সম্প্রতি আবিষ্কৃত পৃথিবীর সবচাইতে দ্রুতগতির ইন্টারনেট যা সম্পূর্ণ নেটফ্লিক্স কে ১ সেকেন্ডে ডাউনলোড করতে সক্ষম

সম্প্রতি আবিষ্কৃত পৃথিবীর সবচাইতে দ্রুতগতির ইন্টারনেট যা সম্পূর্ণ নেটফ্লিক্স কে ১ সেকেন্ডে ডাউনলোড করতে সক্ষম

বর্তমান যুগে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের পর যে জিনিসটি আমাদের সকলের প্রয়োজন সেটি হলো ইন্টারনেট। এই শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে ইন্টারনেট ছাড়া আমরা যেন এক পাও এগোতে পারি না। আট থেকে আশি সকলের কাছেই ইন্টারনেট খুলে দিয়েছে জ্ঞানের দরজা। আজ এই ইন্টারনেটের জন্যই বিশ্বের সমস্ত কিছুই যেন আমাদের হাতের মুঠোয়।  

প্রথম ইন্টারনেট ব্যবহৃত হতো শুধুমাত্র বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলিতে। ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়তে থাকে সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে। আজ ৩ জি থেকে ৪ জি, দিনবদলের সাথে সাথে ইন্টারনেটের গতিতেও ও এসেছে অনেক পরিবর্তন। আজ পৃথিবীতে ইন্টারনেটের গতি এতটাই যা আমরা অতীতে কখনও কল্পনাও করতে পারিনি। তবুও আজ ৫ জি এর দিকে এগিয়ে এসেছি আমরা। কিন্তূ কম্পিউটারের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু আলাদা, কিছুদিন আগে পৃথিবীর সবথেকে দ্রুতগতির ইন্টারনেট ছিল অস্ট্রেলিয়ায়, যার গতি ছিল ৪৪.২ টেরাবাইট প্রতি সেকেন্ডে; যেখানে ১০২৪ গিগাবাইট এ ১ টেরাবাইট। এতটা গতি সত্যি আশ্চর্যের।

আরও পড়ুন- প্রাচীনকালে নির্মিত বিশ্বের ৫ টি বিখ্যাত প্রাচীর যা আজও আশ্চর্যের

তবে এটি কে ছাড়িয়ে গেছে বর্তমানে ইন্টারনেটের গতি বেগ। আই.ই.ই.ই ফোটনিক টেকনোলজি লেটার্স প্রকাশিত গবেষণা পত্র অনুযায়ী বর্তমানে বিশ্বের যেকোন গতিবেগ এর চেয়ে অনেকগুণ বেশী এই ইন্টারনেটের গতি। যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন যে তারা পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুতগতি ইন্টারনেটে তথ্য আদান প্রদানে সক্ষম। এর গতি এতটাই দ্রুত যে সম্পূর্ণ নেটফ্লিক্স এ যত ভিডিও রয়েছে তার সমস্তই এক সেকেন্ডের ও কম সময়ে ডাউনলোড করা সক্ষম এর মাধ্যমে।

যুক্তরাষ্ট্রের লন্ডনে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন (ইউ.সি.এল) এর গবেষকরা সেকেন্ডে ১৭৮ টেরাবাইট ডেটা ট্রানস্মিশন রেট অর্জন করতে পেরেছেন। জানলে অবাক হবেন যে এটি পূর্বের অস্ট্রেলিয়ার প্রাপ্ত ইন্টারনেটের গতির পাঁচ গুণ। এ প্রযুক্তির পিছনে ছিলেন রয়াল অ্যাক্যাডেমি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং এর গবেষক ডঃ লিডিয়া গল্ডিনো, এক্সট্রা এবং কিদ্দিয়ের গবেষকরা।

