রোলস্ রয়েস কে নত হতে হয়েছিল জয় সিং প্রভাকরের সামনে

রোলস্ রয়েস: একটা সময় ছিল যখন ভারতের রাজারা বিলাসিতার দিক দিয়ে ইংরেজদেরও হার মানাত। তৎকালীন ভারতের কিছু রাজারা তাদের সমৃদ্ধশালীতা দেখাতেন বেশ জাঁকজমক ভাবেই। তারা শুধু সোনা, রূপা, হীরে, মুক্তো দ্বারা তাদের সমৃদ্ধশালীতা দেখাতেন তা নয়। তার সঙ্গে কারও কারও শখ ছিল দামি গাড়িরও।

ভারতীয় রাজারা তাদের সমৃদ্ধশালীতা দেখাতে বেশ এগিয়ে থাকতেন। এমনই এক রাজা ছিলেন মহারাজা জয় সিং প্রভাকর। একবার আলওয়ারের মহারাজা জয় সিং প্রভাকর বিলাসবহুল ও দামি গাড়ি নির্মাণ কোম্পানি রোলস্ রয়েসকে তার অভিজাত্য ও অভিমানের একটি ঝলক দেখিয়েছিলেন। যার কাছে হার মেনেছিল বিদেশি দামি গাড়ি বানানো কোম্পানি রোলস রয়েস

রোলস্ রয়েস, জয় সিং প্রভাকর

১৯২০ সালে মহারাজা জয় সিং প্রভাকর নিজের দেশ থেকে দূরে লন্ডনে সময় কাটাচ্ছিলেন। স্বর্ণালংকার ও দামি রাজ বস্ত্র ত্যাগ করে তিনি সাধারণের ন্যায় দিন কাটাচ্ছিলেন। তার সঙ্গে না ছিল রাজকর্মচারী না ছিল কোনো সেবক। তিনি একাই ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন লন্ডনে।

আরও পড়ুন- স্ট্যাচু অফ লিবার্টি নির্মাণের ইতিহাস। কিভাবে আমেরিকায় গড়ে উঠলো এই মূর্তি

একদিন শহরে ঘুরতে ঘুরতে রাস্তার ধারের রোলস রয়েস গাড়ির শোরুম দেখেন। তিনি সৌখিন আর দামি গাড়ি ভালবাসতেন তাই তিনি রোলস রয়েসের গাড়ি দেখেই তা কেনার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়েন। শো রুমে ঢুকে তিনি তার পছন্দের গাড়িটি খুব ভালোভাবে দেখতে থাকেন এবং বৈশিষ্ট্য আর দামের ব্যাপারে ওখানেই দাঁড়ানো একজন গাড়ী বিক্রেতা কে জিজ্ঞাসা করেন। ইংরেজ ওই গাড়ি বিক্রেতা টি তখন জয়সিং প্রভাকর কে দেখে রেগে যান এবং তাকে গাড়ির ব্যাপারে কিছু না বলেই শোরুম থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন।

সেই সময়ে রাজা জয়সিং প্রভাকর একেবারে সাধারণ বেশে ছিলেন তাই বিক্রেতা কে তাকে এক দরিদ্র ভারতীয় ভেবে তাড়িয়ে দেন। এইরকম অপমান সত্বেও মহারাজা শান্ত থাকেন এবং হোটেলে ফিরে যান।হোটেলে ফিরে তার মনে একটাই কথা ঘুরতে থাকে যে তিনি অপমানের বদলা অপমান দিয়েই মেটাবেন। রোলস্ রয়েস কে শিক্ষা দিতে তিনি পুনরায় রাজ বেশ ধারণ করেন এবং ঘোষণা করেন যে তিনি আগামীকাল রোলস্ রয়েস শোরুমে আসবেন গাড়ি কিনতে। খবর পাওয়া মাত্রই শোরুমের সামনে লাল কার্পেট পেতে দেওয়া হয় এবং পরের দিন সকলে মাথা নিচু করে তাকে সম্মান জ্ঞাপন করেন। শোরুমে পৌছেই তিনি তৎক্ষণাৎ সাতটি গাড়ি নগদ টাকায় কেনেন এবং তা ভারতে তার রাজমহলে পৌঁছে দিতে বলেন। এই ঘটনায় সকলে অবাক হয়ে যান। আর তিনি সঙ্গে যেতে বলেন ওই গাড়ি বিক্রেতাটিকেও। কোম্পানির লোকেরা খুব খুশি হলেও মহারাজা খুশি ছিলেন না তার মনে অন্য কিছু চলছিল।

আরো পড়ুন: বিশ্বের সেরা ১০ সুন্দরী মহিলা

ভারতে গাড়ি গুলি পৌঁছানো মাত্রই তিনি সেগুলিকে তৎকালীন পৌরসভার হাতে তুলে দেন এবং ঘোষণা করেন সমস্ত শহরের আবর্জনা বহন করার গাড়ি হিসাবে গাড়ি গুলিকে ব্যবহার করতে। এই কথা শুনে ওই গাড়ি বিক্রেতার পায়ের নিচে মাটি সরে যায়। ঝড়ের গতিতে এই খবর ছড়িয়ে পড়তে থাকে। প্রত্যেকদিন সকালবেলায় ঐ গাড়ী করে আবর্জনা পরিষ্কার হতে দেখে ইংরেজদের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যেত।

এইরকম ঘটনার খবর পেয়ে ইউরোপ ও আমেরিকার রোলস রয়েসের গ্রাহক কমতে থাকে। কারণ রোলস রয়েসের নামে তার আগের মতো সমৃদ্ধশালীতা ছিল না কারণ সবাই তামাশা করছিল ওই গাড়ির ব্যাপারে যে যেই গাড়িতে ভারত আবর্জনা বহন করে সেটা কিভাবে কেউ বিলাসিতার সঙ্গে চালাবে।এরপর থেকে রোলস রয়েসের বাজার নষ্ট হতে থাকে। গাড়ী বিক্রেতা টি তার ভুল বুঝতে পারে। এইভাবে তিনি গাড়ি কোম্পানিকে শিক্ষা দেওয়ায় সফল হয়। শেষমেশ রোলস্ রয়েস নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচাতে মহারাজা জয়সিং প্রভাকর এর কাছে নতি স্বীকার করে এবং একটি পত্র পাঠিয়ে তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং অনুরোধ করে ওই গাড়ী করে আবর্জনা বহন না করতে। শুধু তাই নয় তাকে তারা ৬ টি গাড়িও উপহার স্বরূপ দেন। মহারাজা জয় সিং প্রভাকর তখন তাদের ক্ষমা করে দেন। এই ঘটনার মাধ্যমে তিনি একটি বার্তা দিয়েছেন যে কখনো কাওকে উপরি উপর তার বেশভূষা দেখে বিচার করতে নেই।

মন্তব্য করুন