বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১০টি দেশ ২০২৩: বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১০টি দেশ গুলির তালিকায় আমেরিকা, কাতার, নরওয়ে-এর মত দেশগুলি থাকলেও পৃথিবীতে এমন এক ছোট দেশ আছে যে দেশগুলো এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে। একটি দেশের অর্থনীতি নির্ভর করে সেই দেশের জনপ্রতি গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট বা GDP-এর উপর। দেশের সঠিক সম্পদ বন্টনের তথ্য পাওয়া যায় GDP থেকে। পৃথিবীতে সবচেয়ে ধনী দেশগুলির তালিকায় শীর্ষে থাকার জন্য কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করা খুবই প্রয়োজন, যেমন সেই দেশের মূল্য কাঠামো, ব্যক্তি প্রতি আয় ইত্যাদি। একটি ধনী দেশে একটি ছোট অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া করার জন্য প্রতি মাসে কয়েকশো ডলারেরও বেশি খরচ হতে পারে আবার অন্যদিকে একটি দরিদ্র দেশে কয়েকশো ডলারে সম্পূর্ণ বাড়ি কিনে নিতে পারেন আপনি।
চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক বিশ্বের মাথাপিছু জিডিপি অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১০টি দেশ কোনগুলি-
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১০টি দেশ ২০২৩
১. লুক্সেমবার্গ (মাথাপিছু জিডিপি – ১৪১,৫৯০)
২. সিঙ্গাপুর (মাথাপিছু জিডিপি – ১৩১,৪৩০)
৩. আয়ারলান্ড (মাথাপিছু জিডিপি – ১৩১,০৩০)
৪. কাতার (মাথাপিছু জিডিপি – ১১৩,৬৭০)
৫. সুইজারল্যান্ড (মাথাপিছু জিডিপি – ৮৪,৪৭০)
৬. নরওয়ে (মাথাপিছু জিডিপি – ৭৮,১৩০)
৭. ইউনাইটেড আরব এমিরেটস (মাথাপিছু জিডিপি – ৭৭,২৭০)
৮. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (মাথাপিছু জিডিপি – ৭৫,১৮০)
৯. ব্রুনেই দারুসসালাম (মাথাপিছু জিডিপি – ৭৪,২০০)
১০. সান মারিনো (মাথাপিছু জিডিপি – ৭২,০৭০)
১. লুক্সেমবার্গ (মাথাপিছু জিডিপি – ১৪১,৫৯০):

পশ্চিম ইউরোপের একটি ছোট দেশ লুক্সেমবার্গ রয়েছে এই তালিকার একদম শীর্ষে। এই দেশটি বেলজিয়াম, জার্মানি এবং ফ্রান্সের সাথে তার সীমানা ভাগ করে নেয়। লাক্সেমবার্গীশ এদেশের জাতীয় ভাষা। ইউরোপের ক্ষুদ্রতম দেশ গুলির মধ্যে একটি এই দেশ, মাথাপিছু জিডিপি সহ বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দেশ এটি। এই দেশে অত্যন্ত দক্ষ এবং শিক্ষিত কর্মী বাহিনী রয়েছে, অর্ধেকেরও বেশি জনসংখ্যার মানুষ এখানে স্নাতক ডিগ্রী বা তার বেশি পড়াশোনা করেছেন। এটি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১০টি দেশ এর মোদ্ধে প্রথম।
২. সিঙ্গাপুর (মাথাপিছু জিডিপি – ১৩১,৪৩০):

আইএমএফ (IMF) অনুযায়ী সিঙ্গাপুর পৃথিবীর দ্বিতীয় ধনী দেশ। সিঙ্গাপুরের অত্যন্ত উন্নত মুক্ত বাজার অর্থনীতি, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ এবং নিম্ন স্তরের দুর্নীতির কারণে এই দেশের জিডিপি অন্যান্য দেশগুলোকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। ১৯৬৫ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে কর প্রণোদনার স্মার্ট নীতি গুলি ব্যবহার করে বিদেশী বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করতে এবং প্রবৃদ্ধি বাড়াতে কঠোর পরিশ্রম করে দেশের শক্তিশালী আর্থিক সম্পদ গঠনে সক্ষম হয়েছে এই দেশ। এই দেশ বাণিজ্য ও ভ্রমণের জন্য প্রধান কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে। এই দেশের বন্দর বিশ্বের অন্যতম এবং ব্যস্ততম বন্দর যা প্রতি বছর বিলিয়ন ডলার মূল্যের বাণিজ্য পরিচালনা করে। এছাড়াও এই দেশের উচ্চশিক্ষিত বাসিন্দা, যার মধ্যে ২৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী সিঙ্গাপুরবাসীদের তিন চতুর্থাংশ অত্যন্ত উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত।
৩. আয়ারলান্ড (মাথাপিছু জিডিপি – ১৩১,০৩০):

