একে চন্দ্র দুয়ে পক্ষ। অষ্টবসু কারা? পঞ্চবান কী?

একে চন্দ্র দুয়ে পক্ষ, অষ্টবসু কারা? পঞ্চবান কী?:- আমরা সকলেই ছোটবেলায় এক থেকে দশ এর সংখ্যামালা মনে রাখার জন্য একে চন্দ্র, দুয়ে পক্ষ ইত্যাদি পড়তাম। প্রত্যেকটি সংখ্যার পেছনেই এরকম কিছু বিশেষ নাম যোগ করা হতো। ছড়ার মতো করে এইভাবে পড়লে সহজে মনে রাখা যায় সংখ্যাগুলি। তবে শুধু সংখ্যা মনে রাখার জন্য নয় বরং এর মাধ্যমে যে বিশিষ্ট নাম গুলি বলা হতো সেগুলোও মনে রাখতে এই ভাবে পড়া হত।

একে চন্দ্র দুয়ে পক্ষ

এই সংখ্যাগুলির পেছনে যে নামগুলি বলা হত তা হল – একে চন্দ্র, দুয়ে পক্ষ, তিনে নেত্র, চারে বেদ, পাঁচে পঞ্চবান, ছয়ে ঋতু, সাতে সমুদ্র, আটে অষ্টবসু, নয়ে নবগ্রহ এবং দশে দশ দিক। তবে সংখ্যাগুলির পেছনের এই কথাগুলো বলা হয়েছে যেগুলোর ব্যাপারে কেউ কেউ জানেন আবার অনেকেই সব গুলোর ব্যাপারে জানেন না তাই সবকটির ব্যাপারে কিছু বিবরণ তুলে ধরা হলো – 

১. একে চন্দ্র বলতে চাঁদ কে বোঝায়। যেহেতু চাঁদ একটি রয়েছে তাই এক সংখ্যার সাথে চাঁদের কথা বলা হয়ে থাকে।

২. এরপরে যেটি বলা হয় তাহল দুয়ে পক্ষ। এখানে দুয়ে পক্ষ বলতে মাসের দুটি পক্ষ কে বোঝানো হয়। পক্ষ দুটি হল কৃষ্ণপক্ষ এবং শুক্লপক্ষ।

৩. এরপর আসে তিনে নেত্র। এখানে তিনে নেত্র বলতে আসলে তিনটি চোখের কথা বলা হয়ে থাকে। আমরা সকলেই দু চোখ বিশিষ্ট আর তৃতীয় চক্ষু হল জ্ঞান চক্ষু। 

৪. চারে বলা হয়ে থাকে বেদ। অর্থাৎ এখানে সর্ব প্রসিদ্ধ চারটি বেদের কথা বলা হয়। যেহেতু চারটি বেদ বিশিষ্ট তাই তাকে চার সংখ্যার সাথে ধরা হয়। এই চারটি বেদ হল ঋক্, শ্যাম, যজু এবং অথর্ববেদ। 

অষ্টবসু কারা? পঞ্চবান কী?

পঞ্চবান কী?

৫. এরপর যেটির কথা বলা হয় সেটি হল পাঁচে পঞ্চবান। তবে এটির ব্যাপারে জানা থাকে না অনেকেরই। হিন্দু ধর্ম অনুসারে কামদেব অথবা মদন দেবের পাঁচটি বানের কথা বলা হয়ে থাকে। এই পাঁচটি প্রশ্ন হল সম্মোহন তাপন, শোষণ, উন্মাদন এবং স্তম্ভন। 

৬. এরপর আসে ছয় ঋতু। এটির ব্যাপারে জানে সকলেই তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই ছয়টি ঋতু হলো গ্রীষ্মকাল, বর্ষাকাল, শরৎকাল, হেমন্তকাল, শীতকাল এবং বসন্তকাল।

৭. এরপর সাতে সমুদ্র বলা হয়। পুরাণে বর্ণিত হয়েছে সাতটি সমুদ্রের নাম। এগুলি হল – লবণ, ইক্ষুরস, সুরা, ঘৃত, দধি, ক্ষীর এবং মিষ্টি জলের সাগর। 

অষ্টবসু কারা?

৮. আটে অষ্টবসু বলা হয়ে থাকে। হয়তো আজকের সময় অনেকেরই জানা নেই অষ্ট বসুর ব্যাপারে। এই অষ্ট বসু যাদেরকে বলা হতো তারা দক্ষ রাজ কন্যার পুত্র। মহাভারতে আটজন বসুর কথা বলা হয়। এরা হলেন দক্ষ রাজ কন্যা বসুর পূত্র। মহাভারতে ভীষ্ম একটি অতি উল্লেখযোগ্য এবং প্রসিদ্ধ নাম। আর এই ভীষ্ম কোন সাধারণ ব্যক্তি ছিলেন না তিনি ছিলেন অষ্ট বসুর শেষ বসু।পুরাণ অনুসারে এই অষ্ট বসুদের কখনো দেবতা আবার কখনো মানবের কোলে জন্ম নেওয়ায় উপদেবতা বলা হয়েছে। এই অষ্ট বসুদের নাম গুলি হল ধর, সোম, ধ্রুব, অহ, অনিল, অনল প্রত্যুষ এবং প্রভাস। ঋষি বশিষ্ঠ দ্বারা অভিশপ্ত হয়েই অষ্ট বসুরা পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেন। ঘটনাচক্রে সাত জনই জন্মের পর-পরই মুক্তি লাভ করেন অভিশাপ থেকে। কিন্তু শেষ বসু অর্থাৎ প্রভাস থেকে যায়। তিনি রাজা শান্তনু এবং দেবী গঙ্গার পুত্র দেবব্রত। যিনি পরে ভীষ্ম নামে পরিচিতি লাভ করেন। 

৯. এরপরে নয়ে নবগ্রহ বলা হয়ে থাকে।আমরা জানি সৌরমণ্ডলের যে নবগ্রহের নাম রয়েছে সেগুলি হল – বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি,শনি, ইউরেনাস, নেপচুন ও প্লুটো। তার মধ্যে বর্তমানে প্লুটো গ্রহের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। ৯ সংখ্যার সাথে এখানে যেই নবগ্রহের কথা বলা হয়েছে সেগুলি হল রবি, চন্দ্র, মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র, শনি, রাহু ও কেতু। আমরা জানি রবি হলেন সূর্য এবং রাহু কেতু সূর্য গ্রহন এবং চন্দ্র গ্রহন কেই বলা হয়। এগুলি গ্রহ না হলেও ধর্ম ও পুরানে প্রসিদ্ধির কারণে এগুলিকে ধরা হয়। 

১০. সবশেষে বলা হয় দশ দিক এর কথা। যা আমাদের চারদিক গুলিকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়। এগুলি হল পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ, ঈশান, বায়ু, অগ্নি, নৈঋত, উর্ধ এবং অধঃ।

বাংলায় এই ধরনের বিভিন্ন শিক্ষামূলক নিবন্ধ আমরা লিখে থাকি। বাংলা নামতা, ১-১০০ বানান, বাংলা বর্ণমালা সম্বন্ধে বিস্তারিত নিবন্ধ আমাদের ওয়েবসাইটে পেয়ে যাবেন। এই ধরনের অন্যান্য বিষয়ের জন্য আমাদের ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ, টুইটার পেজ, ইন্সটাগ্রাম ইত্যাদি প্লাটফর্মে ফলো করতে পারেন। ধন্যবাদ।

“একে চন্দ্র দুয়ে পক্ষ। অষ্টবসু কারা? পঞ্চবান কী?”-এ 1-টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন