কৃত্রিম হীরা কিভাবে তৈরি হয়। ভারতে কোথায় হীরে উৎপাদন করা হয়

কৃত্রিম হীরা কিভাবে তৈরি হয়: হীরে পৃথিবীর একটি অমূল্য সম্পদ, যেটি বিশেষত শৌখিনতার অলংকারে ব্যাবহৃত হয়। প্রাচীন যুগে যবে থেকে হীরে পাওয়া যাচ্ছে, তখন থেকে আজ পর্যন্ত হিরের চাহিদা ও ব্যাবহার দুটিই বেড়ে আসছে। যার ফলে হীরের চাহিদা ও মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতীত থেকেই প্রাকৃতিক ভাবে খনন প্রক্রিয়ার সাহায্যে বের করে আনা হয়। কিন্তু চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম হীরে নির্মাণের পদ্ধতি বের করে ফেলে। বর্তমানে এই কৃত্রিম হীরে ‘সিনথেটিক হীরে বা ম্যান মেড হীরে‘ নামেও পরিচিত।

কৃত্রিম হীরে বা সিনথেটিক হীরে:

পৃথিবীতে এই কৃত্রিম বা সিনথেটিক হীরের প্রচলন ১৯৫০ সালে প্রথম চালু হয়। আমেরিকার মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি ‘জেনারেল ইলেকট্রিক‘ সর্বপ্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে দাবি করে যে তারা কৃত্রিমভাবে হীরে তৈরিতে সফল হয়েছে। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের দাবি রাশিয়ার কিছু কোম্পানি ১৯৫০ সালের পূর্বেই কৃত্রিম হীরে তৈরি করে ফেলেছিল কিন্তু তারা তা প্রকাশ করেননি। একজন সাধারন ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক হীরে ও কৃত্রিম হীরের মধ্যে তফাৎ বোঝা প্রায় অসম্ভব। কারণ প্রাকৃতিক হীরে যে পদ্ধতিতে তৈরি হয় কৃত্রিম হীরেও সেই একই পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়। একটি প্রাকৃতিক হীরে তৈরি হতে প্রায় হাজার বছর সময় লাগে, পৃথিবীর ভেতরে বছরের পর বছর ধরে অত্যাধিক তাপ ও তার সঙ্গে পাথরের চাপের কারণে কার্বনের প্রতিটি অনু পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে হীরের উৎপত্তি হয়। পৃথিবীর ভেতর থেকে এই হীরে লার্ভার দ্বারা ভূপৃষ্টে এসে জমা হয় এবং সেখান থেকে খনন প্রক্রিয়ার সাহায্যে হীরে বার করে আনা হয়।

কৃত্রিম হীরেকেউ একই উপায়ে মেশিনের মধ্যে কার্বনকে দুই সপ্তাহ ধরে চাপ ও তাপ দেওয়া হয় এরপরই কৃত্রিম হীরে তৈরি হয়। পঞ্চাশের দশকে মেশিনগুলোর খরচ ও আকারে অনেক বড় ছিল এবং যে হীরে উৎপাদিত হতো সেগুলি অলংকারে ব্যাবহারের যোগ্য ছিলনা। এই কৃত্রিম হীরে সেই সময় বিভিন্ন শিল্পে ও ব্যবসার কাজে ব্যবহৃত হতো। এরপর অপর একটি প্রযুক্তি আসে যার নাম ‘ক্যামিক্যাল ভ্যাপর ডিপজিশন‘। এই পদ্ধতিতে ছোটো মেশিনের সাহায্যে আরো বড়ো হীরে তৈরি করা হতে থাকে যা বিভিন্ন অলংকারে ব্যাবহার করা হয়। হীরার দাম যত আকাশছোঁয়া হতে থাকে ততই কৃত্রিম হীরের চাহিদা বাড়তে থাকে কারণ প্রাকৃতিক হীরেরে তুলনায় কৃত্রিম হীরের মূল্য কিছুটা কম। 

 আরো পড়ুন- বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় হীরে। কোহিনূরের রহস্য

ভারতে কোথায় হিরে উৎপাদন করা হয়:

ভারতবর্ষের গুজরাট রাজ্যের সুরাটে সবচেয়ে বেশি কৃতিম হীরে উৎপাদন করা হয়। এদের মধ্যে ‘ফাইন গ্রাউন ডায়মন্ড, নিউ গ্রাউন ডায়মন্ড, সোহাম ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডায়মন্ড’ ইত্যাদি। প্রাকৃতিক হীরের উত্তলন ভারতের একমাত্র মধ্যপ্রদেশ রাজ্যে করা হয়। মধ্যপ্রদেশের এই পান্না জেলায় প্রতিবছর প্রায় ৮৫ হাজার ক্যারেটের হীরে উত্তোলন করা হয়। বিশেষত কৃষ্ণা ও গোদাবরী নদীর ধারে এই উত্তোলন কেন্দ্র রয়েছে। এখানকার পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলিতে চাষের জমিতে ও নদীর ধারে কিছু হীরে পাওয়া যায়, যে গ্রামবাসী হীরেটি পাবে তাকে হীরেটির মোট মূল্যের ১১% দাম দেওয়া হয়। কিন্তু কালো বাজারির দৌলতে এই সব হীরে বাজারে চড়া দামে প্রচুর বিক্রি হয়।

মন্তব্য করুন