বাংলাদেশের হিন্দু মন্দির ২০২৪

বাংলাদেশের হিন্দু মন্দির ২০২৪: বাংলাদেশে ২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী মোট হিন্দু মন্দিরের সংখ্যা ৪০,৪৩৮টি। সনাতনী ধর্মের জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম দেশ। ধর্ম বিদ্বেষের কারণে বাংলাদেশে বর্তমানে অনেক হিন্দু মন্দিরের জমি বেদখল হয়ে গেলেও এখনো কয়েক লক্ষ হিন্দু মন্দির অবস্থান করছে বাংলাদেশে। নিচের এই নিবন্ধটিতে বাংলাদেশের হিন্দু মন্দির সম্পর্কে উল্লেখ করা হল। সেই সঙ্গে কোন মন্দির কোন জেলায় অবস্থিত, মোট মন্দিরের সংখ্যা আলোচনা করা হল।

আজকের এই নিবন্ধের মাধ্যমে আমরা জানবো বাংলাদেশের হিন্দু মন্দির, বাংলাদেশের হিন্দু মন্দির কোথায় কোথায় আছে, মোট হিন্দু মন্দিরের সংখ্যা ইত্যাদি। অতএব এই নিবন্ধটি সম্পূর্ণ পড়বেন বাংলাদেশের হিন্দু মন্দির সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য পাওয়ার জন্যে। এই ধরনের আরও তথ্য পেতে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন।

বাংলাদেশের হিন্দু মন্দির ২০২৪

বিষয়বাংলাদেশের হিন্দু মন্দির
স্থানবাংলাদেশ
হিন্দু মন্দিরের সংখ্যা৪০,৪৩৮
সাল২০২৪

১. অনুকূল চন্দ্রের সৎসঙ্গ আশ্রম

দেশস্থানমন্দিরের নাম
বাংলাদেশপাবনা,হেমায়েতপুরশ্রী শ্রী অনুকূল চন্দ্রের সৎসঙ্গ আশ্রম
বাংলাদেশের হিন্দু মন্দির ২০২৪

ভারতের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের অন্যতম মন্দির গুলোর মধ্যে একটি হলো পাবনা শহরের হেমায়েতপুর গ্রামে অবস্থিত শ্রী শ্রী অনুকূল চন্দ্রের সৎসঙ্গ মন্দির। শ্রী শ্রী অনুকূল চন্দ্রের জন্ম হয় ১৮৮৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের পাবনা জেলার রায়পুর গ্রামে। পরবর্তী সময়ে তিনি বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতের দেয়ঘরে চলে আসেন। তার উদ্যেশেই হেমায়েতপুর গ্রামে এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা হয়। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতা লাভ ও দেশ ভাগের পর পাকিস্থান মন্দিরের জায়গা দখল করে নেয় এবং মানসিক হাসপাতাল নির্মাণ করে। তবে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সকল ভক্তরা পুনরায় সৎসঙ্গ তৈরির উদ্যোগ নেন। বর্তমানে ওই স্থানে একটি সৎসঙ্গ মন্দির অবস্থিত। পুরাতন কোনো বৈশিষ্ট্য এই মন্দিরে পরিলক্ষিত হয়না, তবে মন্দিরের পাশে শ্রী শ্রী অনুকূল ঠাকুরের একটি পূজা ঘর অবস্থিত। শ্রী শ্রী অনুকূল চন্দ্রের জন্মবার্ষিকী ও মৃত্যু বার্ষিকীতে এই মন্দিরে বিরাট অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ভাদ্র মাসের তাল নবমী তিথিতে বিরাট স্নান যাত্রার আয়োজন করা হয় এখানে। অনেক ভারতীয় দর্শনার্থী এখানে আসেন মন্দির দর্শন করতে।

২. রমনা কালিবাড়ী মন্দির

দেশস্থানমন্দিরের নাম
বাংলাদেশঢাকা,সোহরাওয়ার্দীরমনা কালিবাড়ী মন্দির
বাংলাদেশের হিন্দু মন্দির ২০২৪

ভারতীয় উপমহাদেশের বিখ্যাত হিন্দু মন্দির গুলির মধ্যে অন্যতম ছিল রমনা কালীবাড়ি মন্দির। এই মন্দিরের প্রাচীন মন্দিরটি প্রায় হাজার বছরের পুরনো বলে বিশ্বাস করা হয়। তবে ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন ভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল। এই মন্দিরটি রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বহির্ভাগে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালে রমনা কালী মন্দির কে ধ্বংস করে ফেলেছিল।

৩. চৈতন্য মন্দির গোপালগঞ্জ

দেশস্থানমন্দিরের নাম
বাংলাদেশঢাকা,গোপালগঞ্জচৈতন্য মন্দির
বাংলাদেশের হিন্দু মন্দির ২০২৪
বাংলাদেশের হিন্দু মন্দির ২০২৪

বাংলাদেশের ঢাকা শহরের গোপালগঞ্জে দক্ষিণ ইউনিয়নে অবস্থিত একটি বিখ্যাত হিন্দু মন্দির হল চৈতন্য মন্দির। এই মন্দিরটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি ঐতিহাসিক তীর্থস্থান। বৈষ্ণব ধর্মের প্রবর্তক চৈতন্যদেবের পৈত্রিক নিবাস ছিল এই অঞ্চল। চৈতন্যদেবের পিতা-মাতার পৈতৃক বাড়ি ছিল এটি। চৈতন্যদেবের পিতা শ্রী জগন্নাথ মিশ্র এবং মাতা সচিদেবী এখানে থাকতেন। বিবাহের কিছুদিন পর চৈতন্যদেবের মাতা স্বপ্নে দেখেন তার সন্তান স্বয়ং ভগবান। তবে চৈতন্যদেব ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন অন্য জায়গায়। চৈতন্যদেবের দিদিমার ইচ্ছা অনুসারে তিনি একবার ঢাকায় এসেছিলেন তার পিতামাতার পৈত্রিক বাড়ি দেখতে। প্রতিবছর চৈত্র মাসে এই মন্দিরে উৎসবের আয়োজন করা হয়, একমাস ধরে এই মেলা চলে।

8. লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রম বারদী

দেশস্থানমন্দিরের নাম
বাংলাদেশনারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও বারদীলোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রম বারদী
বাংলাদেশের হিন্দু মন্দির ২০২৪

ঢাকার খুব কাছেই নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ এর বারদীতে শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারির আশ্রম রয়েছে। হিন্দু ধর্মালম্বীরা লোকনাথ ব্রহ্মচারী সম্পর্কে খুব ভালোভাবেই অবগত। বারদীতে থাকাকালীন বাবা লোকনাথের অলৌকিক সত্তার পরিচয় চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। তার পুজো উপলক্ষেই বারদীতে গড়ে ওঠে বাবা লোকনাথের মন্দির। লোকনাথের জন্মতিথি উপলক্ষে প্রতি বছর এখানে মেলা হয়। এই উৎসবের অংশগ্রহণ করে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা সহ বিভিন্ন দেশের মানুষ।

৫. কাল ভৈরব মন্দির ব্রাহ্মণবাড়িয়া

দেশস্থানমন্দিরের নাম
বাংলাদেশব্রাহ্মণবাড়িয়াকাল ভৈরব মন্দির ব্রাহ্মণবাড়িয়া
বাংলাদেশের হিন্দু মন্দির
বাংলাদেশের হিন্দু মন্দির ২০২৪