আয়ারল্যান্ড বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১০টি দেশ গুলির তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে। বর্তমান সময়ে এই দেশের সরকার শিক্ষার দিক দিয়ে প্রচুর বিনিয়োগ করছে। দেশের উন্নতির কথা মাথায় রেখে উচ্চশিক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিত কর্মী এবং দেশের সার্বিক উন্নতির চেষ্টায় রয়েছে এই দেশ। ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী সকল আইরিসবাসীর দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেছে এবং প্রায় এক চতুর্থাংশের টারশিয়ারি যোগ্যতা রয়েছে। এখানেই শেষ নয়, এই দেশের কম কর্পোরেট করের হার এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নীতি সহ বহুজাতিক কর্পোরেশন যেমন মাইক্রোসফট, ফেসবুক, অ্যাপেল ইত্যাদি বড় বড় কোম্পানি এই দেশের প্রতি বেশি আকৃষ্ট। আয়ারল্যান্ড বিশ্বের অন্যান্য বড় বড় দেশ যেমন EU, United States প্রভৃতি দেশগুলির সাথে শক্তিশালী বাণিজ্য সম্পর্ক তৈরি করেছে। রাসায়নিক, সফটওয়্যার, যন্ত্রপাতি, কৃষি, খাদ্য ও পানীয়, ফার্মাসুটিক্যালস ইত্যাদি দিকগুলিতে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় রপ্তানিকারকদের মধ্যে আয়ারল্যান্ড অন্যতম।
৪. কাতার (মাথাপিছু জিডিপি – ১১৩,৬৭০):

২০২২ সালে ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজক কাতার বিশ্বের চতুর্থ ধনী দেশ। কাতারের মূল সম্পদ এই দেশে থাকা তেল এবং গ্যাসের বিশাল সম্ভার। এই দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের তৃতীয় বৃহত্তম ভান্ডার রয়েছে, শুধু গ্যাস নয় এই দেশ তেল উৎপাদনকারী দেশ গুলির মধ্যেও প্রধান। কাতার বিশ্বের বিভিন্ন দেশ গুলিতে তেল ও গ্যাস রপ্তানি করে থাকে, যা এই দেশের মোট সম্পদের প্রধান উৎস। এছাড়াও এই দেশের সরকার সেখানকার বাসিন্দাদের জন্য উচ্চ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রতি প্রচুর বিনিয়োগ করে। কাতার সরকার নাগরিকদের জন্য প্রচুর পরিমাণ ভর্তুকি ও সুবিধা প্রদান করে থাকে। অন্যান্য দেশগুলো তুলনায় কাতারের জনসংখ্যা অনেক কম যে কারণে এই দেশের সমস্ত সম্পদ কম মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয় যা এই দেশের জিডিপি বেশি থাকার অন্যতম কারণ।
৫. সুইজারল্যান্ড (মাথাপিছু জিডিপি – ৮৪,৪৭০):

সুইজারল্যান্ড বিখ্যাত এখানকার মনোরম পাহাড়ি গ্রাম, সুস্বাদু চকলেট এর জন্য। তবে এটি বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশগুলির মধ্যেও পড়ে। মাথাপিছু জিডিপি এর তালিকা অনুযায়ী এই দেশ পঞ্চম স্থানে রয়েছে। এই দেশের অর্থনীতি অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। অর্থ, ব্যাংকিং, স্বাস্থ্যসেবা এবং উৎপাদনের শক্তি শালী খাত রয়েছে এই দেশের নামে। এই দেশের আলপাইন জাতির রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং নিরপেক্ষতার একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।
আরো পড়ুন – বিশ্বের সেরা ১০০ ধনী ব্যক্তি ২০২৩
আরো পড়ুন – পৃথিবীর সেরা 10 ধনী ক্রিকেটার 2023
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১০টি দেশ ২০২৩
৬. নরওয়ে (মাথাপিছু জিডিপি – ৭৮,১৩০):

বিশ্বের দশটি ধনী দেশ এর তালিকায় নরওয়ে রয়েছে ষষ্ঠ স্থানে। এই দেশের উল্লেখযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ এই দেশকে এই স্থানে নিয়ে এসেছে। এই দেশের নর্দান লাইটস স্ক্যান্ডিনেভিয়ান হেভিওয়েট এর fjords, পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহত্তম তহবিল তৈরিতে এই দেশকে সাহায্য করে। এই তহবিলের অর্থের সংখ্যা ১.২ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলার। দেশের আর্থিক সম্পদ বেশি হওয়ার কারণে নরওয়ে সরকার নাগরিকদের জন্য সুস্বাস্থ্য এবং শিক্ষায় প্রচুর বিনিয়োগ করে। এছাড়াও এই দেশের স্থিতিশীল সরকার, শক্তিশালী ব্যবসায়িক পরিবেশ বিদেশি বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তাদের আকৃষ্ট করে যা দেশের অর্থনীতিকে আরো বাড়িয়ে তোলে।
৭. ইউনাইটেড আরব এমিরেটস (মাথাপিছু জিডিপি – ৭৭,২৭০):

এই দেশের অত্যাচার্য মরুভূমি, অতি আধুনিক স্কাইলাইন দেশটিকে সর্বদা বিশ্বের বিভিন্ন দিকের মানুষকে আকর্ষণ করে। এই ছোট্ট মরুভূমি ঘেরা দেশটি বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশগুলির মধ্যে একটি। এখানকার জিডিপি বেশি হওয়ার কারণ এই দেশে মজুদ থাকা তেল, এখানকার পর্যটন এবং বৈচিত্রময় অর্থনীতি। ইউনাইটেড আরব এমিরেট কোম্পানি এবং ব্যক্তিদের জন্য অনেক ট্যাক্স সুবিধা প্রদান করে থাকে। যেমন এখানকার নাগরিকদের কোন আয়কর বা কর্পোরেট করে নেই এবং ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর মাত্র ৫ শতাংশ, যে কারণে এখানে ব্যবসা করার জন্য অতিরিক্ত কর প্রদান করতে হয় না। ইউনাইটেড আরব এমিরেটস বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১০টি দেশ এর মোদ্ধে সপ্তম স্থানে রয়েছে।
৮. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (মাথাপিছু জিডিপি – ৭৫,১৮০):

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ হিসেবে গড়ে উঠেছে। এর পর থেকেই এই দেশটি যতদিন গেছে তত শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। যদিও এই দেশের জিডিপি অনেক বেশি তবে মাথাপিছু জিডিপি-এর নিরিখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তালিকায় অনেকটাই নিচে, কারণ এই দেশটি কাতার বা লুক্সেমবার্গেরর মতো দেশগুলি থেকে অনেকটাই বড়। এই দেশের অধিকাংশ সম্পদ আসে প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে যেমন কয়লা, গ্যাস, তেল, কাঠ ইত্যাদি। এই দেশে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত সামরিক বাহিনী, সবচেয়ে উন্নত বিশ্ববিদ্যালয় গুলি।
৯. ব্রুনেই দারুসসালাম (মাথাপিছু জিডিপি – ৭৪,২০০):

এই দেশটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অবস্থিত একটি ছোট দেশ। এই দেশের আয়তন ছোট হওয়া সত্বেও এখানকার প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন তেল, গ্যাস ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে বিশ্বের ধনী দেশগুলির তালিকায় নাম করে নিয়েছে। এখানকার নাগরিকদের উচ্চ বেতন, সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য ও বাসস্থান উভয় সরকার দ্বারা প্রদান করা হয়। যে কারণে এখানকার জীবনযাত্রা অন্যান্য দেশগুলি থেকে অনেক উন্নতমানের।
১০. সান মারিনো (মাথাপিছু জিডিপি – ৭২,০৭০):

এই দেশ একটি ছোট আকারের দেশ। ইতালীয় উপদ্বীপের কাছে অবস্থিত এই দেশটি অর্থনৈতিক দিক থেকে বেশ উন্নত। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্যাংক এই দেশে তাদের ব্যাংক স্থাপন করেছে, যার ফলে আন্তর্জাতিক ব্যবসার ক্ষেত্রে এই দেশটি উচ্চস্থানে বিরাজ করে। অর্থনৈতিক দিক থেকে উন্নতির পিছনে এই দেশ পর্যটনের উপর বেশি জোর দেয়। দেশের সমৃদ্ধশীল পর্যটন শিল্প প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ পর্যটকদের টেনে নিয়ে আসে এই দেশে। অল্প জনসংখ্যার জন্য এই দেশের সরকার নাগরিকদের উন্নত স্বাস্থ্যসেবা, উচ্চশিক্ষা এবং সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা দিতে সক্ষম।