সমস্ত অঞ্চলে গবেষকদের আকর্ষণ করে। উচ্চ বায়ুমণ্ডলীয় চাপ, শ্বাসকষ্টজনিত রোগীদের জন্য বেশ উপকারী। দীর্ঘস্থায়ী রোদ রোপণ সোরিয়াসিসের জন্য বেশ উপকারী। এই অঞ্চলে অতিবেগুনী রশ্মির ঘাটতি সূর্যকঠনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে খুব সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। বিজ্ঞানীরা আরও দাবি করেছেন যে মৃত সাগরের নুন এই রোগ নিরাময়ের জন্য খুব দরকারী।

Previous articleএশিয়া মহাদেশে কয়টি দেশ আছে ও কি কি ২০২৩
Next articleক্রিকেট বিশ্বকাপ থেকে বাদ যেতে চলেছে ২ বারের বিশ্বকাপ জয়ী দল
আমরা Extra Gyaan এর সদস্যরা পেশাগতভাবে ব্লগিং এর সঙ্গে যুক্ত। আমরা ইন্টারনেট, প্রযুক্তি, নাসা, মহাকাশের বিভিন্ন তথ্য, শিক্ষাগত দিক ও খেলাধুলার বিষয়ে নিবন্ধ লিখে থাকি সম্পূর্ণ বাংলা ভাষায়। আমাদের উদ্দেশ্য হলো বাংলা ভাষায় আপনাদের সামনে সেরা তথ্য তুলে ধরা।

Leave a Reply