গ্রীষ্মকালীন পরিযায়ী পাখি

গ্রীষ্মকালীন পরিযায়ী পাখি: পাখি এমন এক প্রাণী তারা মনের সুখে উড়ে বেড়াতে পারে। তাদের প্রতি অনেকেরই আকর্ষণ রয়েছে। ছোটবেলায় মানুষ এই পাখিদের দেখেই প্রথম আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখে। অন্যান্য মাধ্যমে মানুষ আকাশে উড়তে সক্ষম হলেও পাখির মত সুন্দর ও বায়ুচর প্রাণীর প্রতি আকর্ষণ থেকেই যায় সবার। বিশ্বজুড়ে পাখিদের প্রচুর প্রজাতি রয়েছে। তাদের প্রত্যেকেরই রং, রুপ, বাসস্থান, বংশবৃদ্ধির ভিন্নতা রয়েছে। সারা বিশ্বে তারা নানা প্রাকৃতিক পরিবেশে বেড়ে ওঠে ও জীবন ধারণ করে। তবে দুর্যোগ কালে বা বলা যেতে পারে গরমকালে অতিরিক্ত গরম পড়লে অথবা তারা অতিরিক্ত ঠাণ্ডার হাত থেকে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করার জন্য স্থান পরিবর্তন করে। 

এরা এক এলাকা থেকে আর এক এলাকায় গিয়ে উপস্থিত হয় শুধু তাই নয়। অনেক ক্ষেত্রে তারা সূদুর সমুদ্র পাড়ি দিয়ে এক দেশ থেকে অন্য দেশে গিয়ে উপস্থিত হয়। প্রত্যেক বছর ভারতীয় উপমহাদেশে এসে বাসস্থান তৈরি করে অনেক বিদেশি পরিযায়ী পাখিরা। দেশ-বিদেশের অনেক পাখির প্রজাতি পরিযান স্থান হিসেবে ভারত কে বেছে নেয়। তার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। আসলে ভারতীয় উপমহাদেশ নানারকম প্রাকৃতিক স্থলের একত্রিত রূপ।

এখানে নানা রাজ্যে আলাদা প্রাকৃতিক এবং পাখিদের বাসযোগ্য পরিবেশ রয়েছে। তাই পরিযায়ী পাখিরা ভারতের নানা স্থানে এসে উপস্থিত হয়। দেশ-বিদেশের মানুষ ভারতের অভয়ারণ্য ঘুরতে যায় সমস্ত পাখিদের দেখা পেতে। ১০০ এরও বেশি প্রজাতির পাখি ভারতে আসে বছরের নানা সময়ে। সব প্রজাতির পাখিদের জন্য ভারতে নানা প্রাকৃতিক অস্থায়ী পরিবেশ তৈরি করা হয়। এই স্থানগুলিতে বিচিত্র রকমের পাখি মন কেড়ে নেয় দর্শকদের। পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। যেমন কোন কোন প্রজাতি শীতকালে ভারতে আসে, আবার কোন কোন প্রজাতি গরমকালে ভারতে এসে উপস্থিত হয়। নিচে গরম কালে ভারতের পরিযায়ী পাখিদের কয়েকটি প্রজাতির ব্যাপারে বর্ণনা দেওয়া হল। 

ভারতের গ্রীষ্মকালীন পরিযায়ী পাখি

ব্লু টেইলড্ বি ইটার –

এই পাখিগুলি বেশ ছোট আকৃতির দেখতে হয়। হালকা খয়েরি রঙের গলা বিশিষ্ট এই প্রজাতির পাখি গুলির সারা গা নীল-সবুজ রঙের পালকে ঢাকা থাকে। এদের লেজ নীল রংয়ের হয় বলেই এদের ব্লু টেইলড্ বি ইটার নাম হয়েছে। এই প্রজাতির পাখি গুলি সুদূর আফ্রিকা ও ইউরোপের নানা এলাকা থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে চলে আসে। এখানে তারা সম্পূর্ণ গ্রীষ্মকাল কাটিয়ে আবার নিজ নিজ দেশে ফিরে যায়। এরা সাধারণত নদীর পাড়ে মাটির ভেতর বাসা তৈরি করে মাটির ভেতরে থাকে এবং সেখানে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে এক মাসের মধ্যেই বাচ্চারা উড়তে শিখে যায়। সাধারণত এদের প্রিয় খাবার মৌমাছি। কিন্তু ভারতে তারা খাদ্য হিসাবে ফড়িং খেয়ে থাকে। 

আরও পরুন – পরিযায়ি পাখি, যেগুলি কেবল শীতকালেই ভারতে দেখা যায়

চিরুনি হাঁস –

মিষ্টি জলের পাখি হল এই চিরুনি হাঁস। এরা মানুষের বেশি উপস্থিতি পছন্দ করে না। মূলত এরা নিরিবিলি এলাকাতে থাকে। এই প্রজাতির পাখি গুলো গ্রীষ্মকালে মাদাগাস্কার আফ্রিকা দক্ষিণ চীন এবং দক্ষিণ এশিয়ার আরো কয়েকটি স্থান থেকে ভারতের হরিয়ানা এসে উপস্থিত হয়। এরা নিম্ন জলাবদ্ধ এলাকাগুলি পছন্দ করে। 

এশিয়ান কোয়েল –

মিষ্টি সুরের জন্য যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ পাখি তা হলো কোকিল এশিয়ান কোয়েল। এরা ভারতে প্রচুর পরিমাণে থাকলেও এদের অধিকাংশ পরিমাণে পরিযানে ভারতে আসে। তারা সিঙ্গাপুর থেকে ভারতে চলে আসে। এই এশিয়ান কোয়েল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে দেখা যায়। এদের মধ্যে পুরুষ কোকিল গুলি সম্পূর্ণ কালো রংয়ের হয় এবং এদের চোখগুলি লাল রংয়ের হয়। সাধারনত এরা অন্যান্য পাখির বাসায় তাদের ডিম পেড়ে থাকে। মূলত তারা কাকের বাসায় ডিম পাড়ার জন্য প্রসিদ্ধ।

এছাড়াও আরও কয়েকটি ভারতে আসা পরিযায়ী পাখি হলো ব্লু চিকড্ বি ইটার, ব্লাক ক্রাউন্ড নাইট হেরণ, এছাড়া রয়েছে ইউরেশিয়ান গোল্ডেন অরিয়ল। এই প্রজাতির পাখি গুলি প্রত্যেক বছর গ্রীষ্মকালে ভারতকে সমৃদ্ধ করে। 

মন্তব্য করুন