ভারতবর্ষের পূর্বে এবং বাংলাদেশের পশ্চিমে অবস্থিত রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ। আর এই পশ্চিমবঙ্গের বনভূমির পরিমাণও অনেকটাই। পশ্চিমবঙ্গের একেবারে দক্ষিনে অবস্থিত সুন্দরবন, যেটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ অরণ্য।
Table of Contents
একটি রেকর্ড অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের মোট বনভূমির পরিমাণ ১১,৮৭৯ স্কয়ার ফিট যার মধ্যে ৭,০৫৪ স্কয়ারফিট রিজার্ভ ফরেস্ট, ৩৭৭২ স্কয়ার ফিট সংরক্ষিত বনভূমি এবং ১,০৫৩ স্কয়ার ফিট অঘোষিত বনভূমির অন্তর্গত। এই সমস্ত বনভূমি রাজ্যের মোট ১৩.৩৮ শতাংশ ভৌগলিক এলাকা জুড়ে রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের অবস্থিত মোট বনাঞ্চল ভারতীয় গড় বনাঞ্চলের ২৩ শতাংশের কাছাকাছি। চলুন তবে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক পশ্চিমবঙ্গের বনভূমি সম্পর্কে।
পশ্চিমবঙ্গের বনভূমি এর মধ্যে জাতীয় উদ্যানের সংখ্যা ৬ টি এবং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রয়েছে মোট ১৩ টি। নিম্নে এগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় উদ্যানের তালিকা
- সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান
- গরুমারা জাতীয় উদ্যান
- বক্সা জাতীয় উদ্যান
- জলদাপারা জাতীয় উদ্যান
- সিঙ্গালীলা জাতীয় উদ্যান
- নেওড়া উপত্যকা জাতীয় উদ্যান
পশ্চিমবঙ্গের বনভূমি – forest in west bengal in bengali
পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় উদ্যানের বিস্তারিত বিবরণ:-
1.সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান: পশ্চিমবঙ্গের একেবারে দক্ষিণে ২৪ পরগনা (দক্ষিণ) জেলায় অবস্থিত এই জাতীয় উদ্যানটি। এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ১৯৮৪ সালে। এই জাতীয় উদ্যানের আয়তন প্রায় ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার, যার মধ্যে ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার বাংলাদেশের অন্তর্গত। এই জাতীয় উদ্যানে একমাত্র ভারতের রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখতে পাওয়া যায়। সুন্দরবন শুধু পশ্চিমবঙ্গের নয় সমগ্র বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ অরণ্য।

2.গরুমারা জাতীয় উদ্যান: এই জাতীয় উদ্যানটি পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলায় অবস্থিত। ১৩০০ বর্গকিলোমিটার আয়তন যুক্ত এই বনভূমিটি উত্তরবঙ্গের জলদাপাড়া-চাপড়ামারি-গরুমারা রেঞ্জের অন্তর্গত। জাতীয় উদ্যানটিতে গন্ডার, হাতি হরিণ, বুনো শুয়োর ইত্যাদি পশু ও নানান পাখি দেখতে পাওয়া যায়। এই উদ্যানের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে তিস্তা, তোর্সা, রায়ডাক, জলঢাকা, মালঙ্গী ইত্যাদি নদনদী। বনভূমির প্রান্তে বসবাসকারী কয়েকটি উপজাতিও রয়েছে, যেমন-মুন্ডা, ওরাও, রাজবংশী, মোচ, কেঁচ প্রভৃতি।

- পশ্চিমবঙ্গের উল্লেখযোগ্য কিছু দুর্গ|Fort in west bengal
- বিশ্বের সবচেয়ে বড় মন্দির 2023
- পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় ফুল কী
3.বক্সা জাতীয় উদ্যান: বক্সা পাহাড় এলাকার অন্তর্গত এই জাতীয় উদ্যান টি ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরে অবস্থিত এই বনভূমির আয়তন প্রায় ৭৬০ বর্গকিলোমিটার। এই জাতীয় উদ্যানে বাঘ সংরক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে যেটি বক্সা টাইগার রিজার্ভ নামে পরিচিত। এখানে বাঘ, রেড জঙ্গল ফাউল, সিভেট প্রভৃতি পশু ও পাখি দেখতে পাওয়া যায়।

পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় উদ্যান
4.জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান: এই জাতীয় উদ্যান পশ্চিমবঙ্গের হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত আলিপুরদুয়ার জেলার অন্তর্গত। ১৪১ বর্গকিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট এই জাতীয় উদ্যানটি তোর্সা নদীর তীরে অবস্থিত। এই জাতীয় উদ্যান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬১ মিটার উচ্চতায় রয়েছে। ১৯৪১ সালে এটিকে অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সুবৃস্তৃত বনাঞ্চল এবং নদীকেন্দ্রিক এই জাতীয় উদ্যানে একটি উল্লেখ্যযোগ্য প্রাণী হল একশৃঙ্গ গন্ডার। যা আজ প্রায় অবলুপ্তির পথে।

