স্বামী বিবেকানন্দের জীবনী রচনা

স্বামী বিবেকানন্দের জীবনী রচনা, Swami Vivekananda Essay in Bengali: ভূমিকা- স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন একজন মহামানব। বর্তমান যুগে সকল ভারতবাসীর আদর্শ তিনি। মহান এই সন্ন্যাসীর চিন্তা ধারা আজ সারা দেশের মানুষকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে। তিনি ছিলেন ঊনবিংশ শতকের নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃত। তার ধর্মীয় জ্ঞান ও মানব সেবার চিন্তাধারা আর সারা বিশ্বের কাছে উদাহরণস্বরূপ। বর্তমান যুগে আমাদের সমাজে তার মতো মহান সন্ন্যাসীর খুব প্রয়োজন।

স্বামী বিবেকানন্দ বাংলা রচনা

বিবেকানন্দের শৈশব/বাল্যকাল –

স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম হয় ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে ১২ ই জানুয়ারি। তিনি কলকাতায় শিমুলিয়ার দত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম বিশ্বনাথ দত্ত এবং তার মাতার নাম ভুবনেশ্বরী দেবী। তাঁর পিতা পেশায় আইনজীবী ছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দের আসল নাম নরেন্দ্রনাথ দত্ত। তার ডাকনাম ছিল নরেন ও বিলে। পরবর্তীকালে সন্ন্যাস গ্রহণের পর তার নাম হয় বিবেকানন্দ। সন্ন্যাসীরা তাকে স্বামীজি আখ্যা দিয়েছিলেন।

বিবেকানন্দের শিক্ষাজীবন –

ছাত্র হিসেবে বিবেকানন্দ ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত ও মেধাবী। তিনি মাত্র ১৪ বছর বয়সে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। ১৮৮৪ সালে তিনি বিএ পাস করেন। তিনি স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে স্নাতক উত্তীর্ণ হন। এম এ পড়া চলাকালীন তাঁর দেখা হয় শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের সাথে। এখান থেকে তার জীবন বদলে যায়। সে সময় তার পিতার হঠাৎ মৃত্যুর কারণে, তার ওপর সাংসারিক দায় এসে পড়ে, তাই তার বেশি দূর পড়াশোনা করা সম্ভব হয়নি।

স্বামী বিবেকানন্দের জীবনী রচনা, স্বামী বিবেকানন্দ বাংলা রচনা, swami vivekananda essay in bengali

স্বামী বিবেকানন্দের কর্মজীবন/ অবদান –

স্বামী বিবেকানন্দ তার ছোটবেলা থেকে আধ্যাত্মবাদের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে স্বামীজীর দেখা হয় শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের সঙ্গে। শ্রীরামকৃষ্ণ দেবের আধ্যাত্মবাদের প্রতি তিনি অত্যন্ত আকৃষ্ট হন। পরবর্তীকালে তিনি রামকৃষ্ণ দেব কে নিজের গুরু হিসেবে গ্রহণ করেন। স্বামী বিবেকানন্দ শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের কাছে থেকে মানবসেবা ও আধ্যাত্মবাদের দীক্ষা লাভ করেন।

পরবর্তীকালে স্বামীজি সেই আদর্শ ও চিন্তাধারা সারা বিশ্বের দরবারে এনে হাজির করেন। যা আজও বহু মানুষকে পথ দেখায়। ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে সারদা দেবীর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে তিনি শিকাগো ধর্ম মহা সভায় যোগ দেন। পরবর্তীকালে তিনি রামকৃষ্ণ মিশন, বেলুড় মঠ প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া তিনি ব্রহ্মচর্যাশ্রম, রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম, রামকৃষ্ণ পাঠশালাও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি ভারতের দর্শন ও সংস্কৃতিকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছিলেন। তিনি নতুন মানবতাবোধ ও জাতীয়তাবোধে সারা ভারতকে উদ্বুদ্ধ করেছেন।

আরো পড়ুন, Bangla namta 1 to 100, বাংলা নামতা PDF

বিবেকানন্দের সাহিত্যে অবদান –

অধ্যাত্মবাদ ও দর্শনের পাশাপাশি সাহিত্যও তার যথেষ্ট অবদান রয়েছে। ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় স্বামীজি বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ গুলি হল – প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য, ভাববার কথা, বর্তমান ভারত  ইত্যাদি।

উপসংহার –

১৯০২ সালে ৪ঠা জুলাই এই মহামানবের জীবনাবাসন হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৩৯ বছর। তিনি চলে গেলেও সমাজে তার অবদান স্বমহিমায় উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে।

