আয়তনে পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট দেশ: পৃথিবীতে আজকের দিনে দেশের সংখ্যা ১৯৫টি। এই দেশ গুলো বিভক্ত ৭টি মহাদেশের মধ্যে। আমাদের পৃথিবীতে সকল ভূখণ্ড ৭টি ভাগে বিভক্ত। এই ৭টি ভূখণ্ড বা মহাদেশ হলো এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, নর্থ আমেরিকা, সাউথ আমেরিকা এবং অ্যান্টার্কটিকা। এই সাতটি মহাদেশের ১৯৫টি দেশের মধ্যে আয়তনে পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট দেশ কোনটি জানেন? আজকের নিবন্ধে আমরা জানবো আয়তনে পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট দেশ কোনটি, একটি দেশকে ছোট এবং বড় বিচার করা হয় কিভাবে এবং এই আয়তনে পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট দেশ সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
আয়তনে পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট দেশ এর নাম, আয়তনে পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট দেশ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে আজকের নিবন্ধে। এই ধরনের বিভিন্ন শিক্ষামূলক তথ্য আমরা সম্পূর্ণ বাংলা ভাষায় আমাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পাঠকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করি। এই ধরনের শিক্ষামূলক তথ্য শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জনের বিশেষ সহায়ক হয়ে উঠবে। অতএব এই নিবন্ধটি সম্পূর্ণ পড়বেন। এরকম আরো শিক্ষামূলক পোস্ট পাওয়ার জন্যে আপনারা অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করতে পারেন।
Table of Contents
আয়তনে পৃথিবীর ছোট ও বড় দেশ বিচার হয় কিভাবে
দেশের সীমানাই দেশের আয়তন কে বিচার করে। একটি দেশের রাজনৈতিক এবং প্রাকৃতিক সীমানা একটি দেশের ভৌত অঞ্চল এবং তার আকার নির্ধারণ করে। রাজনৈতিক সীমানা হল দেশের একটি কৃত্রিম রেখা যা অন্যান্য দেশ থেকে সেই দেশকে রাজনৈতিক ভাবে আলাদা করে। প্রাকৃতিক সীমানা হল মহাসাগর, সমুদ্র, নদী, পর্বতশ্রেণী যেগুলো একটি দেশকে অন্য দেশের থেকে আলাদা করে।
আয়তনে পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট দেশ
আয়তনে পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট দেশ ভ্যাটিকান সিটি।

আয়তনে পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট দেশগুলো সবথেকে বেশি দেখতে পাওয়া যায় ক্যারিবিয়ান এবং দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে। পৃথিবীর সবথেকে ছোট দেশ গুলোর মধ্যে তিনটি হলো
- ভ্যাটিকান সিটি (ইতালি, রোম)
- মোনাকো (ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল)
- নাউরু (দক্ষিণ পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর)
আয়তনে পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট দেশের বিবরন
আয়তনে পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট দেশ ভ্যাটিকান সিটি, ইতালির রোম শহরে অবস্থিত একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। ভ্যাটিকান সিটি বিশেষভাবে ভ্যাটিকান নামেই অধিক পরিচিত। এই দেশ ১৯২৯ সালে ল্যাটেরান সন্ধির মাধ্যমে ইতালির থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। এখানকার রাষ্ট্র নেতা হলেন পোপ। এটি রোমান ক্যাথলিক গির্জার বিশ্ব সদর দপ্তর হিসেবে কাজ করে। সম্পূর্ণভাবে রোমের অভ্যন্তরে অবস্থিত বিশ্বের ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্র এই ভ্যাটিকান সিটি, যার আয়তন ৪৯ হেক্টর বা ১২১ একর।
ভ্যাটিকান সিটির অবস্থান উত্তর-পশ্চিম রোমের ভ্যাকটিকান পাহাড়ের উপরে একটি ত্রিভুজ আকৃতির এলাকায়, তিবের নদীর ঠিক পশ্চিমে। এই দেশ আয়তেনর দিক থেকে যেমন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম দেশ ঠিক তেমন ভাবেই জনসংখ্যার দিক থেকেও এই দেশ পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম। এই দেশের মোট জনসংখ্যা ২০১৯ সাল অনুযায়ী ৮৫৩ জন।
ভ্যাটিকান সিটি হলি সি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, এই দেশের শাসক হলেন একজন ধর্মযাজক। এই দেশের প্রধান ধর্মযাজক রোমের বিশপ এবং ক্যাথলিক চার্চের প্রধান। এই দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তারা হলেন বিভিন্ন বংশোদ্ভূত ক্যাথলিক ধর্মযাজক।
ভ্যাটিকান সিটি: নাম
ভ্যাটিকান সিটি নাম প্রথম ব্যাবহার করা হয়েছিল ল্যাটারান চুক্তিতে, এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯২৯ সালে। এই শহরের নামকরণ করা হয় ভ্যাটিকান পর্বতের নামানুসারে। ভ্যাটিকান শব্দটির উৎপত্তি এট্রুস্টান বসতির নামানুসারে। রোমানদের কাছে এগার ভ্যাটিকানাস বা ভ্যার্টিকান অঞ্চল নামে পরিচিত পূর্বে ভ্যার্টিকা নামের মানব বসতির অবস্থান ছিল। ইতালীয় ভাষায় ভ্যাটিকান সিটির দাপ্তরিক নাম ‘সিত্তা ডেল ভাটিকানো’ বা ‘স্তাতো দেল্লা সিত্তা ডেল ভ্যাটিকানো’। যার সাধারণ অর্থ ‘ভ্যাটিকান নগর রাষ্ট্র’। এই দেশের লাতিন নাম ‘স্ট্যাটাস সিভিয়াটিস ভ্যার্টিকানো’। এই নামটিই ব্যাবহার করে থাকেন হলি সি, চার্চ এবং পোপ্।
- Read More, আয়তনে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দেশ
- Read More, PPI full form in Bengali – PPI কি?
