কাছেরি বাড়ি পশ্চিমবঙ্গ – ভুতুড়ে বাড়ি

কাছেরি বাড়ি পশ্চিমবঙ্গ: যারা ভূতের গল্প শুনতে পছন্দ করেন বা ক্রমাগত ভূতের গল্প শোনেন তারা পশ্চিমবঙ্গের “কাছেরি বাড়ি” এর কথা অবশ্যই শুনে থাকবেন, আর যদি না শোনেন তবে আজ জেনে নিন এই বাস্তব সত্য। আজকে যে ঘটনার কথা আপনাদের সামনে বলতে যাচ্ছি সেটা অবশ্যই কোন গল্প নয় বাস্তব সত্য ঘটনা এবং কাছেরি বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের উপর অনেক ভিডিও তৈরি হয়েছে যা আপনারা ইউটিউবে দেখতে পারেন। অনেক ভুতুড়ে বিশেষজ্ঞ এই বাড়িটির উপর পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছেন যার ভিডিও আপনারা গুগলের বা ইউটিউবে পেয়ে যাবেন। এবার আসুন জেনে নিই কি এই কাছেরি বাড়ি, যাকে ভারতের অন্যতম ভুতুড়ে বাড়ির আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

কাছেরি বাড়ি পশ্চিমবঙ্গ

কাছেরি বাড়ি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূম জেলায় মল্লারপুর গ্রামে অবস্থিত। মা কালীর মন্দির তারাপীঠের নাম তো সবাই শুনেছেন এই তারাপীঠ মন্দির থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে এই ভুতুড়ে বাড়ি। মল্লারপুর গ্রাম আমাদের ব্যস্ত শহর যানজটের থেকে অনেক দূরে অবস্থিত। শান্ত একটি গ্রাম যেখানে রয়েছে এই কাছেরি বাড়ি। বাড়িটি দেখতে পুরনো দিনের বাগান বাড়ির মত কিছুটা। বিশেষ করে যে ধরনের বাড়ি জমিদাররা ব্যবহার করে থাকতো তাদের ফুর্তি করার জন্য। যার ছবি আপনারা নিচে দেখতে পাবেন। এই বাড়িটি ১৮ শতকের শেষের দিকে নির্মিত বলে শোনা যায়।

বাড়িটিকে দেখতে পুরনো দিনের বাড়ির মত এবং বাড়িটির সামনে একটি লোহার গেট রয়েছে। শোনা যায় ১৭৫৯ সালে যখন মীরজাফর কে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার নবাব করে দেয় সেই সময় তার জামাই মীর কাসিমের বাংলার নবাব হওয়ার ইচ্ছা হয়। সেই সময় মুর্শিদাবাদের গঙ্গার তীরে মীর কাসিম একটি সাধুকে দেখতে পায়। তিনি ওই সাধুকে জিজ্ঞাসা করেন “আমি কত দিনে বাংলার নবাব হতে পারবো”। সাধু সেই সময়ের উত্তর দেয়, যেহেতু তোমার মন অত্যন্ত চঞ্চল নবাব হওয়ার জন্য সেই কারণে তুমি গত এক মাসের মধ্যে বাংলার সিংহাসনে বসবে। কাকতালীয়ভাবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার নবাব পরিবর্তন করে মীর কাসিমকে সিংহাসনে বসায়। এরপর মীর কাসিম সেই সাধুকে খুঁজতে শুরু করে এবং খুঁজে পাওয়ার পর তার পায়ে নিজের মাথা ঠেকায়।

মীর কাসিম তখন খুশি হয়ে সাধুকে তিনটি অঞ্চলের জমিদারিত্ব দেন, পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম ও এর সঙ্গে বর্তমান বাংলাদেশের যশোর ও মুঙ্গের। মীর কাসিমের ছেলেরা জনগণের সেবা করতেন কিন্তু তার নাতিরা সুখ স্বাচ্ছন্দ ও পয়সার প্রভাবে বিপথে চালিত হয়। তারা নেশা ভান করত এবং তাদের জমিদার অঞ্চলের মধ্যে পছন্দমত মহিলাদের অপহরণ করতো। এই কাছেরি বাড়ি তাদেরই তৈরি ছিল এবং সেখানে তারা আনন্দ ফুর্তি করতো। অপহরণ করা মহিলাদের তারা এই বাড়িতে নিয়ে আসতো এবং তাদেরকে নর্তকী তে পরিণত করত। কিন্তু একবার যে মহিলারা এই বাড়িতে আসতো তারা আর কখনো বাইরে ফিরে যেত না, বলতে গেলে একপ্রকার অদৃশ্য হয়ে যেত।

আরো পড়ুন,

Kacheri Badi West Bengal – The Most Haunted House in India

এই কাছেরি বাড়ি ধীরে ধীরে এক প্রকার পাপের কেন্দ্র হয়ে ওঠে। বিভিন্ন জমিদাররা তাদের আনন্দ ফুর্তির জন্য এই বাড়িতে আসতো এবং তাদের পছন্দমত মহিলাদের ধরে নিয়ে আসতো। এইভাবে কাছেরি বাড়ি নীরবতার সাথে সমস্ত কিছুর সাক্ষী থেকে যায়। ইতিহাসের সঙ্গে মীর কাসিমের রাজত্ব ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যায় এবং তার বংশধররাও এই কাছেরি বাড়ি থেকে চলে যায়। বাড়িটি দীর্ঘদিন শূন্য পড়ে থাকে, ফলে এই কাছেরি বাড়িটি গাছগাছালিতে ভরে যায়। স্থানীয় এক বাসিন্দার মতে এই বাড়িটিতে এক সময় একটি কারখানার লোক এসে বাড়িটি দখলের চেষ্টা করেন এবং সেখানে খোরাখুরি আরম্ভ করে দেয়। এই খোরাখুরির সময় সেখানে হঠাৎ হৈচৈ পড়ে যায় এবং পরে জানতে পারা যায় যে সেখান থেকে মানুষের কঙ্কাল হাড়গোড় উদ্ধার হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে এটি সেই সমস্ত হারিয়ে যাওয়া মহিলাদের কঙ্কাল, যে মহিলারা একসময় বাড়ির ভেতরে তো যেত কিন্তু বাইরে বেরিয়ে আসতো না। জমিদার বাড়ি হওয়ায় গ্রামের লোকের কিছু বলার ক্ষমতা ছিল না। স্থানীয় বাসিন্দারা অনেকেই বলেছেন যে তাদের দাদু দিদারা এই কাছেরি বাড়িতে রাতের বেলায় পায়ের নুপুরের আওয়াজ শুনতে পেয়েছে। এছাড়া আরো একটি ঘটনা গ্রামের রয়েছে যেখানে বলা হয় যারা তাকে দেখেছে তারা বেশিদিন বাঁচেননি, তিন মাসের মধ্যে কোন না কোন কারণে তারা মারা গেছে।

এই ঘটনায় শেষবার মারা যায় একজন শিকারি যে সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার কারণে তাড়াতাড়ি বাড়ি যাওয়ার জন্য কাছেরি বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার রাস্তাটি বেঁচে নেন। তিনি যখন কাছেরি বাড়ির ঠিক সামনে যান তখন তিনি সেই বাড়ির দিকে তাকান এবং বাড়িটির মধ্যে কোন মহিলাকে নড়াচড়া করতে দেখতে পান। সে এটি দেখার পর সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়ায় এবং তারপর চলে যায়। বাড়ি গিয়ে সে আর রাতে ঘুমাতে পারিনি এবং এক মাসের মধ্যে ব্যক্তিটি মারা যান।

এই পর্যন্তই, গল্পটি কেমন লাগলো কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। আর আপনি যদি এই ভুতুড়ে স্থানের যেতে চান তবে অবশ্যই গুগল ম্যাপের সাহায্য নিতে পারেন। উপরের দেওয়া সমস্ত তথ্য ও ঘটনাবলী সম্পূর্ণ ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত, আমাদের ওয়েবসাইট কখনোই এর সত্যতা যাচাই করেনি। ঘটনাটি আপনারা গল্প বলতে পারেন বা সত্য ঘটনা কিন্তু সবই রয়েছে ইতিহাসে। ধন্যবাদ।

মন্তব্য করুন