লকডাউনে পৃথিবীর দূষণের মাত্রায় বিরাট পরিবর্তন। সমীক্ষায় এমনটাই জানালো নাসা

চলতি বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের সারা বিশ্বব্যাপী যে ভয়াবহ মহামারী লক্ষ করা গেছে তার কারণে এক বিশাল পরিবর্তন ঘটেছে প্রতিটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনে। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশগুলিতে মহামারী এর কারনে লকডাউন ও বিধিনিষেধে যে পরিমাণ দূষণের মাত্রা হ্রাস পেয়েছে তা লক্ষ্য করার মতো। ‘ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স এন্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (National aeronautics and space administration) অর্থাৎ নাসা এর গবেষকদের দ্বারা গবেষণায় জানানো হয়েছে গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে দূষিত গ্যাস নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইডের মাত্রা পূর্বের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

গত বছরে অর্থাৎ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাস নাগাদ প্রথম এই ভাইরাসের দ্বারা আক্রমণের ঘটনা সামনে আসে। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে মহামারীর রূপ নেয় এই ভাইরাস। ভাইরাসের দ্বারা সংক্রমনের মাত্রা হ্রাস করবার জন্য বিশ্বজুড়ে শুরু হয় কঠোর বিধিনিষেধ ও লকডাউন। বন্ধ হয়ে যায় বেশিরভাগ কারখানা ও শিল্প গুলি। জ্বালানি ব্যবহারের মাত্রা হ্রাস পাওয়ার ফলে দূষিত গ্যাসের মাত্রা হ্রাস পায় উল্লেখযোগ্যভাবে। এই দূষণের মাত্রা কতটা হ্রাস পেয়েছে সে বিষয়ে নাসার একটি সমীক্ষা থেকে জানা গেছে। নাসা দ্বারা গবেষণায় জানানো হয়, পৃথিবীব্যাপী দূষিত গ্যাস পূর্বের তুলনায় প্রায় ২০ থেকে ৫০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। জীবাশ্ম জ্বালানির দহনে দ্বারা উৎপাদিত বায়ু দূষণকারী নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইডের মাত্রা ২০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে লকডাউন এর পূর্বের তুলনায়।

লন্ডনের প্রভাব বিশ্বব্যাপী কেমন ছিল তা পর্যালোচনা করবার জন্য ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে নাসা একটি রিপোর্ট পেশ করে। নাসার সমীক্ষা অনুযায়ী লকডাউন এর কারণে বিশ্বব্যাপী বাতাসের মান পূর্বের তুলনায় খুব কম দূষিত ছিল। লকডাউন এর প্রাক্কালে ব্যাপারটা লক্ষনীয় না হলেও কয়েক মাসের মধ্যে তা দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। বিশ্বজুড়ে কয়েক বিলিয়ন মানুষের উপরে চাপিয়ে দেওয়া বিধিনিষেধ ও সমস্ত কলকারখানা, কর্মস্থলে চলা লকডাউন এর ইতিবাচক দিকগুলো নাসা তাদের সমীক্ষায় স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দেয়।

আরো পড়ুন- লেবুর উপকারিতা। লেবুর রসের গুণাগুণ

নাসা বায়ুতে দূষণের মাত্রা হ্রাসের পরিমাণ কতটা সেই বিষয়ে নিশ্চিত হতে এর উপর অধ্যায়নের কাজ শুরু করে। নাসার বিজ্ঞানীরা একটি কম্পিউটার চালিত মডেল তৈরি করেন। এটির সাহায্যে তারা অতিমারির চলতি মাসে প্রভাব এবং বিশ্বজুড়ে জলবায়ুর যে পরিবর্তন তা অধ্যয়নের কাজে লেগে পড়ে। তবে ২০২০ সালের বায়ুমণ্ডলের অবস্থার সাথে ২০১৮-২০১৯ এর বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থার পাশাপাশি তুলনা করা সম্ভব ছিল না। যে কারণে তারা একটি মডেল প্রজেকশন তৈরি করেছিলেন।

নাসার সমীক্ষা রিপোর্ট:

এই সমীক্ষা থেকে নাসা যে সমস্ত রিপোর্টগুলো পায় তা থেকে জানানো হয়েছে- তারা মোট ৪৬ টি দেশের ৫,৭৫৬ টি সমীক্ষাস্থল বেছে নেন। যেখান থেকে নাসা সেই অঞ্চলের বাস্তব সময়ের বায়ুমণ্ডলের পরিস্থিতি প্রতি ঘন্টা অনুযায়ী পরিমাপ করতে পেরেছিলেন। সমীক্ষা থেকে নাসা জানায় মোট ৬১ টি শহরের ৫০ টিতে নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইডের মাত্রা হ্রাস পেয়েছিল ২০ থেকে ৫০ শতাংশ।

কোথায় দূষণের মাত্রা কতটা:

নাসা তাদের সমীক্ষার রিপোর্ট পেশ করলে জানা যায়, চীনের উহান শহর, যেখান থেকে এই মহামারীর সূচনা সেখানে দূষণের মাত্রা প্রায় ৬০ শতাংশ কমে গিয়েছিল, নিউ ইয়র্কে দূষণ কমেছিল প্রায় ৪৫ শতাংশ। লকডাউন এর কারণে ইতালি, লম্বর্ডী ও ইউরোপের দেশগুলোতে নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইডের মাত্রা ৬০ শতাংশ কমে গেছিল। আমাদের দেশে অর্থাৎ ভারতবর্ষে লকডাউন এর কারণে বাতাসে ২৮ শতাংশ দূষণের মাত্রা হ্রাস পায়। এই মহামারীর কবলে অনেক মানুষ প্রাণ হারায়, যা খুবই দুঃখজনক। তবে দূষণ উৎপাদনকারী শিল্প ও কলকারখানা, যানবাহন বন্ধ থাকার কারণে পৃথিবী পুনরায় নিজেকে সাজিয়ে তুলছে ধীরে ধীরে।

মন্তব্য করুন