মহালয়া কী? মহালয়ার তর্পণ এর সূচনা রহস্য

মহালয়া কী?: মহালয়া সময়টি ধর্মপ্রাণ হিন্দুদের কাছে একটি উল্লেখযোগ্য সময়। মহালায়া হলো এমন একটি দিন যে দিন ভোরবেলা বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের চন্ডীপাঠ দিয়ে দিন শুরু করেন সকল বাঙালি তথা হিন্দুরা। আর এই দিনেই ভোরবেলা থেকে গঙ্গায় গিয়ে তর্পণ করেন অনেকেই।

বাঙ্গালীদের কাছে এই দিনটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণভাবেই দুর্গাপূজার সাতদিন আগে যে অমাবস্যা পড়ে সেদিন থেকেই দুর্গাপূজার সূচনা হিসেবে ধরা হয়। এই সময় থেকেই বাংলা তথা সারা ভারতবর্ষে দুর্গাপূজার সূচনায় মেতে ওঠে সকলে।

এই দুর্গাপূজা শরৎকালে হয়ে থাকে। তবে প্রাচীনকালে প্রথমে এই পূজা বসন্তকালে রাজা সুরৎ চালু করেছিলেন। তাই এই দেবীর আরেক নাম বাসন্তী। তবে পরবর্তী সময়ে রামচন্দ্র রাবণকে বধ করার জন্য আশ্বিন মাসে দেবীর পূজা করেন বা অকাল বোধন করেন আর এই পূজাটিই বর্তমানে প্রচলিত।

আরো পড়ুন- মোনালিসার ছবির অজানা রহস্য  

মহালয়া কী, মহালয়ার তর্পণ এর সূচনা রহস্য

তবে মহালয়ার দিন এই দুর্গাপূজার সূচনার সাথে সাথে রয়েছে তর্পণ বিধির প্রচলন। তর্পণ বিধি যার মাধ্যমে বংশধরেরা তাদের পূর্বপুরুষদের আত্মিক ক্ষুধা নিবারন করার জন্য বিভিন্ন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জল ও পিন্ডদান করেন।

পিতৃপক্ষের শেষ এবং দেবীপক্ষের শুরুর সময়ের সন্ধিক্ষণকেই সাধারণভাবে মহালায়া বলা হয়ে থাকে। আর এই পিতৃপক্ষের শেষ অমাবস্যায় করা হয় তর্পণ। এই তর্পণ কিভাবে সূচনা হলো এর পেছনে রয়েছে মহাভারতের এক বিশেষ ঘটনার বিবরণ।

মহাভারতে উল্লেখ আছে যে যখন দাতাকর্ণ মৃত্যুর পর সর্গে উপস্থিত হলেন তখন তাকে খাদ্য হিসাবে স্বর্ণ এবং নানা রকম রত্ন দেওয়া হয়। এই ঘটনায় দাতাকর্ণ বিস্মিত হন। দেবরাজ ইন্দ্র তখন কর্ন্ব কে জানান সারা জীবন ধরে কর্ণ যে সকল দান-ধ্যান করেছেন তা স্বর্ণ এবং নানা রকমের রত্ন। পিতৃ পুরুষের উদ্দেশ্যে এবং কাউকে কোন রকম খাদ্য তিনি কনোদিন প্রদান করেননি।

দেবরাজ ইন্দ্রের এই কথায় দাতাকর্ণ লজ্জিত অনুতপ্ত হলেন। তিনি অনুতপ্ত হওয়ায় দেবরাজ ইন্দ্র তাকে ১৫ দিনের জন্য তার পিতৃপুরুষদের জল এবং পিন্ডদান করার সুযোগ করে দিয়ে মর্তলোকে পাঠান। আর তার তর্পণ করার এই ১৫ দিন পিতৃপক্ষ নামে পরিচিত। এই পনেরো দিন হলো আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষ এবং এর শেষ দিন হল অমাবস্যা।

মহালয়া কী|মহালয়ার তর্পণ এর সূচনা রহস্য: শাস্ত্রকারগণ বলেন এই অমাবস্যাতেই পিতৃপুরুষদের আত্মা স্বর্গলোক থেকে মর্তে নেমে আসেন। আর সেই পিতৃপুরুষদের বংশধরেরা তর্পণ করে। এই বিশেষ দিনে পিতৃপুরুষদের আত্মারা স্বর্গ থেকে নেমে আসে। আর সেই আত্মাদের সমাবেশকে মহালয় বলা হয়। মহান এই আলোয় পিতৃপুরুষদের আগমনে যে তর্পণ অনুষ্ঠান পালন করা হয় তাই হল মহালায়া।

প্রাচীনকাল থেকেই হিন্দু তথা অন্যান্য ধর্মের মানুষেরা তাদের পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে জল দান করতো এবং শ্রদ্ধা জানাতো। আর এরকম প্রথা আজও চালু আছে। শ্রী রামচন্দ্র দ্বারা পূজিত এই সময়ে অর্থাৎ আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষ কে বলা হয় দেবীপক্ষ। আশ্বিন মাসে কৃষ্ণপক্ষ অর্থাৎ পিতৃপক্ষ এবং শুক্লপক্ষ অর্থাৎ দেবীপক্ষের এই সন্ধিকালের সময়টি ধর্মপ্রাণ হিন্দুদের কাছে বিশেষ একটি ধর্মীয় দিন। আর এই ধর্মীয় দিনটি হলো মহালায়া।

হিন্দু অথবা বাঙালিদের কাছে ধর্ম-কর্মের এই বিশেষ দিনটি সত্যিই অনেক আনন্দের। এই সময়ে হিন্দুরা মেতে ওঠেন দুর্গাপূজার আনন্দে।

“মহালয়া কী? মহালয়ার তর্পণ এর সূচনা রহস্য”-এ 3-টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন