প্যান কার্ড কিভাবে তৈরি করব, প্যান কার্ড করতে কি কি লাগে

প্যান কার্ড কিভাবে তৈরি করব, প্যান কার্ড করতে কি কি লাগে: PAN Card (Permanent Account Number) ভারতের একটি বিভাগ যার দ্বারা ভারতের প্রত্যেক নাগরিক ট্যাক্স প্রদান করে। ভারতের প্রত্যেক গ্রাহক বা কোম্পানি বা কোন সংস্থা যারা ট্যাক্স প্রদান করে থাকে তাদের সমস্ত তথ্য এই প্যান কার্ডের মাধ্যমে রেকর্ড করা হয়ে থাকে। প্যান কার্ড ভারতের আয়কর বিভাগ দ্বারা পরিচালনা করা হয়। প্যান কার্ড এর উপরে আপনার ১০ সংখ্যার প্যান কার্ড নম্বর ও আপনার নাম জন্ম তারিখ লেখা থাকে।

প্যান কার্ড তৈরি করার জন্য ভারতের আয়কর বিভাগ পৃথক দুটি ওয়েবসাইট তৈরি করেছে NSDL ও UTIITSL, যার সাহায্যে আপনারা অনলাইনে প্যান কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন। নিচের দেওয়া নিম্নলিখিত নিবন্ধে আপনারা অনলাইনে প্যান কার্ড কিভাবে তৈরি করব ও প্যান কার্ড করতে কি কি লাগে এই বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করা হলো।

প্যান কার্ড কিভাবে তৈরি করব

  • প্রথমে আমরা NSDL ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে কিভাবে প্যান কার্ড কিভাবে তৈরি করব সেটা জানব।
  • প্রথমে আপনাকে NSDL এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যেতে হবে, (https://www.onlineservices.nsdl.com/paam/endUserRegisterContact.html)।
  • এরপর আপনাকে অ্যাপ্লিকেশন টাইপ সিলেক্ট করতে হবে।
  • এরপর আপনাকে আপনার বিভাগ সিলেক্ট করতে হবে।
  • এরপর ওই পেজে applicant information বিভাগে আপনাকে আপনার নাম, পদবী, জন্ম তারিখ, ইমেইল আইডি, মোবাইল নাম্বার দিতে হবে।
  • এরপর নিচের দেওয়া ছোট্ট বক্সে টিক মার্ক দেবেন।
  • এরপর captcha code বক্সটি সম্পূর্ণ করে সাবমিট বাটনে ক্লিক করবেন।
  • সাবমিট বাটনে ক্লিক করার পরে আপনার সামনে একটি মেসেজ দেখাবে যেখানে টোকন নাম্বার পাবেন।
  • এই টোকন নাম্বার আপনি আপনার ইমেল আইডি বা মোবাইল নাম্বারে পেয়ে যাবেন।
  • এরপর আপনি continue with PAN application form অপশনে ক্লিক করবেন।
  • এর পরের পেজে আপনার সামনে কিছু অপশন আসবে যেখানে আপনি আপনার তথ্য কিভাবে সাবমিট করবেন তা জানতে যাওয়া হবে।

প্যান কার্ড কিভাবে তৈরি করব: প্রথম অপশনে (submit digital thought e-kyc & e-Sign) যদি আপনি ক্লিক করেন তবে ২ ঘণ্টার মধ্যে আপনি আপনার প্যান কার্ড নম্বর পেয়ে যাবেন, এখানে আপনাকে মাথায় রাখতে হবে প্যান কার্ডে যে ছবি এক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে তা আপনার আধার কার্ড থেকে নেওয়া হবে।

প্যান কার্ড কিভাবে তৈরি করব, প্যান কার্ড করতে কি কি লাগে, প্যান কার্ড কি কাজে লাগে, প্যান কার্ড করতে কি কি লাগে, প্যান কার্ড কিভাবে বানানো যায়
প্যান কার্ড কিভাবে তৈরি করব

