পশ্চিমবঙ্গের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দুর্গ যেগুলি সম্বন্ধে আমরা খুব কমই জানি। নিচে পশ্চিমবঙ্গের ৫ টি দুর্গ নিয়ে আলোচনা করা হলো।
1.কুরুম্বের দুর্গ (Kurumber Fort)

এই দূর্গটি পশ্চিমবঙ্গের গগনেশ্বর গ্রামে যেটি খড়গপুর থেকে ২৭ মাইল দূরে অবস্থিত। এখানে যাওয়ার সরাসরি কোন বাস পরিষেবা নেই। এই কেল্লাটি প্রাচীন উড়িষ্যার স্থাপত্যের সঙ্গে অনেক মিল রয়েছে। কেল্লাটি ১৪৩৮ থেকে ১৪৭০ মধ্যে তৈরি হয়েছে। তৎকালীন উড়িষ্যার রাজা সূর্যাবামসি গজপতি এই কেল্লাটি তৈরি করে। এটি ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ দ্বারা সংরক্ষিত আছে। ১৫৬৮ সালে সুলতান দের দ্বারা উড়িষ্যা আক্রমণ হলে দুর্গটিও দখল হয়ে যায়। এর পরবর্তীকালে ১৫৭৫ সালে ওরঙ্গজেবের এর রাজত্বকালে, মুঘলরা আফগান সুলতানি দের পরাজিত করলে দুর্গটি পুনরুদ্ধারিত হয়। পরবর্তীকালে মুঘলরা দূর্গটিকে মসজিদে পরিণত করে। ১৭০০ শতকের মাঝামাঝি সময়ে দুর্গটি অবিভক্ত বঙ্গের অধীনে নিয়ে আসা হয়।
2.দুর্গ রেডিসন (Fort Radisson)

দুর্গ টি ১৭৮৩ সালে ব্রিটিশ সরকারের দ্বারা তৈরি। জলদস্যু দের কলকাতা যাওয়া আটকাতে এই দূর্গটি তৈরি করে ব্রিটিশ কমান্ডার জেনারেল ওয়াটসন। বর্তমানে এটি একটি ৩ স্টার হোটেল এবং রেস্টুরেন্টে ও সুন্দর একটি রিসোর্ট। এটি ডাইমন্ডহারবারের রাইচকে অবস্থিত।
পশ্চিমবঙ্গের উল্লেখযোগ্য কিছু দুর্গ|Fort in west bengal
3.বক্সা কেল্লা (Buxa Fort)

এটি আলিপুরদুয়ার জেলায়, আলিপুরদুয়ার শহর থেকে ৩০ কিমি. দূরে অবস্থিত। দুর্গটি পরবর্তী কালে উচ্চ সুরক্ষা ও কারাগার হিসাবে ব্যবহার করা হয়।অনুশীলন সমিতি ও যুগান্তর গোষ্ঠীভুক্ত জাতীয়তাবাদী বিপ্লবীরা ১৯৩০ এর দশকে এখানে বন্দী ছিলেন। ১৮৬৫ সালে দুর্গটি ব্রিটিশদের কাছে হস্তান্তর করা হয় এবং ব্রিটিশরা বাঁশের তৈরি এই দুর্গটি রূপান্তরিত করে পাথরের তৈরি করে। দূর্গটি ভারতের আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ থাকা সেলুলার জেলের মত কুখ্যাত কারাগার হিসেবে পরিচিত ছিল। বর্তমানে কেল্লাটি পুরানো ধ্বংসাবশেষে পরিণত হলেও ‘ট্রাকিং’ এর জন্য এখনও প্রচুর মানুষ এখানে আসে।
4.ফোর্ট উইলিয়াম (Fort William)

এটি কলকাতার একটি ঐতিহাসিক স্থাপত্য। রাজা উইলিয়াম এর নাম অনুসারে এর নাম ফোর্ট উইলিয়াম রাখা হয়। এটি ১৬৯৬ থেকে ১৭০২ সালের মধ্যে তৈরি। পরবর্তী কালে ব্রিটিশরা ময়দানে এর পুনঃনির্মাণ করে। ভারতের কলকাতা শহরে ফোর্ট উইলিয়াম স্থাপত্যটি অবস্থিত। ১৬৯৬ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, তৎকালীন মোগল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের অনুমতি নিয়ে ফোর্ট উইলিয়াম নির্মাণ শুরু করে।
আরও পড়ুন- স্ট্যাচু অফ লিবার্টি নির্মাণের ইতিহাস। কিভাবে আমেরিকায় গড়ে উঠলো এই মূর্তি।
১৭৫৬ সালে বাংলার নবাব ‘সিরাজ উদ দৌল্লা’ আক্রমণ করে এবং দখল করে নেয়, কিন্তু এই আক্রমণ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ১৭৫৮ সালে লর্ড ক্লাইভের রাজত্বকালে দুর্গটি ইংরেজরা পুনরায় দখল করে এবং নতুন করে নির্মাণ শুরু করে। ১৭০০ শতকের শেষের দিকে স্থাপত্যটি নির্মাণ কার্য শেষ হয়। বর্তমানে জায়গাটি খুব সুন্দর করে পরিচর্যা করা হয় এবং ফোর্ট উইলিয়ামের চারিদিকে সুন্দর বাগানের মাধ্যমে ঘিরে ফেলা হয়েছে। এটি কলকাতার ফুসফুস নামেও পরিচিত। বর্তমানে এটি ভারতীয় সেনার কার্যালয়।
5.ফোর্ট মর্নিংটন (Fort Mornington)
ফোর্ট মর্নিংটন পশ্চিম বঙ্গের প্রাচীন দূর্গ গুলির মধ্যে একটি। ভারতবর্ষে ব্রিটিশ রাজ চলাকালীন লর্ড ক্লাইভের রাজত্বকালে ফোর্ট মর্নিংটন দূর্গটি নিমার্ণ করা হয়। পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলায় গাদিযারা গ্রামে এই দুর্গটি নির্মাণ করা হয়েছিল। জায়গাটিতে একটি পুরাতন বাতিঘরও রয়েছে, হুগলি, দামদর, রূপনারায়ন নদীর সংযোগস্থলে এই দূর্গ নির্মিত। নদী দ্বারা আগত পণ্যবাহী জাহাজ গুলিকে সঠিক দিশা দেখানোর জন্যই কেল্লাটি নির্মিত হয়েছে বলে মনেকরা হয়। কলকাতা থেকে ২-৩ ঘন্টা দূরত্বে রয়েছে দুর্গটি।
[…] […]