ভারতীয় যুদ্ধকলা। মার্শাল আর্টের ইতিহাস

ভারতীয় যুদ্ধকলা, মার্শাল আর্টের ইতিহাস: বহু প্রাচীনকাল থেকেই পশু ও আদিম মানুষেরা নিজের খাদ্য ও বাসস্থানের জন্য লড়াই করে আসছে। পশুদের মত মানুষও নানা কৌশলে অধিকারের জন্য লড়াই করতো। তারা সেই সময় প্রতিদ্বন্দ্বীকে যুদ্ধে হারানোর জন্য হাত এবং পায়ের ব্যবহার করত। কিন্তু বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টেছে সেই লড়াইয়ের কৌশল। প্রথম লাঠি ও পাথর ব্যবহার হত। ধীরে ধীরে সে গুলি থেকে নানারকম হাতিয়ারও অস্ত্রশস্ত্র তৈরির মাধ্যমে লড়াই চলতে থাকে।

তবে সময়ের সাথে সাথে মানুষের মধ্যে এসেছে শান্তি, সাবধানতা, পর দরদী মনোভাব এবং অনুশাসন। তবে মনুষত্ববোধ থাকলেও এখনও মানুষের মধ্যে লড়াই যুদ্ধ বিদ্যমান। আর প্রাচীনকাল থেকে লড়াই এর পদ্ধতিকে উন্নত করতে এবং আত্ম রক্ষার তাগিদে তৈরি হয়েছিল নানা রকম যুদ্ধ কলা বা মার্শাল আর্ট এমনটাই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

আর যুদ্ধ কলার নাম শুনলেই প্রথমে মনে আসে যার কথা তাহলে কুমফু ক্যারাটে ইত্যাদি। যার বহু প্রচলিত অভ্যাস চীন এবং জাপান করছে বলে সকলেই মনে করে। তবে সকলের মনেই একটা প্রশ্ন রয়েছে যে কীরকম ছিল এই চীন-জাপান তথা আরো অন্যান্য দেশের যুদ্ধ কৌশল বা মার্শাল আর্ট এর সূচনা।

অনেকেই মনে করেন কোনো চীনদেশীয় ব্যক্তি তৈরি করেছিল এই যুদ্ধ কৌশল। আবার কেউ কেউ মনে করে গৌতম বুদ্ধ প্রথম এনেছিল এই যুদ্ধ কলাবিদ্যা। তবে বৌদ্ধধর্মে বর্তমান সময়ে এই মার্শাল আর্টের প্রচুর ব্যবহার ও অভ্যাস থাকলেও এই যুদ্ধ কলা এসেছিল ভারত তথা হিন্দু ধর্ম থেকেই।

ভারতীয় যুদ্ধকলা, মার্শাল আর্টের ইতিহাস

একজন ভারতীয়র সাহায্যেই আজ গোটা বিশ্বে এই মার্শাল আর্ট বা আত্মরক্ষা কৌশল ছড়াতে সক্ষম হয়েছে। তিনি ছিলেন প্রাচীন ভারতের দক্ষিণের একজন রাজা। তার নাম “বোধি ধর্মা”। রাজা হওয়া সত্ত্বেও তিনি ছিলেন যুদ্ধ কলা বা মার্শাল আর্টে পারদর্শী। তিনি অত্যন্ত কঠোর ভাবে এই মার্শাল আর্টের অভ্যাস করতেন। মার্শাল আর্টের সঙ্গে সঙ্গে তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞও।

তিনি নিজের রাজ্য রাজধানীতে বসে না থেকে তার এই সমস্ত গুন দ্বারা বিশ্বের নানা জায়গার মানুষের সেবা করতে চেয়েছিলেন। বেশ কিছু দ্বীপ ও দেশ ভ্রমণের পর তিনি চীনদেশে পৌঁছান। যেখানে তিনি অনেক দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের দেখতে পান। প্রথমে তাদের তিনি চিকিৎসা করেন এবং তারপর তিনি তাদের যোগ বিদ্যার সাহায্যে সুস্থ থাকার শিক্ষা দেন। এর পরবর্তী সময়ে তিনি সেখানে শাওলিন টেম্পল এর স্থাপন করেন এবং সেখানকার সন্ন্যাসীদের নানাপ্রকার মার্শাল আর্ট বা যুদ্ধকলা শেখান।

