গ্রহাণু থেকে নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে এলো হায়াবুসা-২

জাপানের হায়াবুসা-২ মিশনরিয়ুগু‘ গ্রহাণুর তথ্য সামগ্রী এবং ভূভাগের কিছু অংশ সংগ্রহ করে নিয়ে এলো পৃথিবীতে।

জাপানের মহাকাশ সংস্থা জেক্সা(JAXA) ২০১৪ সালে এই হায়াবুসা মিশনটি লঞ্চ করে। যার উদ্দেশ্য ছিল পৃথিবীর নিকটে থাকা একটি গ্রহাণু যার নাম ‘রিয়ুগু’, এই গ্রহাণুর কাছে যাবে এবং গ্রহাণুটির ভূপৃষ্টে মহাকাশযানটি অবতরণ করবে।

জাপানের হায়াবুসা-২ মিশন ৩রা ডিসেম্বর ২০১৪ সালে লঞ্চ করা হয়, এর উদ্দেশ্য ছিল রিয়ুগু গ্রহাণুর কিছু নমুনা সংগ্রহ করা। ২০১৪ সালে লঞ্চ করার পর চার বছর মহাকাশযানটি ধীরে ধীরে গ্রহাণুটির কক্ষপথে প্রবেশ করে। পৃথিবী থেকে রিয়ুগু গ্রহাণুর দূরত্ব প্ৰায় ৩০০ মিলিয়ন কিলোমিটার। সুতরাং মহাকাশ যানটি প্রায় ওই দূরত্ব অতিক্রম করে ২০১৮ সালের জুন মাসে রিয়ুগু গ্রহাণুতে অবতরণ করে। গ্রহাণুটি অবতরণ করার পর প্রায় ১.৫ বছর মহাকাশ যানটি গ্রহাণুটিতে ছিল। আমাদের পৃথিবীর মতোই গ্রহাণুটিও সূর্য কে পরিক্রমা করছে।

গ্রহাণুটি খুব বেশি আকারে বড় নয়, প্রায় এক কিলোমিটার জায়গা জুড়ে রয়েছে গ্রহাণুটি। এটি পৃথিবীর নিকটতম গ্রহাণু গুলির মধ্যে একটি। গ্রহাণুটি বেশি বড় না হওয়ায় মহাকাশযানটির জন্য যথেষ্ট প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে নির্দিষ্ট জায়গা নির্ণয় করে অবতরণ করতে হয়েছে। ১.৫ বছর থাকাকালীন হায়াবুসা-২ গ্রহাণুটির মধ্যে খনন করে এবং ভেতরকার নমুনা সংগ্রহ করতে সফল হয়।

প্রায় ১.৫ বছর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর মহাকাশযানটি ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে পুনরায় পৃথিবীর উদ্দেশ্যে  রওনা হয়। পৃথিবীতে এই হায়াবুসা-২ ক্যাপসুলটি ৫ই ডিসেম্বর ২০২০তে পৃথিবীতে আসে।পৃথিবীতে অবতরণের সময় হায়াবুসা-২ ক্যাপসুলটি পৃথিবী থেকে প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার উপরে প্যারাস্যুট খুলে দেয় এবং ৫ই ডিসেম্বর ক্যাপসুলটি অস্ট্রেলিয়ার ‘ওওমেরা’ অঞ্চলে অবতরণ করে। এরপর জেক্সা জানায় যে ক্যাপসুলটি সফলভাবে রিয়ুগু গ্রহাণুর নমুনা সংগ্রহ করতে পেরেছে। নমুনার কিছু ছবি তারা ‘হায়াবুসা-২ জেক্সা‘ টুইটার এর মাধ্যমে সবার সাথে শেয়ার করেছে।

আরো পড়ুন- আসুন জেনেনিই নাসার প্রথম সূর্যের মিশন।

হায়াবুসা মিশনের কারণ কি

আপনার মনে প্রশ্ন হতেই পারে এই হায়াবুসা মিশনের কারন কি। এই মিশন কি খুবই দরকার ছিল, হায়াবুসা-১ জাপান সর্বপ্রথম লঞ্চ করে ২০০৩ সালে যে মিশনটি সফল ভাবে সমাপ্ত হয় ২০১০ সালে। এই মিশনটিতে হায়াবুসা-২ এর মতোই একটি গ্রহনুকে নিয়ে ছিল। প্রথম মিশনটির সফলতার পরই জাপান দ্বিতীয় মিশনটি লঞ্চ করে। বিজ্ঞানীদের কাছে বিভিন্ন গ্রহাণু গুলির নমুনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই নমুনার মাধ্যমেই তারা গ্রহাণু গুলি কোন ধরনের কণা দ্বারা তৈরি, এর উৎপত্তি কোথা থেকে, কিভাবে এই গ্রহাণু গুলি সৃষ্টি হয় ইত্যাদি বিষয়ে বিশদে জানতে পারবে।

এছাড়াও এই ধরনের গ্রহাণু গুলিতে ধাতুর পরিমাণ অনেক বেশি থাকে (সোনা, রুপা, ব্রঞ্চ) ফলে ভবিষ্যতের পেক্ষাপটে দেখতে গেলে পৃথিবী থেকে বহু এরকম মিশন গ্রহাণু গুলিতে যাবে খনন করার জন্য। একবার ভাবুন একটি গ্রহাণু যার মধ্যে সোনার পরিমাণ বেশি, সেই সমস্ত সোনা যদি পৃথিবীতে আনা যায় তবে সোনার দাম হয়তো কমে যাবে কিন্তু আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস গুলি যেমন ল্যাপটপ, কম্পিউটার, মোবাইল ইত্যাদির সুক্ষ সুক্ষ সরঞ্জামগুলি ধাতু হিসেবে হয়তো সোনা ব্যবহার হবে। যার ফলে প্রযুক্তি জগৎ আরো উন্নত হবে। গত ১৪ই ডিসেম্বর ২০২০ জেক্সা(JAXA) হায়াবুসা-২ মিশনের মাধ্যমে আগত নমুনার ছবি ও এর সফলতা প্রকাশ করে।

Leave a Reply