এরপরে দ্বিতীয় অপশন (submit scanded image thought e-Sign) যদি আপনি ক্লিক করেন তবে আপনাকে আপনার বর্তমান নিজের ছবি ও হস্তাক্ষর আপলোড করতে হবে।

  • আমরা আপনাকে দ্বিতীয় অপশন ব্যবহার করার পরামর্শ দেব, যদি না আপনার খুব দ্রুত প্যান কার্ড নম্বরের প্রয়োজন হয়।
  • এরপরে আপনাকে পেজের নিচের দিকে আসতে হবে যেখানে আপনাকে দুটি অপশন দেখাবে যেখানে লেখা থাকবে Whether physical PAN card is required? আপনি যদি প্যান কার্ড নিজের হাতে চান তবে আপনাকে আবেদন মূল্য দিতে হবে। অন্যথায় আপনাকে কোন আবেদন মূল্য দিতে হবে না।
প্যান কার্ড কিভাবে তৈরি করব, প্যান কার্ড করতে কি কি লাগে, প্যান কার্ড কি কাজে লাগে, প্যান কার্ড করতে কি কি লাগে, প্যান কার্ড কিভাবে বানানো যায়
প্যান কার্ড কিভাবে তৈরি করব
  • এরপর আপনাকে আপনার আঁধার নম্বরের শেষ চারটি সংখ্যা দিতে হবে।।
  • এরপর আপনাকে আধার কার্ড অনুযায়ী নিজের নাম লিখতে হবে।
  • এরপর ওই পেজে যে অপশন গুলো ফাঁকা থাকবে আপনার প্রয়োজন মত আপনি সেই অপশন গুলো ভর্তি করতে পারবেন।
  • নিচের দিকে আপনাকে আপনার পরিবারের সমস্ত তথ্য দিতে হবে।
  • এরপর আপনাকে NEXT অপশনে ক্লিক করতে হবে।
  • পরবর্তী পেজ আসার পর আপনাকে source of income ফর্মটি সম্পূর্ণ ফিলাপ করতে হবে।
  • ওই পেজে আপনাকে নিচের দিকে আপনার ঠিকানা, অফিসের ঠিকানা, মোবাইল নাম্বার, ইমেল আইডি ইত্যাদি তথ্য দিতে হবে।
  • এরপরে আবারো আপনাকে Next অপশনে ক্লিক করতে হবে।
  • এই পেজে আপনাকে AO কোড দিতে হবে, আপনি নিচের অপশন থেকে বার করতে পারবেন।
  • এই অপশনে আপনাকে আপনার রাজ্য শহর সিলেক্ট করলেই আপনি যাবতীয় তথ্য পেয়ে যাবেন।
প্যান কার্ড কিভাবে তৈরি করব, প্যান কার্ড করতে কি কি লাগে
প্যান কার্ড কিভাবে তৈরি করব
  • এরপর আবার আপনাদের Next অপশনে ক্লিক করতে হবে।
  • এই পেজে আপনাকে identity proof, address proof, date of birth proof অপশন থেকে আপনি যেই অপশন সিলেক্ট করতে চান করতে পারেন। মনে রাখবেন যে ডকুমেন্ট আপনি সিলেক্ট করবেন তার pdf আপনাকে আপলোড করতে হবে।
প্যান কার্ড কিভাবে তৈরি করব, প্যান কার্ড করতে কি কি লাগে, প্যান কার্ড কি কাজে লাগে, প্যান কার্ড করতে কি কি লাগে, প্যান কার্ড কিভাবে বানানো যায়
প্যান কার্ড কিভাবে তৈরি করব
  • এরপর আপনাকে নিজের ছবি ও হস্তাক্ষর আপলোড করতে হবে। ছবি দুটির সাইজ ৮০kb এর মধ্যে হতে হবে এছাড়া উল্লেখ করা dimension আপনাকে ব্যবহার করতে হবে।
  • এরপর আপনাকে উপরে সিলেক্ট করা ডকুমেন্টের পিডিএফ ফাইল আপলোড করতে হবে এবং সবশেষে সাবমিট বাটনে ক্লিক করবেন।
  • সাবমিট বাটনে ক্লিক করার পর আপনি সম্পূর্ণ ফর্মের তথ্য দেখতে পাবেন এবং চাইলে পরিবর্তন করতে পারেন। ফাইনাল সাবমিট করার পর আপনি আর আপনার তথ্য ও পরিবর্তন করতে পারবেন না।
  • এরপর আপনাকে আবেদনমূল্য প্রদান করার জন্য বলা হবে। ১০৬ টাকা আপনাকে আবেদন মূল্য দিতে হবে।
  • আবেদন মূল্য দেয়ার পর আপনার সামনে  payment receipt এর একটি পেজ খুলে যাবে এরপর আপনাকে authentic অপশনে ক্লিক করতে হবে।
  • এরপর আপনাকে OTP authentic অপশনে ক্লিক করতে হবে।
  • এরপর আপনি আপনার মোবাইল ফোনে আশা ওটিপি ফিলাপ করে continue অপশনে ক্লিক করবেন।
  • এরপর আপনাকে Continue with e-sign অপশনে ক্লিক করতে হবে।
  • এরপরে NSDL একটি পেজ আপনার সামনে আসবে এখানে আপনার আধার নাম্বার দিতে হবে এবং send otp অপশনে ক্লিক করতে হবে।
  • এরপর আপনার যে মোবাইল নাম্বারে আধার কার্ড লিঙ্ক রয়েছে সেই মোবাইল নাম্বারে একটি otp যাবে এবং সেই otp আপনাকে ফর্মে দিতে হবে।