এত দ্রুত গতির ইন্টারনেট কিভাবে পেলেন তারা? গবেষকরা জানিয়েছেন তারা ফাইবার অপটিক এর পরিবর্তে এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন উচ্চতর পরিসরের তরঙ্গদৈর্ঘ্যকে। তারা এর সিগন্যালকে আরও বাড়ানোর জন্য নতুন এক প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন। বিজ্ঞানীরা আরো জানান, অপটিক্যাল ফাইবার এর মাধ্যমে আরও অনেক বেশি তরঙ্গদৈর্ঘ্যের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান করা সম্ভব এবং এই তথ্য প্রেরণের সিগন্যালের শক্তি কে আরো অনেকটা বাড়িয়ে তুলতে পারে এমনই এক নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করেছিলেন বিজ্ঞানীরা, এই পরিমাণ গতি অর্জন করার জন্য।  

সাম্প্রতিককালে ব্যবহৃত অপটিক্যাল ফাইবার গুলির ব্যান্ডউইথ সমর্থন করার ক্ষমতা ৪.৫টি হার্জ পর্যন্ত। কিছু কিছু অঞ্চলে আবার এর থেকেও বেশি ক্ষমতা রয়েছে যেমন ৯টি হার্জ পর্যন্ত। কিন্তু লন্ডন ইউনিভার্সিটি ছাত্র ও গবেষকরা এটির ক্ষমতা বাকি গুলির থেকে অনেক বেশি করে দেখাতে সক্ষম হয়েছেন। যেখানে অন্যান্য দেশগুলোর ব্যান্ডউইথ সমর্থন ক্ষমতার ৯টিহার্জ পর্যন্ত, সেখানে এটির ব্যান্ডউইথ সমর্থন ক্ষমতা ১৬.৮টি হার্জ পর্যন্ত অর্থাৎ দ্বিগুণ।  

তারা আরও জানিয়েছেন বর্তমানে আধুনিক ক্লাউড ডাটাসেন্টার গুলির ইন্টারনেট সেকেন্ডে ৩৫ ট্যারাবাইট গতি পরিবহনে সক্ষম। বিজ্ঞানীদের মতে তারা যে নতুন প্রযুক্তির সাথে কাজ করছেন তা পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন। এবং অপটিক্যাল ফাইবারে ব্যান্ডউইথের ব্যবহার আরো ভালোভাবে করতে পারে যা। তাদের বিশ্বরেকর্ড গড়ে তুলতে আগামীদিনের সাহায্য করবে।

এত দ্রুত গতির ইন্টারনেট কে তৈরি সত্যি আশ্চর্যের। এত গতিতে পৃথিবী থেকে প্রথম গৃহীত ব্ল্যাকহোলের ছবিটির ডেটা ডাউনলোড করতে সময় লাগবে এক ঘণ্টারও কম। প্রযুক্তির দিক থেকে আজ সারা বিশ্ব অতীতের কল্পনার চেয়ে বহুগুণে এগিয়ে। অতীতে যা কল্পনা করা সম্ভব ছিলনা আজ তা বাস্তবায়িত। আগামী দিনে এমনই নানা বিস্ময়কর প্রযুক্তি ধীরে ধীরে আবিষ্কার হতে থাকবে যা আমাদের জীবনের মাত্রকেই পাল্টে দেবে পুরোপুরিভাবে।

Previous articleভারতে ওয়েস্টার মাশরুম চাষ। ওয়েস্টার মাশরুম এর চাহিদা বৃদ্ধির কারন।
Next articleপৃথিবীর বুকে এমন এক হোটেল; যা রহস্য রোমাঞ্চের সম্ভার
আমরা Extra Gyaan এর সদস্যরা পেশাগতভাবে ব্লগিং এর সঙ্গে যুক্ত। আমরা ইন্টারনেট, প্রযুক্তি, নাসা, মহাকাশের বিভিন্ন তথ্য, শিক্ষাগত দিক ও খেলাধুলার বিষয়ে নিবন্ধ লিখে থাকি সম্পূর্ণ বাংলা ভাষায়। আমাদের উদ্দেশ্য হলো বাংলা ভাষায় আপনাদের সামনে সেরা তথ্য তুলে ধরা।

Leave a Reply