বাংলাদেশের তিতাস নদীর কূল ঘেসে অবস্থিত একটি বিখ্যাত মন্দির কালভৈরব। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় অবস্থিত এই ঐতিহাসিক মন্দিরটি বেশ ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক মন্দির হিসেবে পরিচিত এটি। এই মন্দিরের প্রধান আকর্ষণ কাল ভৈরব বিগ্রহ, যার উচ্চতা ২৮ ফুট। এই বিগ্রহ তৈরি করা হয়েছিল ১৯০৫ সালে, যার বাম পাশে রয়েছে পার্বতী দেবীর মূর্তি এবং ডান পাশে কালি মায়ের মূর্তি। তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নজরে আসে এই মূর্তিটি, তখন তারা ডায়নামাইটের আঘাতে শিব এবং পার্বতীর মূর্তির অনেক অংশই ক্ষতিগ্রস্থ করে।

Read More, বাংলাদেশের ১ নম্বর ধনী ব্যক্তি

Read More, বাংলাদেশের হিন্দু জনসংখ্যা কত ২০২৪

Read More, বাংলাদেশের এক নম্বর ইউটিউবার কে

৬. আদিনাথ মন্দির মহেশখালী

দেশস্থানমন্দিরের নাম
বাংলাদেশকক্সবাজার,মহেশখালীআদিনাথ মন্দির মহেশখালী
বাংলাদেশের হিন্দু মন্দির ২০২৪

বাংলাদেশের কক্সবাজারে অবস্থিত আদিনাথ মন্দির বাংলাদেশের একটি বিখ্যাত হিন্দু মন্দির। কক্সবাজার থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে মহেশখালীতে অবস্থিত এই বিখ্যাত মন্দিরটি সনাতনি ধর্মাবলম্বীদের দেবাদিদেব মহাদেবের নাম অনুসারে এই মন্দির এর নামকরণ করা হয়। এই মন্দির শিব মন্দির নামেও পরিচিত এবং সকলেই ভক্তি শ্রদ্ধার সাথে এই মন্দিরে পূজা দিতে আসেন।

৭. পুঠিয়া মন্দির

দেশস্থানমন্দিরের নাম
বাংলাদেশরাজশাহী,পুঠিয়াপুঠিয়া মন্দির
বাংলাদেশের হিন্দু মন্দির
বাংলাদেশের হিন্দু মন্দির ২০২৪

বাংলাদেশের রাজশাহীর পুঠিয়া মন্দির একটি উল্লেখযোগ্য হিন্দু মন্দির। একটি পুরনো হিন্দু মন্দির চত্বর নিয়ে গঠিত পুঠিয়া মন্দির। এই মন্দিরের অবস্থান রাজশাহী শহরের ২৩ কিলোমিটার পূর্বে। এই অঞ্চলেই বাংলাদেশের বেশিরভাগ হিন্দু মন্দির অবস্থান করে। মন্দিরের নির্মাতা রাজশাহীর বিখ্যাত রাজ পরিবারের রাজারা। মন্দিরগুলি অনেক স্থাপত্য শিল্পকলার নিদর্শন। পুঠিয়ার রাজবাড়িতে পুরনো রীতি অনুযায়ী জলাধারের চার পাশ জুড়ে পুঠিয়া মন্দির গুলি তৈরি করা হয়েছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য চৌচালা গোবিন্দ মন্দির, শিব মন্দির, পঞ্চরত্ন শিব মন্দির, জগদ্ধাত্রী মন্দির, গোবিন্দ মন্দির ইত্যাদি। এই মন্দিরের নির্মাণ হয় অষ্ঠাদশ এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর সময়। এত বড় জায়গা জুড়ে মন্দির বাংলাদেশের অন্য কোন জায়গায় নেই, তবে ভারতবর্ষের বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরে এই ধরনের মন্দির দেখতে পাওয়া যায়।

৮. চন্দ্রনাথ মন্দির সীতাকুণ্ড

দেশস্থানমন্দিরের নাম
বাংলাদেশচট্টগ্রাম,সীতাকুণ্ডচন্দ্রনাথ মন্দির সীতাকুণ্ড
বাংলাদেশের হিন্দু মন্দির ২০২৪

বাংলাদেশের চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডতে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উপর অবস্থিত চন্দ্রনাথ মন্দির। এই মন্দিরটি সতীর ৫১ পীঠের মধ্যে অন্যতম এবং হিন্দুদের জন্য একটি সুপরিচিত তীর্থস্থান। হিন্দু পুরান অনুযায়ী সীতার দক্ষিণ হস্ত এখানে এসে পড়েছিল। চন্দ্রনাথ পাহাড়ে সর্বোচ্চ চূড়ায় অবস্থিত চন্দ্রনাথ মন্দির। এর অপর নাম সীতাকুণ্ড মন্দির। এই মন্দিরটি ছাড়াও আশেপাশে অনেকগুলি মন্দির রয়েছে। এই মন্দিরে শিবচতুর্দশীতে বিশেষ পুজো করা হয়। এই পুজোকে কেন্দ্র করে সীতাকুণ্ডে বিশাল মেলাও হয়। যেটি শিব চতুর্দশী মেলা নামে পরিচিত। পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা থেকে এই মেলায় সাধু, নারী, পুরুষ, বাচ্চা থেকে বুড়ো সকলেই যোগদান করে।

৯. কান্তনগর মন্দির দিনাজপুর

দেশস্থানমন্দিরের নাম
বাংলাদেশদিনাজপুরকান্তনগর মন্দির দিনাজপুর
বাংলাদেশের হিন্দু মন্দির ২০২৪

কান্তনগর মন্দির বাংলাদেশের দিনাজপুরে অবস্থিত একটি সু পরিচিত হিন্দু মন্দির। এই মন্দিরটি হিন্দুদের কাছে খুবই জনপ্রিয় এবং তিন তলা বিশিষ্ট এই মন্দিরে খুব সুন্দর ধর্মীয় স্থাপনার নিদর্শন দেখা যায়।

১০. ঢাকেশ্বরী মন্দির ঢাকা

দেশস্থানমন্দিরের নাম
বাংলাদেশঢাকাঢাকেশ্বরী মন্দির ঢাকা
বাংলাদেশের হিন্দু মন্দির ২০২৪

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে অবস্থিত বাংলাদেশের জাতীয় মন্দির হলো এই ঢাকেশ্বরী মন্দির। ঢাকা শহরে রক্ষাকর্তি দেবী হিসেবে এই মন্দিরের নামকরণ করা হয়েছিল ঢাকেশ্বরী মন্দির। এই মন্দিরটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত। উজ্জ্বল হলুদ ও লাল বর্ণের এই মন্দিরের উত্তর-পশ্চিম কোণে রয়েছে চারটি শিব মন্দির। এই মন্দিরে দেবী দুর্গার একটি ধাতু নির্মিত প্রতিমা রয়েছে। বাংলাদেশের সকল হিন্দুদের কাছে এই মন্ত্রীদের সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য।

এই ধরনের শিক্ষামূলক, আন্তর্জাতিক খবরের জন্য আমাদের ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ, টুইটার পেজ, ইন্সটাগ্রাম, ইউটিউব ইত্যাদি প্লাটফর্মে ফলো করতে পারেন। ধন্যবাদ।

FAQ: বাংলাদেশের হিন্দু মন্দির ২০২৪

বাংলাদেশের জাতীয় মন্দির কোনটি ?

বাংলাদেশের জাতীয় মন্দির হলো ঢাকেশ্বরী মন্দির

বাংলাদেশে মোট হিন্দু মন্দিরের সংখ্যা কত?

বাংলাদেশে ২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী মোট হিন্দু মন্দিরের সংখ্যা ৪০,৪৩৮টি

সনাতনী ধর্মের জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের কত তম দেশ?

সনাতনী ধর্মের জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম দেশ

মন্তব্য করুন