- Read More, কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স মার্চ ২০২৩
- Read More, শঙ্খ ঘোষ প্রবন্ধ রচনা, Shankha Ghosh Rachana in Bengali
ভ্যাটিকান সিটি: ভূগোল
আয়তনে পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট দেশ ভ্যাটিকান সিটির আয়তন মাত্র ০.৪৪ বর্গকিলোমটার। এটি ইতালির রোম শহরের মধ্যস্থলে প্রাচীর বেষ্টিত একটি এলাকা। এই দেশের অভ্যন্তরে কোন প্রাকৃতিক জলাশয় নেই। দেশটি মূলত একটি ছোট পাহাড়ের উপরে অবস্থিত যার নাম ভ্যাটিকান পাহাড়।
পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্র এই দেশে মাঝেই রয়েছে সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা, সিস্টিন চ্যাপেল, অ্যাপোস্টালিক প্যালেস এবং জাদুঘর। ১৯২৯ সাল পর্যন্ত এটি রোমের একটি উপশহর ছিল, এরপর টাইবার নদী দ্বারা শহরটিকে রোম থেকে আলাদা করা হয়। এই দেশ আজকের এই আকার ধারণ করেছে শুধুমাত্র ল্যাটেরাইট চুক্তির মাধ্যমে। পূর্বের নির্মিত উচ্চ প্রাচীর গুলি কে সীমানা হিসেবে ধরেই ১৯২৯ সালে এই দেশের সীমানা নির্ধারিত হয়। যেদিকে দেয়াল ছিল না সেদিকের ভবন গুলিকেই সীমানা হিসেবে ধরা হয়েছিল। এছাড়াও একটি ক্ষুদ্র অংশে প্রাচীর নির্মাণ করে সীমানা তৈরি করা হয়েছিল।
ইতালির মধ্যবর্তী এই দেশে প্রবেশ করার জন্য কোন পাসপোর্ট এর প্রয়োজন হয় না। পোপের জনসভা, সেন্ট পিটার্স স্কায়ার ও ব্যাসিলিকাগুলি সকলের জন্য উন্মুক্ত। এই জায়গাগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ আয়োজনে যুক্ত হওয়ার আগে আগ্রহীদের টিকিট সংগ্রহ করতে হয়। সিস্টিন চ্যাপেলের সাথে যুক্ত ভ্যাটিকান জাদুঘরে প্রবেশের জন্য মূল্য পরিশোধ করতে হয়। তবে বাগানগুলি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয়, গাইডের তত্ত্বাবধানে বাগানে ভ্রমণের অনুমতি রয়েছে। এগুলি ছাড়া বাকি অংশ কাজের সূত্রই প্রবেশের অনুমতি আছে।
ভ্যাটিকান সিটি: গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
২০১৯ সালে অনুযায়ী এই শহরে জনসংখ্যা ছিল ৮২৫ জন, যার মধ্যে ৪৫৩ জন অধিবাসী এবং ৩৭২ জন ভ্যাটিকান নাগরিক। এই দেশের কোন সরকারি ভাষা নেই, তবে ইতালীয় ভাষায় সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা। রোমান ক্যাথলিক গির্জার দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে লাতিন ভাষার বিশেষ মর্যাদা রয়েছে এখানে।
এখানকার নাগরিকত্ব জন্ম সূত্রে বা পৈতৃক সূত্রে দেওয়া হলেও কেবল হোলি সি এর নিয়োগ কৃত কর্মকর্তাদের জন্যেই নাগরিকত্ব সীমাবদ্ধ। সাধারণত কর্মক্ষেত্রে নিয়োগের পরই কাউকে নাগরিকত্ব দেয়া হয় এবং নাগরিকের স্ত্রী এবং সন্তানদেরও নাগরিকত্ব দেয়া হয় এই দেশের অধীনে। তবে এখানে একটি শর্ত আছে, যেটি হল তাদেরকেও একসাথে শহরে বসবাস করতে হবে। অনেকেই আবার ভ্যাটিকান সিটিতে বসবাসের অনুমতি দেওয়া হলেও নাগরিকত্ব দেওয়া হয় না। যদি কেউ ভাটিকান সিটির নাগরিকত্ব হারায় বা অন্য কোন কারণে নাগরিকত্ব গ্রহণ না করে সে ক্ষেত্রে ল্যাটেরান চুক্তি অনুযায়ী তিনি ইতালীয় নাগরিক হিসেবে গণ্য হবেন।
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া ও অন্যান্য