বিহারের ৭০ বছরের বৃদ্ধ ৩০ বছরের কঠোর পরিশ্রমে একাই ৩ কিলোমিটার খাল কাটলেন

মানুষ চাইলে সবই করতে পারে। তার জন্য প্রয়োজন শুধু প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও মনোবল। যার উদাহরণ আমরা বারংবার ই পেয়েছি। পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরি করবার কথা শুনলে সবার প্রথমে আমাদের যার কথা মনে পরে তিনি হলেন দশরথ মাঝি। যাকে বিহারের “দ্য মাউন্টেন ম্যান” নামে চিনি আমরা।

মনের অকল্পনীয় বল ও প্রবল ইচ্ছা শক্তির উপর ভর করে যিনি শুধুমাত্র একটি হাতুড়ি ও একটি ছেনি দিয়ে পুরো পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরি করে ফেলেছিলেন ২২ বছরে। মানুষ যে চাইলেই একাই পাহাড় ভেঙ্গে ফেলতে পারে তার উদাহরণ আমরা আগেই পেয়েছি। এবার তার মতনই আরও একজনের নাম উঠে এসেছে আমাদের সামনে। মানব কল্যাণের জন্য যিনি একাই ৩ কিলোমিটার খাল খনন করে ফেলেছেন তাও আবার কোনরকম সাহায্য ছাড়াই।

বিহারে অবস্থিত গয়ার লাথুয়া এলাকায় কথিলাওয়া গ্রামের বাসিন্দা লৌঙ্গি ভূঁইয়া। যিনি প্রায় ৩০ বছরের কঠোর পরিশ্রমের ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ খাল খনন করেছেন। গয়া জেলার সদর থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কথিলাওয়া গ্রামটির চারিদিকে ঘন জঙ্গল ও পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত। এই ঘন জঙ্গল মাওবাদীদের আশ্রয়স্থল হিসেবেও পরিচিত।

আরো পড়ুন- লেবুর উপকারিতা। লেবুর রসের গুণাগুণ।

আগে এই অঞ্চলে বৃষ্টির জল পাহাড় থেকে গ্রামে প্রবেশ না করে অন্যত্র চলে যেত। বিহারের এই অঞ্চল কৃষি প্রধান এলাকা হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় চাষের জল পাওয়া সম্ভব হতো না। কৃষিপ্রধান এই অঞ্চলে চাষের জন্য প্রয়োজনীয় জল না পাওয়ার কারণে এলাকার যুবকেরা ও অন্যান্য গ্রামবাসীরা সকলেই গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে থাকে একে একে অন্যত্র কাজের খোঁজে। লৌঙ্গি ভুঁইয়া এটা একেবারেই মেনে নিতে পারেননি।

এরপর তিনি ঠিক করেন পাহাড় কেটে একটি খাল বানাবেন যেখান থেকে জল গ্রামে প্রবেশ করবে। যার ফলে চাষবাসের সুবিধা হবে সকল গ্রামবাসীর। কিন্তুু এ কাজে তাকে সাহায্য করতে কেউ এগিয়ে আসেনি। তিনি গত ৩০ বছর ধরে খালটি এককভাবে খনন করে চলেছেন। তার পরিবারের লোকেরা জানান লৌঙ্গি ভুঁইয়ার বয়স বর্তমানে ৭০ বছরের কাছাকাছি। তিনি প্রতিদিন সকালে বেরিয়ে যান জঙ্গলের উদ্দেশ্যে এবং কোন সাহায্য ছাড়াই শুরু করে দেন খাল খননের কাজ।

গ্রামবাসী ও পরিবারের সকলেই তাকে এই কাজে বাধা দিত, কারন এই কাজের জন্য তিনি কোন মজুরি পেতেন না এবং ধীরে ধীরে সকলেই তাকে পাগল বলতে থাকে। কিন্তু বর্তমানে তার অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও কঠোর পরিশ্রমে খাল থেকে জল গ্রামে পৌঁছালে সকলেই তাঁর প্রশংসা করছেন। তার তৈরি এই খালে আজ তিনটি গ্রাম মিলে প্রায় ৩ হাজার মানুষের উপকার হয়েছে।

সরকারের কাছে তার আবেদন যদি সরকার থেকে চাষবাসের জন্য ট্রাক্টর ও অন্যান্য সাহায্য করে তবে গ্রামবাসী অনুর্বর জমিতে চাষ করতে পারবে। আজ তাঁর অসামান্য ইচ্ছাশক্তি ও কঠোর পরিশ্রম হাজার হাজার মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। তার এহেন পরিশ্রম একদিন সফলতা লাভ করবেই।

মন্তব্য করুন