পৃথিবীর ১২ টি প্রাকৃতিক রহস্যজনক স্থান

পৃথিবীর ১২ টি প্রাকৃতিক রহস্যজনক স্থান
পৃথিবীর ১২ টি প্রাকৃতিক রহস্যজনক স্থান: আজকে আমরা এই নিবন্ধে পৃথিবীর ১২ টি প্রাকৃতিকভাবে তৈরি কিছু রহস্যজনক স্থান সম্পর্কে আলোচনা করব, যেগুলি নিচে দেয়া হল,

পৃথিবীর প্রাকৃতিক রহস্যজনক স্থান

১. আরোরা:-

আন্টার্টিকার বিভিন্ন অঞ্চলে পরিষ্কার আকাশে যে আলোর নিত্য দেখা যায় তাকেই আরোরা বলা হয়।সাধারণত এটি দেখা যাওয়ার কারণ হল সূর্য থেকে নির্গত ইলেকট্রিক চার্জ মাটিতে ধাক্কা খাওয়ার ফলে এই রকম আলোক রশ্মির সৃষ্টি হয়।

২. সান ডপ:-

যখন আকাশে একটি নয় পর পর ৩ টি সূর্য দেখা যায় তখন তাকে সান ডপ বলা হয়। সাধারণত এটি সূর্যের আলোর বলয় দু’পাশে দুটি সূর্য দেখা যায়। শীতের সময় এটি বেশি দেখা যায়। যখন সূর্যের আলো আবহাওয়ার মধ্যে মিশে থাকা বরফ কনার মধ্যে দিয়ে যায় তখন এই রকম সৃষ্টি হয়।  

৩. পামুক্কলে লেক:- 

ইউরোপ মহাদেশের দক্ষিণ পূর্ব দিকে অবস্থিত টার্কি দেশে এই পামুক্কলে লেক রয়েছে। এই লেক টি গরম জলের লেক হিসাবে বিখ্যাত। পামুক্কলে লেক টি কোন একটি জলাশয় নিয়ে তৈরি হয়। বিভিন্ন ছোট ছোট জলাশয় নিয়ে তৈরি।

ঝর্নার জলের সাহায্যে এই লেক গুলির উৎপত্তি। বিজ্ঞানীরা বলেছেন এখানে ঝর্ণার জলে যে খনিজ পদার্থ আছে তা বাইরের আবহাওয়া সংস্পর্শে এসে ক্যালসিয়াম কার্বনেট এর রূপ নেয়। এভাবে হাজার হাজার বছর ধরে ক্যালসিয়াম কার্বনেট জলাশয়ের ধার গুলিতে জমা হতে হতে লেক বা সরবরের আকার ধারণ করেছে।

এই জলাশয় এর তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি থেকে ১০০ ডিগ্রি পর্যন্ত দেখা গেছে। জায়গাটি দেশের জনপ্রিয় একটি পর্যটনকেন্দ্র। পর্যটকরা এখানে এসে স্থানের আনন্দ উপভোগ করে। এই জল শরীরের পক্ষে যথেষ্ট উপযোগী বলে মনে করা হয়।

পৃথিবীর প্রাকৃতিক রহস্যজনক স্থান

৪. রেনবো মাউনটেন:-

চীনের গানসু প্রদেশের ঝাংয়ে ড্যান্সিয়া ল্যান্ডফর্ম ভূতাত্ত্বিক উদ্যানে এই রেনবো মাউন্টেন দেখা যায়। এই পাহাড় গুলি এত সুন্দর রং বেরং এর কারণ হলো এর নিচে লুকিয়ে থাকা হাজার হাজার বছরের খনিজ পদার্থ। এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে দূর দূর থেকে বহু পর্যটক এখানে আসে।

৫. পিঙ্ক লেক হিলার:-

পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্রতটের পাশেই এই লেক অবস্থিত। এই লেকের জলের রং গোলাপি হওয়ায় একে পিংকলেক বলা হয়। এর সঠিক কোন ব্যাখ্যা না পাওয়া গেলেও বিজ্ঞানীদের মতে এই জলে অতিসূক্ষ কনা আছে যাদের রং লাল ও কমলা। বহু পর্যটক হেলিকপ্টার নিয়ে আসে এই লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। তবে লেকের কাছে গেলেও আপনি এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন এই লেকে কোন বিষাক্ত পদার্থ নেই