প্যান কার্ড কিভাবে তৈরি করব: এরপরে আপনাকে মেসেজ শো করবে, thank you for using online facility for Pan application, এই পেজে আপনি ফর্মের পিডিএফ ডাউনলোড করতে পারবেন।
ফর্মের আবেদন করার ৫-১০ দিনের মধ্যে ডাকের মাধ্যমে আপনি আপনার প্যান কার্ড হাতে পেয়ে যাবেন।।

প্যান কার্ড করতে কত আবেদন মূল্য দিতে হবে

প্যান কার্ড করতে আপনাকে মোট ১১০ টাকা দিতে হবে আবেদনমূল্য রূপে।
কিন্তু যদি আপনার প্যান কার্ড ভারতের বাইরে পার্সেল করতে হয় তবে আপনাকে ১০২০ টাকা দিতে হবে। আপনি ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, নেট ব্যাঙ্কিং, UPI এর মাধ্যমে আবেদন মূল্য দিতে পারেন।

প্যান কার্ড করতে কি কি লাগে

  • প্যান কার্ড করতে গেলে আপনাকে নির্মলাচিত ডকুমেন্ট গুলি দিতে হবে।
  • ভোটার আইডি কার্ড
  • পাসপোর্ট
  • ড্রাইভিং লাইসেন্স
  • রেশন কার্ড
  • জন্মের প্রমাণপত্র
  • যদি কোন পেনশন উপবক্তা থাকে
  • অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী

প্যান কার্ডের নম্বরের কাঠামো কিভাবে তৈরি হয় ?