5.সিঙ্গালীলা জাতীয় উদ্যান: ১৯৯২ সালে ঘোষিত এই জাতীয় উদ্যানের অবস্থান পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলায়। ৭২ বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত এই জাতীয় উদ্যান পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশে নেপাল, সিকিম এবং পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত জুড়ে অবস্থান করছে।

6.নেওরা উপত্যকা জাতীয় উদ্যান: ১৯৮৬ সালে এপ্রিল মাসে সরকারিভাবে ঘোষিত জাতীয় উদ্যান এটি। উদ্যানটির অবস্থান দার্জিলিং জেলায়। এর আয়তন প্রায় ৮৮ বর্গ কিলোমিটার।

পশ্চিমবঙ্গের বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের তালিকা
- মহানন্দা অভয়ারণ্য
- বল্লভপুর বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
- বেথুয়াডহরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
- চাপড়ামারি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
- বিভূতিভূষণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
- নরেন্দ্রপুর বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
- জোড়পোখরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
- রায়গঞ্জ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
- লোথিয়ান দ্বীপ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
- সজনেখালি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
- রমনাবাগান বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
- সেঞ্চল বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
- হ্যালিডে দ্বীপ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
পশ্চিমবঙ্গের বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের বিস্তারিত বিবরণ:-
1.মহানন্দা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য: এই অভয়ারণ্যটি হিমালয়ের পাদদেশে মহানন্দা এবং তিস্তা নদীর মাঝে অবস্থিত। ১৫৮ স্কয়ারফিট এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই অভয়ারণ্যে বড় ধরনের প্রাণী, যেমন হাতি, গৌড়, বিভিন্ন ধরনের হরিণ, বুনো শুয়োর, চিতাবাঘ এবং বন বিড়াল দেখতে পাওয়া যায়।

2.বল্লভপুর বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য: পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার বোলপুর-এ অবস্থিত শান্তিনিকেতনের নিকটবর্তী এই অভয়ারণ্যের অবস্থান। ১৯৭৭ সালে এটি সরকারি ভাবে অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষিত হয়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫৬ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই অভায়ারণ্যে স্পটেড ডিয়ার, ব্ল্যাক বাক খেকশিয়াল, শিয়াল ও নানা ধরনের পাখি দেখতে পাওয়া যায়।

3.বেথুয়াডহরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য: পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলায় অবস্থিত এই অভায়ারণ্যে ১৯৫৮ থেকে১৯৫৯ সালে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শুরু হয়। এরপর ১৯৮০ সালে সরকারিভাবে এটি অভয়ারণ্যের মর্যাদা লাভ করে। এই অভয়ারণ্যের মোট আয়তন ১.২১ বর্গ কিলোমিটার। কৃষ্ণনগরের পার্শ্ববর্তী এই অভয়ারণ্যে হরিণ, শিয়াল ও নানা ধরনের পাখি সুরক্ষিত ভাবে বসবাস করে।

4.চাপড়ামারি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য: জলপাইগুড়ি জেলায় অবস্থিত এই অভায়ারণ্য ১৯৭৬ সালে সরকারিভাবে অভয়ারণ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ৯৬০ হেক্টর অঞ্চল জুড়ে অবস্থিত এই অভয়ারণ্য গরুমারা জাতীয় উদ্যান-এর নিকটে অবস্থিত। এখানে সম্বর হরিণ, এশীয় হাতি, বনবিড়াল, চিতাবাঘ ইত্যাদি দেখতে পাওয়া যায়।

5.বিভূতিভূষণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য: পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁ মহকুমা অঞ্চলে অবস্থিত এই অভায়ারণ্য বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে নামকরণ করা হয়েছে। বনগাঁ থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই অভয়ারণ্যের মূল আকর্ষণ চিত্রা হরিণ। ১৯৬৫ সালে এখানে ৩টি নবজাতকসহ মোট ১৫টি চিত্রা হরিণ নিয়ে আসা হয়েছিল আলিপুর চিড়িয়াখানা থেকে। ১৯৬৬ সালে সেখানে আরো ২৬টি চিত্রা হরিণ নিয়ে আসা হয়। ১৯৮৬ সালে এখানে ২০১টি চিত্রা হরিণ ছিল। পরে অবশ্য সংখ্যাটা কমেছে অনেকটাই। এই অভয়ারণ্যের পাশ দিয়েই প্রবাহিত হয়েছে ইছামতি নদী। যার অপর দিকে রয়েছে আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রাম মঙ্গলগঞ্জ।

6.নরেন্দ্রপুর বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য: ১৯৮২ সালে ১০ হেক্টর জায়গা জুড়ে থাকা পুরনো একটি আমবাগানকে অভয়ারণ্যের আওতায় নিয়ে আসা হয়। এই অভায়ারণ্যটি পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার অবস্থিত। কালামাথা বেনেবউ, টুনটুনি, সাতভাই ছাতারে, তিলা মুনিয়া পভৃতি পাখির জন্য এই অভয়ারণ্যটি প্রসিদ্ধ।

পশ্চিমবঙ্গের বনভূমি|forest in west bengal in bengali
7.জোড়পোখরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য: দার্জিলিং জেলার অন্তর্গত এই অভয়ারণ্যটি ১৯৮৬ সালের মার্চ মাসে সরকারিভাবে অভয়ারণ্য ঘোষিত হয়। ৪ হেক্টর এলাকা জুড়ে অবস্থিত এই অভয়ারণ্যে গোরা (হিমালয়ের সালামান্ডার) দেখতে পাওয়া যায়।

আরো পড়ুন- ছোটবেলায় পড়া একে চন্দ্র দুয়ে পক্ষ এর জানা অজানা কিছু রহস্য। অষ্টবসু কারা? পঞ্চবান কী?
8.রায়গঞ্জ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য: এই অভয়ারণ্যটি কুলিক পাখিরালয় নামেও পরিচিত। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ এর নিকট অবস্থিত এই অভয়ারণ্যটি ১৯৮৫ সালে অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষিত হয়। এর পূর্বে এটি একটি পাখিরালয় হিসেবে পরিচিত ছিল। এখানে ১৬৪ প্রজাতির পাখি বাস করে। এছাড়াও এখানে রয়েছে শিয়াল, খেকশিয়াল, বন বিড়াল পভৃতি প্রজাতির পশু।

9.লোথিয়ান দ্বীপ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য: পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সপ্তমুখী নদীর মোহনায় এই দ্বীপটি অবস্থিত। ১৯৪৮ সালে এই দ্বীপে অবস্থিত বনাঞ্চলকে অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়। এই অভয়ারণ্য সুন্দরবন ব-দ্বীপ-এর অংশ। এখানে চিত্রা হরিণ, নোনা জলের কুমির, লাল বাদর, বন বিড়াল, সামুদ্রিক ক্চ্ছপ দেখতে পাওয়া যায়।

10.সজনেখালি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য: সজনেখালি সুন্দরবনের পাশেই অবস্থিত একটি এলাকা। এই অঞ্চলে থাকা অভায়ারণ্যটি ১৯৬০ সালে ঘোষিত হয়। ৩৬২ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অভয়ারণ্যে চিত্রা হরিণ, নোনা জলের কুমির, লাল বাদর, বন বিড়াল, সামুদ্রিক ক্চ্ছপ দেখতে পাওয়া যায়।

11.রমনাবাগান বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য: পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলায় অবস্থিত এই অভয়ারণ্যটি ১১৪ হেক্টর এলাকা জুড়ে অবস্থিত। এটি অভায়ারণ্যের স্বীকৃতি পায় ১৯৮১ সালে। বর্ধমান রেলস্টেশন থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এই অভায়ারণ্যে রয়েছে ২৭টি চিত্রা হরিণ, ৮টি মায়া হরিণ এবং ১টি কৃষ্ণসার হরিণ।

12.সেঞ্চল বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য: ১৯৭৬ সালে অভায়ারণ্য হিসেবে ঘোষিত এই অভয়ারণ্যটি দার্জিলিং জেলায় অবস্থিত। ১৯১৫ সালে এটি শিকার প্রাণী সংরক্ষিত কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ৩০.৬০ বর্গকিলোমিটার আয়তন যুক্ত এই অভয়ারণ্যে বন বিড়াল, বাংলা বাঘ, চিতা বাঘ, লাল বাদর, কালো ভাল্লুক এছাড়াও নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও পাখি দেখা যায়।

13.হ্যালিডে দ্বীপ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য: পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় অবস্থিত এই অভয়ারণ্যটি ১৯৭৬ সালে অভায়ারণ্য হিসেবে ঘোষিত হয়। বঙ্গোপসাগরের কাছে মাতলা নদীর তীরে প্রায় ৬ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই অভয়ারণ্যের অবস্থান। এই অভয়ারণ্যে চিত্রা হরিণ, বুনো শুয়োর, নোনা জলের কুমির, বাংলা বাঘ প্রভৃতি বন্যপ্রাণী দেখা যায়।

[…] আরো পড়ুন- বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক প… […]
[…] পশ্চিমবঙ্গের বনভূমি সম্পর্কে জানতে- cl…পশ্চিমবঙ্গের থানা সম্পর্কে জানতে- click here […]
[…] এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের বনভূমি সম্বন্ধে জ… -CLICK HERE […]
[…] […]
[…] […]