আরো পড়ুন- আশ্চর্য এক সমুদ্র, যেখানে কোনো প্রাণী বা বস্তু ডুবে যায় না

৬. আকিগাহারা জঙ্গল:-

আকিগাহারা জঙ্গল জাপানে অবস্থিত। জঙ্গলটি প্রায় ১৬ বর্গকিলোমিটার বিশ্ৰেট। জাপানের এই জঙ্গল টিকে সুইসাইড ফরেস্ট বা ভুতের জঙ্গলও বলা হয়। কারণ এই জঙ্গলে মানুষের ঝুলন্ত কঙ্কাল, পরিত্যক্ত জামা কাপড় ইত্যাদি দেখতে পাবেন। শোনা যায় এই জঙ্গলে মানুষ শুধুমাত্র মরতে যায়। এই জঙ্গলে একবার যে গেছে সে আর ফিরে আসেনি।

স্থানীয় লোকদের মতে এই জঙ্গলে কোনো এক শয়তান এর বাস রয়েছে। যে জঙ্গলের আশেপাশে আসা কোন ব্যক্তিকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে মেরে ফেলে। এখনো পর্যন্ত প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ জনের মৃত্যুর খবর রয়েছে। এই আকিগাহারা জঙ্গলে এরপর জাপান সরকার জঙ্গলের প্রবেশ পথগুলোতে একটি করে সতর্কবার্তা ঝুলিয়ে দিয়েছে।

৭. আর্থ কুইক লাইট:-

এই লাইট ভূমিকম্পের আগে বা পরে দেখতে পাওয়া যায়। অনেক ভূমিকম্পের আগে বা পরে এই লাইট দেখা গেছে এবং রেকর্ড করা হয়েছে

৮. হেস ডালেন লাইট:-

নরওয়ের হেসডালেন নামক জায়গায় আকাশে একটি আশ্চর্য রকমের লাইট দেখা যায়, এই ধরনের লাইট কে হেস ডালেন লাইট বলা হয়। ১৯৮১ থেকে ১৯৮৪ এর মধ্যে এই ধরনের লাইট প্রতি সপ্তাহে ১৫ থেকে ২০ বার দেখা গিয়েছে কিন্তু বর্তমানে এই লাইট সংখ্যা অনেক কমে দাঁড়িয়েছে বছরে ১৫ থেকে ২০ বার দেখা যায়।

৯. ইস্টার আয়ারল্যান্ড:-

চিলি দেশের একটি দ্বীপ আছে যার নাম ইস্টার আয়ারল্যান্ড। এই দ্বীপ টি বিখ্যাত হবার কারণ হলো এই দ্বীপে প্রায় ৮০০ এর বেশি পাথরের মূর্তি দেখতে পাওয়া যায়। এই দ্বীপ টি চিলি থেকে বিমানে ৫ ঘন্টা যাত্রা করতে হয়। দ্বীপটির আয়তন ৬৪ বর্গমিটার। এই দ্বীপে মানুষের মুখের আকৃতির বিভিন্ন মূর্তি দেখতে পাওয়া যায়। মূর্তিগুলো এতটাই শক্ত যে আপনি হাতুড়ি দিয়ে এটিকে ভাঙতে পারবেন না।

মূর্তিগুলি যথেষ্ট বড় এবং সবচেয়ে বড় যে মূর্তি টি রয়েছে তার উচ্চতা ৩০ ফুট। গবেষণা করে দেখা গেছে যে বহু বছর আগে এখানে একটি উপজাতির বাস ছিল। যারা তাদের পরিজন দের মারা যাবার পর তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তাদের উদ্দেশ্যে এই মূর্তি গুলি তৈরি করেছেন। প্রত্যেকটি মূর্তি শুধুমাত্র গলা থেকে মুখ পর্যন্ত রয়েছে।

পৃথিবীর প্রাকৃতিক রহস্যজনক স্থান

১০. ভলকানিক লাইট:-

আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে আমরা অনেকেই দেখেছে কিন্তু আগ্নেয়গিরিতে বিদ্যুৎ চমকাতে আমরা কজনই বা দেখেছি। আগ্নেয়গিরি লাভা বেরোনোর সময় লাভার সাথে যে গ্যাস বের হয় সেই গ্যাস যখন ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় তখন এরকম ধরনের বিদ্যুতের দেখা যায়।

১১. নাজকা রেখা:-

পেরু দেশে অবস্থিত একটি মরুভূমিতে এই অদ্ভুত নাজকা রেখা দেখা যায়। নাজকা লাইন এক কথায় বলতে গেলে মরুভূমির বুকে বিভিন্ন আকৃতির ছবি। এদের মধ্যে কিছু ছবি আছে পশুপাখির আবার একটি ছবি আছে যা দেখতে এয়ারপোর্টের রানওয়ের মতো।

প্রাচীনকালের বিভিন্ন সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া গেছে যেখানে সেই সময় এর মানুষদের একে যাওয়া ছবির নিদর্শন আছে। কিন্তু দক্ষিণ আমেরিকার এই মরুভূমিতে যে চিত্রগুলি আঁকা হয়েছে তার রূপ যদি আপনাকে দেখতে হয় তবে বিমানে চেপে আপনাকে মরুভূমিতে যেতে হবে।

কারণ প্রত্যেকটি চিত্রলেখা গুলির আয়তন কয়েক কিলোমিটার জুরে রয়েছে। যে এয়ারপোর্ট রানওয়ের কথা বলা হয়েছে সেটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৭০ কিলোমিটার। পেরুর এই মরুভূমির মধ্যে যেখানে হাজার হাজার কিলোমিটার মানুষের কোনো অস্তিত্ব নেই, সেখানে পাথর কেটে এই রেখা কে সৃষ্টি করেছে তা এখনো জানা যায়নি।

বিগত ৯০ বছর ধরে এই নাজকা রেখার রহস্য বিজ্ঞানীরা জানার চেষ্টা করছে। সুইজারল্যান্ডে এক বিজ্ঞানী তার বইতে লিখেছেন যে এই ছবি গুলি পৃথিবীর সৃষ্টি বলে মনে হয় না। তার মতে এটি ভিনগ্রহের প্রাণীদের একটি এয়ারপোর্ট। এই অঞ্চলের উফও (ufo) এর অবতরণ হয় এবং ভিনগ্রহের প্রাণীরা  এই রেখা তৈরি করেছে বলে তিনি লিখেছেন।

১২. সাইলিং স্টোন:-

ক্যালিফোর্নিয়ার রেস্টাক মালায়া জলাভূমির একটি তলদেশ, এই অঞ্চলে ক্ষুদ্র ছোট ছোট পাথর থেকে মাঝারি ধরনের পাথর নিজে নিজে স্থান পরিবর্তন করে মানুষ পশুপাখি কারও হস্তক্ষেপ ছাড়াই। এখনো পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা এর কোন নির্দিষ্ট উত্তর দিতে পারেনি। তবে একদল বিজ্ঞানী গবেষণা চালিয়ে বলেছেন যে ঠান্ডা আবহাওয়া হওয়ার কারণে এই অঞ্চলের বৃষ্টিপাতের পর সারফেসের  উপরে একটি পাতলা বরফের চাদর তৈরি হয় এবং এই অঞ্চলে যথেষ্ট হাওয়া হওয়ার কারণে এই পাথরগুলি স্থান পরিবর্তন করে।

এই ধরনের কৌতুহলপুর্ন রোমাঞ্চকর নিবন্ধের জন্য আমাদের ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ, টুইটার পেজ, ইন্সটাগ্রাম ইত্যাদি প্লাটফর্মে ফলো করতে পারেন। ধন্যবাদ।

Previous articleবিশ্বের প্রথম ভিডিও গেম। আজ থেকে প্রায় ৫০ বছরেরও আগে তৈরী হয়েছিল
Next articleভারতের জাতীয় ছুটির তালিকা 2023
আমরা Extra Gyaan এর সদস্যরা পেশাগতভাবে ব্লগিং এর সঙ্গে যুক্ত। আমরা ইন্টারনেট, প্রযুক্তি, নাসা, মহাকাশের বিভিন্ন তথ্য, শিক্ষাগত দিক ও খেলাধুলার বিষয়ে নিবন্ধ লিখে থাকি সম্পূর্ণ বাংলা ভাষায়। আমাদের উদ্দেশ্য হলো বাংলা ভাষায় আপনাদের সামনে সেরা তথ্য তুলে ধরা।

Leave a Reply