স্বামী বিবেকানন্দের জীবনী রচনা, Swami Vivekananda Essay in Bengali

স্বামী বিবেকানন্দ সংক্ষিপ্ত রচনা

  • স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন একজন মহামানব।
  • তিনি ছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ।
  • তাঁর জন্ম হয় ১৮৬৩ সালের ১২ ই জানুয়ারি।
  • তিনি কলকাতার শিমুলিয়ার দত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
  • তাঁর পিতার নাম বিশ্বনাথ দত্ত ও মাতা ছিলেন ভুবনেশ্বরী দেবী।
  • তাঁর পিতা পেশায় একজন আইনজীবী ছিলেন।
  • ছাত্র হিসেবে বিবেকানন্দ অসম্ভব বুদ্ধিদীপ্ত ও মেধাবী ছিলেন।
  • স্বামী বিবেকানন্দের আসল নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ দত্ত।
  • তিনি বিলে নামেও পরিচিত ছিলেন।
  • তিনি ছিলেন রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের প্রিয় শিষ্য।
  • তিনি রামকৃষ্ণ মিশন ও বেলুড় মঠ প্রতিষ্ঠা করেন।
  • তিনি বেনারেস ব্রহ্মচর্যাশ্রম ও রামকৃষ্ণ পাঠশালা রামকৃষ্ণ হোম রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন।
  • ১৮৮৪ সালে তিনি বি এ পাশ করেন।
  • তার বাণী ও উক্তি আজ মানব সমাজের কাছে পাথেও ।
  • ১৯০২ সালে মহামানব স্বামী বিবেকানন্দের জীবনাবসান হয়।

স্বামী বিবেকানন্দের জীবনী রচনা, স্বামী বিবেকানন্দের জীবনী PDF download- Click Hear

স্বামী বিবেকানন্দের বাণী, স্বামী বিবেকানন্দের উক্তি, Swami Vivekananda Quotes in Bengali

স্বামী বিবেকানন্দের বাণী, স্বামী বিবেকানন্দের উক্তি, swami vivekananda quotes in bengali, স্বামী বিবেকানন্দের জীবনী রচনা, স্বামী বিবেকানন্দ বাংলা রচনা, swami vivekananda essay in bengali

“জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর”

“যদি সত্যিই মন থেকে কিছু করতে চাও তাহলে পথ পাবে, আর যদি না চাও তাহলে অজুহাত পাবে”

“ওঠো জাগো এবং লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত থেমো না”

“বিশ্ব একটি ব্যায়ামাগার যেখানে আমরা নিজেদেরকে শক্তিশালী করতে এসেছি”

“কারো জন্য অপেক্ষা করো না যা তুমি করতে পারো তা দিয়েই শুরু করো”

স্বামী বিবেকানন্দের বাণী

“এমন কাজ করে চলো যে তুমি হাসতে হাসতে মরবে আর জগৎ তোমার জন্য কাঁদবে”

“ইচ্ছাশক্তি জগৎকে পরিচালিত করে থাকে”

“যারা তোমাকে সাহায্য করেছে, তাদের কখনও ভুলে যেও না। যারা তোমাকে ভালোবাসে, তাদের কখনও ঘৃণা কোরো না। যারা তোমাকে বিশ্বাস করে, তাদের কখনও ঠকিয়ো না”

“শুধু বড়ো লোক হয়ো না…বড় মানুষ হও”

“একটি লক্ষ্য গ্রহন কর এবং সেই লক্ষ্যের উপর নিজের ধ্যান-জ্ঞান চিন্তা ধারাকে উৎসর্গ কর”


“নিজের ওপর বিশ্বাস রাখো তোমার দ্বারাই সব সম্ভব জগতে এমন কিছু নেই যা তুমি পারবে না। এই সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যাও তুমি সাফল্য পাবেই”

“আমি বিশ্বাস করি যে কেউ কিছু পাওয়ার উপযুক্ত হলে জগতের কোন শক্তিই তাকে বঞ্চিত করতে পারে না”

“মনের শক্তি সূর্যের কিরণের মত, যখন এটি এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত হয় তখনই এটি চকচক করে ওঠে”

“যে সমস্ত জ্ঞান তােমায় শক্তিশালী মজবুত করে তাকে গ্রহণ করাে এবং যে বিচার ও জ্ঞান তােমায় দুর্বল করে দেয় তাকে দূর করা দরকার”

“দুনিয়া আপনার সম্বন্ধে কি ভাবছে সেটা তাদের ভাবতে দিন। আপনি আপনার লক্ষ্যগুলিতে দৃঢ় থাকুন, দুনিয়া আপনার একদিন পায়ের সম্মুখে হবে”