আরও পড়ুন- মহাভারতের অশ্বত্থামা কে নিজের চোখে দেখার দাবি করছেন অনেকে

এরপর থেকে সেই শাওলিন টেম্পল সারাবিশ্বে প্রসিদ্ধ হয়। মানুষ চীনকে এই মার্শাল আর্টের সৃষ্টিকারী মনে করে। কিন্তু আসলে তিনি একজন হিন্দু ছিলেন যিনি ভারত থেকেই এই যুদ্ধ কলা চীনে নিয়ে যান। তিনি শাওলিন সন্নাসীদের ১৮ রকমের হস্ত যুদ্ধকলা শেখান।

ভারতে আজও মার্শাল আর্টের অভ্যাস করা হয়। সবচেয়ে গৌরব শালী এই মার্শাল আর্ট কালারিপায়াত্তু নামে পরিচিত। এগুলি দক্ষিণ ভারতের কেরালা তথা তামিলনাড়ুতে অভ্যাস করা হয় ও শেখানো হয়। আর এই কালারিপায়াত্তুর একটি অংশই বোধি ধর্মা সাবলিল সন্যাসীদের শিখিয়েছিলেন। ভারতবর্ষে হাজার হাজার বছর ধরে এই মার্শাল আর্ট বা যুদ্ধ কলাবিদ্যার চর্চা করা হত। স্বাধীনতার পূর্বে ব্রিটিশ সরকার এই ধরনের মার্শাল আর্ট এর উপর চর্চা করা বন্ধ করে দিয়েছিল এবং যারা এই চর্চা চালিয়ে যেত তাদেরকে জেল বন্দি করা হতো। কবে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আবার এই মার্শাল আর্ট বা যুদ্ধ কলাবিদ্যার শীক্ষা এবং চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে।

ভারতীয় যুদ্ধকলা| মার্শাল আর্টের ইতিহাস

তবে যদি মনে করা হয় বোধি ধর্মা ছিলেন এই মার্শাল আর্টের উদভাবক তাহলে ভুল করা হবে। কারণ ভারতীয় নানা পুরাণে এইরকম যুদ্ধকালের নিদর্শন পাওয়া যায়। হিন্দু পুরাণ অনুসারে ভগবান শিব হলেন যুদ্ধের দেবতা। আর এই সমস্ত যুদ্ধকলা তারই সৃষ্টি। এগুলি শুধু আত্মরক্ষার জন্য নয় বিপদকালে যুদ্ধের জন্য, শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য, এবং মন ও শরীর কে কঠিন চর্চার মাধ্যমে সুস্থ রাখার জন্যও।

ভারতীয় যুদ্ধকলা, মার্শাল আর্টের ইতিহাস: ঋষি জামদগ্নের পুত্র পরশুরাম কঠিন তপস্যার মাধ্যমে ভগবান শিব কে প্রসন্ন করেন এবং আশীর্বাদস্বরূপ ভগবান শিব তাকে এই সমস্ত যুদ্ধকলা শেখান। পরশুরামকে তিনি একটি পরশু প্রদান করেন। তিনি আগে রাম নামে পরিচিত ছিলেন। পরশু নামক অস্ত্র ধারন করায় তার নাম হয় পরশুরাম। পরশুরাম ছিলেন ভগবান বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার। আর তিনি সেই ব্যক্তি যিনি ভারতবর্ষে অন্যান্য ঋষীদের কে এই যুদ্ধবিদ্যা শেখান। আর কালারিপায়াত্তু এর শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। তবে ভারতের অন্যান্য স্থানেও নানারকম যুদ্ধ কলাবিদ্যার অভ্যাস আজও করা হয়। তবে এতে কখনোই লড়াই এর কথা বলা হয় না। এগুলো বর্তমানে খেলা হিসেবে প্রস্তুত করা হয়। এই মার্শাল আর্ট শুধু আর্ট নয় এটি জীবন শৈলী।

মন্তব্য করুন