সারেগামাপার ৭টি ধ্বনি বার হয় মন্দিরের স্তম্ভ গুলি থেকে

বহুবিচিত্র পূর্ণ এই ভারতবর্ষের প্রাচীন কালের বহু মন্দির আছে যার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য আছে। তেমনি একটি মন্দির যার বিভিন্ন স্তম্ভ গুলি থেকে সারেগামাপার এর ধ্বনি উৎপন্ন হয়। স্তম্ভ গুলিকে যদি আপনি কোন বস্তু দ্বারা আঘাত করেন তবে এই ঘটনা দেখা যায়।

ভারতবর্ষের কর্ণাটক রাজ্যের হাম্পি শহরের একটি পুরনো যুগের মন্দিরে এই অদ্ভুত ঘটনা দেখা যায়। মন্দিরটি শহরের ঐতিহাসিক স্থাপত্য গুলির মধ্যে জনপ্রিয় একটি ভ্রমণের স্থান। লক্ষ লক্ষ দর্শক প্রতিবছর হাম্পির এই মন্দির টিকে দেখতে আসে।

হাম্পির এই মন্দিরটি ১৫০০ শতকের পূর্বে তৈরি করা হয় স্থানীয় রাজার দ্বারা। স্থাপত্যটি কর্ণাটকের অন্যতম সৌন্দর্য্যপূর্ণ স্থাপত্য গুলির মধ্যে একটি। মন্দিরের শিল্পকলা ও বৈজ্ঞানিক পরিকাঠামো বর্তমান বিজ্ঞানীদের বিস্মিত করেছে।

আরও পড়ুন- চলুন দেখে নেওয়া যাক ভারতের কিছু ধনী মন্দির

মন্দিরটি ভগবান বিষ্ণুর অবতার হিসেবে পরিচিত। ভগবান বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে মন্দিরটি নির্মিত হয়েছে। মন্দিরের শিল্পকলা ও স্থাপত্য তৎকালীন সময়ে শিল্পী ও কারিগরদের শৌখিনতার পরিচয় দেয়। ব্রিটিশরাজ কালে মন্দিরের এই অদ্ভুত স্তম্ভ গুলিকে পরীক্ষা করা হয় এবং তার জন্য তারা দুটি স্তম্ভ ভেঙেও ফেলে।ব্রিটিশ বিজ্ঞানিরা দেখে যে দুটি স্তম্ভরই ভেতরে ফাঁপা রয়েছে। ভাঙা স্তম্ভ গুলি এখনো মন্দিরে রয়েছে।

মন্দিরের পরিকাঠামো :

মন্দিরে মোট ৫৬ টি স্তম্ভ রয়েছে এবং প্রত্যেকটি স্তম্ভ থেকে সংগীতের বিভিন্ন সুর বার হয়। সেই কারণেই এই মন্দির সঙ্গীতময় মন্দির হিসেবে পরিচিত। বর্তমান যুগে এই স্তম্ভ গুলি পরীক্ষা করে জানা গেছে যে মন্দিরের প্রত্যেকটি স্তম্ভ গ্রানাইট, সিলিকেট ধাতু, লোহার পাত ব্যবহৃত হয়েছে। মন্দিরটি যারা গবেষণা করেছে তারা মন্দির তৈরীর এ রকম স্তম্ভ গুলি দেখে বিস্মিত হয়েছে। কারণ এই ধাতু গুলির মিশ্রণে তৈরি কাঠামো বহু যুগ পরে বিজ্ঞানিরা আবিষ্কার করেছে। কিন্তু ১৫০০ শতকে সেই সময়ের কারিগররা যে এই ধরনের কাঠামো তৈরি করতে সক্ষম ছিল, হামপি এর এই মন্দিরটি তার জীবন্ত উদাহরণ।

মন্দিরটির বিবরণ: প্রধান মন্দিরটি ৩টি কক্ষ, একটি বড় হলঘর নিয়ে গঠিত। মন্দিরের প্রত্যেকটি স্তম্ভ সুক্ষ কারুকার্যের দ্বারা সজ্জিত আছে। সম্পূর্ণ কাঠামটি মতো শক্ত ইট ও পাথর দ্বারা নির্মাণ করা হয়েছে। মন্দিরটি তুঙ্গ ভদ্রা নদীর তীরবর্তী এলাকায় তৈরি নদীর একটি সরু নালা মন্দিরের মধ্যে দিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে এবং মন্দিরের বড় হলঘর গুলিতে সেই সময়ের কিছু দেব দেবতার সংগৃহীত ছবি রাখা হয়েছে।

মন্দিরে একটি রথ রয়েছে, রথ টিকে এমন ভাবে বানানো হয়েছে যে রথের বিভিন্ন অংশকে খুলে আপনি অন্য জায়গায় নিয়ে যেতে পারবেন। এই রথ টিকে ভগবান বিষ্ণুর বাহনও বলা হয়। ভারত বর্ষ এবং বিশ্বের কাছে মন্দিরটি হাম্পি শহরের মন্দির হিসাবেই পরিচিত।   প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসে এই মন্দিরটিতে বিরুপাক্ষ ও পম্পার একটি বিবাহ উৎসব করা হয়। এই সময় মন্দিরটিতে যথেষ্ট লোক সমাগম লক্ষ্য করা যায়। এই বিরুপক্ষ মন্দিটি Unesco এর তালিকাভুক্ত করা হয়েছে পৃথিবীর ঐতিহ্যশালি স্থান গুলির মধ্যে।

মন্তব্য করুন