পার্মানেন্ট একাউন্ট নাম্বার বা প্যান কার্ড আজ প্রায় প্রত্যেক ভারতবাসীর কাছে রয়েছে। ভারতের সরকারের আয়কর বিভাগ দ্বারা এই প্যান কার্ড তৈরি করা হয়। প্যান কার্ড প্রধানত ১০ সংখ্যার হয়, তবে এই ১০ সংখ্যার এক রকম কাঠামো আছে যা দ্বারা প্যান কার্ডের নম্বর তৈরি হয়। প্রত্যেক ব্যক্তিগত মানুষ, সংস্থা, কোম্পানীর জন্য আলাদা সংখ্যা ব্যবহার হয়ে থাকে। আসুন দেখে নেওয়া যাক প্যান কার্ডের ১০ সংখ্যার কাঠামো।

প্যান কার্ডের প্রথম ৫ টি অক্ষর হয় ইংরেজি অক্ষর, এরপরের চারটি সংখ্যা থাকে এবং শেষে একটি ইংরেজি অক্ষর থাকে।
EX- WWWYG1234D

এবারে এই ১০ সংখ্যার কাঠামোর মধ্যে প্রথম যে ৩টি ইংরেজি অক্ষর থাকে তা A থেকে Z পর্যন্ত যেকোনো ইংরেজি অক্ষর হতে পারে।
চতুর্থ যে ইংরেজি অক্ষর থাকে তা বিচার করা হয় প্যান কার্ড গ্রাহকের উপর। প্যান কার্ডের গ্রাহক কি রকম ধরনের তার উপর বিচার করে সেই অক্ষরটি নির্বাচন করা হয়। নিচের দেওয়া তালিকায় আপনারা দেখতে পাবেন প্রত্যেকটি অক্ষর কোন গ্রাহকদের জন্য ব্যবহার করা হয়।

A — AOP (Association of persons)
B — BOI (Body of individuals)
C — Company
F — Firm
G — Government
H — HUF (Hindu Undivided Family)
L — Local authority
J — Artificial juridical person
P — Person (Individual)
T — Trust (AOP)

  • পঞ্চম ইংরেজি অক্ষরটি নির্বাচন করা হয় প্যান কার্ড গ্রাহকের প্রথম নাম মধ্যনাম অথবা পদবি দ্বারা।
  • এরপর যে ৪ টি সংখ্যা থাকে সেগুলি অটোমেটিক জেনারেট করা হয়।
  • শেষ যে ইংরেজি অক্ষরটি থাকে সেটিও একপ্রকার অটো জেনারেট করা হয়।

প্যান কার্ডের ইতিহাস, কিভাবে প্যান কার্ড ভারতে চালু হল ?

১৯৭২ সালে প্রথম প্যান কার্ডের ধারণা ভারতের আনা হয়। যদিও এর পূর্বে ভারতে ইনকাম ট্যাক্স যাচাই করার জন্য GIR পদ্ধতি ব্যবহার করা হতো। GIR এর সম্পূর্ণ নাম হলো General index register, তবে এই পদ্ধতিতে গ্রাহক, কোম্পানি, বিভিন্ন ইনস্টিটিউট ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ পেয়ে যেত। কারণ এটি একটি ম্যানুয়াল প্রক্রিয়া ছিল যা বিভিন্ন অফিসার দ্বারা যাচাই করা হতো। স্বাভাবিকভাবে ভারতের মতো এত জনবহুল দেশে এই পদ্ধতি বিফল হয়। এরপরেই ভারতের আয়কর বিভাগ প্যান কার্ডের সূচনা ঘটায়। ইনকাম ট্যাক্স আইন ১৯৬১ দ্বারা সেকশন 139A এর অধীনে ভারত সরকার প্যান কার্ডের সূচনা ঘটায়। ১৯৭৬ সালের পরবর্তীকালে প্যান কার্ড বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হয় ভারতের প্রত্যেক ট্যাক্স দেওয়া গ্রাহকদের জন্য। এরপর ধীরে ধীরে প্যান কার্ডকে ভারতের প্রথম মেট্রো শহর গুলিতে চালু করা হয় ও পরবর্তীকালে ভারতের প্রত্যেক নাগরিকদের জন্য প্যান কার্ড বাধ্যতামূলক করা হয়।

মন্তব্য করুন