স্বামী বিবেকানন্দের বাণী, স্বামী বিবেকানন্দের জীবনী রচনা

“যদি কোনদিন আপনার চলার পথে কোনো সমস্যা না আসে, তাহলে আপনি নিশ্চিত হতে পারেন যে আপনি ভুল পথে হাটছেন”

“যে মানুষ বলে তার আর শেখার কিছু নেই, সে আসলে মরতে বসেছে। যত দিন বেঁচে আছো শিখতে থাকো”

“একদিনে বা একবছরে সফলতার আশা করো না, সবসময় শ্রেষ্ঠ আদর্শকে ধরে রাখাে”

“নিজের উপর বিশ্বাস না এলে, ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস আসে না”

“ভয় ও অপূর্ণ ইচ্ছাই আমাদের দুঃখের প্রধান কারণ”


“নিজের জীবনে ঝুঁকি নিন, যদি আপনি জেতেন তাহলে নেতৃত্ব করবেন, আর যদি হারেন তাহলে আপনি অন্যদের সঠিক পথ দেখাতে পারবেন”

“চালাকির দ্বারা কোনো মহৎ কর্ম হয় না”

“কোনো বড় কাজই কঠোর পরিশ্রম ও কষ্ট স্বীকার ছাড়া হয়নি”

“সমাজ অপরাধীদের কারণে খারাপ হয়না বরং ভালো মানুষদের নীরবতার কারণে হয়”

“সত্যের জন্য সব কিছুকে ত্যাগ করা চলে, কিন্তু কোনো কিছুর জন্য সত্যকে ত্যাগ করা চলে না”

স্বামী বিবেকানন্দের উক্তি

“গোলামীর উপর যে সম্পর্কটা দাঁড়িয়ে আছে, সেটা আবার কখনও ভালো হতে পারে? যেখানে মেয়েদের স্বাধীনতা নেই, সে জাত কখনো উন্নতি করতে পারে না”

“শক্তিই জীবন, দুর্বলতাই মৃত্যু, বিস্তারই জীবন, সংকোচনই মৃত্যু, প্রেমই জীবন, ঘৃণাই মৃত্যু”

“ধর্ম এমন একটি ভাব, যাহা পশুকে মনুষ্যত্বে ও মানুষকে দেবত্বে উন্নীত করে”

“প্রবিত্র ও নিঃস্বার্থ হতে চেষ্টা কোরো, তার মধ্যেই রয়েছে সমস্ত ধর্ম”

“যত বেশি আমরা বাইরে গিয়ে অন্যদের ভালো করবো, আমাদের হৃদয় ততই বিশুদ্ধ হবে এবং ভগবান সেখানে বাস করবেন”

Swami Vivekananda Quotes in Bengali

স্বামী বিবেকানন্দের বাণী PDF, স্বামী বিবেকানন্দের উক্তি PDF, Swami Vivekananda Quotes in Bengali PDF- Click Here

এই ধরনের শিক্ষামূলক নিবন্ধ আমাদের ওয়েবসাইটে সব সময় লেখা হয়ে থাকে। আমাদের ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ, টুইটার পেজ, ইন্সটাগ্রাম ইত্যাদি প্লাটফর্মে ফলো করতে পারেন। ধন্যবাদ।

Q&A: স্বামী বিবেকানন্দের জীবনী বাংলা রচনা

স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম কত সালে?

  • স্বামী বিবেকানন্দ জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৮৬৩ সালের ১২ জানুয়ারি।

স্বামী বিবেকানন্দের জন্মস্থান কোথায়?

  • স্বামী বিবেকানন্দের জন্মস্থান উত্তর কলকাতার, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে।

স্বামী বিবেকানন্দের পিতার নাম কি ছিল?

  • স্বামী বিবেকানন্দের পিতার নাম ছিল বিশ্বনাথ দত্ত।

স্বামী বিবেকানন্দের মাতার নাম কি ছিল?

  • স্বামী বিবেকানন্দের মাতার নাম ছিল ভুবনেশ্বরী দেবী।

স্বামী বিবেকানন্দের সম্পূর্ণ নাম বা পুরো নাম কি ছিল?

  • স্বামী বিবেকানন্দের সম্পূর্ণ নাম হলো নরেন্দ্রনাথ দত্ত।

স্বামী বিবেকানন্দের মৃত্যু দিন কবে?

  • স্বামী বিবেকানন্দের মৃত্যু দিন ৪ জুলাই, ১৯০২ সালে।

“স্বামী বিবেকানন্দের জীবনী রচনা”-এ 1-টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন