ইলোরার কৈলাস মন্দির। মাত্র একটি পাথরে তৈরি হিন্দু মন্দির

ইলোরার কৈলাস মন্দির। মাত্র একটি পাথরে তৈরি হিন্দু মন্দির

সারা পৃথিবী জুড়ে এমন অনেক মন্দির আছে যাদের সৌন্দর্য সকলকে মুগ্ধ করে। কিন্তু ভারতবর্ষে এমন একটি মন্দির রয়েছে বহু যুগ ধরে তার সৌন্দর্যের রহস্য লুকিয়ে রেখেছে। মন্দিরটি মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গবাদ জেলার ইলোরা গুহায় অবস্থিত, এটি ইলোরার কৈলাস মন্দির। মহারাষ্ট্রের ইলোরা গুহা বেশ প্রাচীন। পাথর কেটে এই ইলোরায় ৩৪ টি গুহা বানানো হয়েছে। আর রয়েছে একটি প্রাচীন হিন্দু মন্দির। মন্দিরে রয়েছে একটি বড় শিবলিঙ্গ।

ইলোরার কৈলাস মন্দির

সাধারণত প্রাচীনকালে যে সমস্ত মন্দির তৈরি করা হতো তাদের প্রত্যেকটি একটির সঙ্গে আর একটি পাথরকে জুড়ে তৈরি করা হতো। কিন্তু এই মন্দির তৈরীর ক্ষেত্রে তেমন কিছু করা হয়নি। তার বদলে একটি মস্ত বড় পাথর কেটে বানানো হয়েছে। সাধারণত পাহাড়ের গায়ে যে সমস্ত গুহা বানানো হয় তার প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই পাহাড়ের এক পাশ থেকে পাহাড়ের ভেতরের দিকে কাটা হয়। কিন্তু এই ক্ষেত্রে ইলোরা মন্দির নির্মাণের জন্য পাথরের উপর থেকে নিচের দিকে করে কাটা হয়েছে। যে পদ্ধতিতে মন্দিরটিকে পাহাড় কেটে বানানো হয়েছে তা অসম্ভব না হলেও বেশ মুশকিল জনক কাজ।   

মন্দিরটিতে প্রচুর কারুকার্য লক্ষ করা যায়। এই মন্দির এতটাই বড় যে তা দেখলে বোঝা যায় প্রচুর পরিমাণে পাথর কাটতে হয়েছে এটি বানাতে। এখনো সঠিকভাবে বলা মুশকিল যে কবে এই মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছিল। সাধারণভাবে বিচার করে দেখলে এটা বলা যায় যে এই মন্দির যে পাহাড় কেটে নির্মাণ করা হয়েছে তা কয়েক লক্ষ বছর পূরনো হতে পারে। কিন্তু তাকে কেটে মন্দির হয়তো কয়েক হাজার বছর আগেই বানানো হয়েছে।   

আরও পরুন – বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় হীরে। কোহিনূরের রহস্য  

ভূতত্ত্ববিদ ও প্রত্নতত্ত্ববিদদের গবেষণা থেকে জানা গেছে এটি কোন সাধারণ মন্দির না। মন্দিরটির নীচে একটি গোপন ভূগর্ভস্থ জায়গা আছে। নীচে যাওয়ার যে সুড়ঙ্গটি রয়েছে তা সাধারন পর্যটকদের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। গবেষকদের মতে মন্দির তৈরি করার জন্য চার লক্ষ টন পাথর কেটে বের করতে হয়েছে।   

বলা হয় মন্দিরটি সম্পূর্ণ তৈরি করতে মাত্র ১৮ বছর সময় লেগেছিল। কিন্তু এমনটা মানতে অস্বীকার করেন অনেকেই। কারণ হিসাব করলে দেখা যায় ৬০ টন ওজনের পাথর প্রত্যেকদিন কাটা এবং সরানো হয়েছিল। কিন্তু এরপরেও মন্দিরের শিল্প ও ভাস্কর্য তৈরি করতে আরও সময় লাগা উচিত। মন্দিরের গায়ে তৈরি বিপুল পরিমাণে শিল্পকলা ও ভাস্কর্য দেখে অবাক হতে হয়। কারণ যে সময় মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছে সেই যুগে আজকের দিনের মত এত আধুনিক সরঞ্জাম ছিল না। সম্ভবত সেই সময় শুধুমাত্র কিছু পাথরের সরঞ্জাম ব্যবহার করা হতো। অবাক করা হলেও যদি ধরা হয় সেই সময়ে সাধারণ মানুষই মন্দিরটি নির্মাণ করেছে তাহলেও প্রচুর সময় লেগে যাওয়া উচিত। মাত্র ১৮ বছরে তা প্রায় অসম্ভব।   

মানুষের মনে আছে এই মন্দিরটি নিয়ে নানা প্রশ্ন। যেমন ‘আধুনিক সরঞ্জাম পরিবহনব্যবস্থা এসব ছাড়াই এত পাথর কাটা ও সরানো কিভাবে সম্ভব হল? মন্দিরটির আশেপাশের কয়েক মাইলের মধ্যেও মন্দির থেকে কেটে বের করা পাথরের চিহ্ন নেই, তাহলে  এত পাথর গেল কোথায়?’ শুধু তাই নয় মন্দিরের ভেতরে বৃষ্টির জল কে সংগ্রহ করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। এখানকার জলাশয়, ছোট সেতু ও সিঁড়ি নির্মাণের সৌন্দর্য মন কেড়ে নেয় সকলের। যেভাবে একটি পাথরকে উপর থেকে নিচের দিকে কেটে মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছে তা দেখে বোঝা যায় অত্যন্ত হিসেব ও কঠিন পরিকল্পনা রয়েছে এর পেছনে। 

Previous articleটাইটানিকে এশিয়ার একমাত্র জীবিত জাপানি যাত্রী। যাকে কাপুরুষ বলা হয়, কিন্তু কেন
Next articleপৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য আলেকজান্দ্রিয়ার বাতিঘর। Lighthouse of Alexandria in bengali
আমরা Extra Gyaan এর সদস্যরা পেশাগতভাবে ব্লগিং এর সঙ্গে যুক্ত। আমরা ইন্টারনেট, প্রযুক্তি, নাসা, মহাকাশের বিভিন্ন তথ্য, শিক্ষাগত দিক ও খেলাধুলার বিষয়ে নিবন্ধ লিখে থাকি সম্পূর্ণ বাংলা ভাষায়। আমাদের উদ্দেশ্য হলো বাংলা ভাষায় আপনাদের সামনে সেরা তথ্য তুলে ধরা।

Leave a Reply