ভারতের সবচেয়ে জনবহুল বস্তি। most populous slum in India in bengali

ভারতবর্ষের প্রত্যেকটি শহরেই আপনি ছোটখাটো বস্তি দেখতে পাবেন। আজ ভারতের সবচেয়ে জনবহুল বস্তি মুম্বাইয়ের ‘ধারাভি বস্তি'(Dharavi slum) নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।

মুম্বাইয়ের ধারাভি বস্তি (Dharavi slum in Mumbai)

মুম্বাইয়ের ধারাভি বস্তি এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম বস্তির মধ্যে গণনা করা হয়। ভারতের বাণিজ্যিক শহরে মুম্বাইতে এই বস্তির অবস্থান। ভারতের শহর গুলির মধ্যে মুম্বাইয়ের শহরের বাড়ি ভাড়া  সবচেয়ে বেশি। কিন্তু ধারাভি বস্তিতে আপনি ২০০ টাকায় বাড়ি ভাড়া পেয়ে যাবেন প্রতি মাসে। এই কারণে বস্তিটির জনসংখ্যা প্রতিবছর বেড়েই চলেছে। ধারাভি বস্তিটির সমগ্ৰ আয়তন ২.১ কিলোমিটার, কিন্তু আপনি যদি বস্তুটি জনসংখ্যার পরিমাণ শোনেন তাহলে আপনি চমকে যাবেন। খাতায়-কলমে বস্তিটির জনসংখ্যার পরিমাণ ৭ থেকে ৮ লাখের কাছাকাছি, কিন্তু বিভিন্ন খবর এর রিপোর্ট অনুযায়ী এখানকার মোট জনসংখ্যা ১০ লাখ বলাহয়।   

এখানকার লোকেদের জীবনযাপন খুবই কষ্টকর একটি ঘরের মধ্যে থাকা, রান্না করা, খাওয়া সবকিছু করতে হয়। বস্তিটিতে যদি আপনি প্রথমবার যান তবে আপনার দম বন্ধ হয়ে যাবে। এখানে খোলা হাওয়ায় শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার মতো কোন জায়গা নেই। ছোট ছোট ঘর বাড়িতে ভর্তি জায়গাটি এবং প্রত্যেকটি ঘর একে অপরের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে।  

বস্তিটির মধ্যে যাতায়াতের খুবই সরু রাস্তা আছে এবং নর্দমা গুলি প্রত্যেকটি উন্মুক্ত অবস্থায় রয়েছে, যেগুলো সম্পূর্ণ নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে প্রতি ১হাজার লোকের জন্য এখানে একটি মাত্র শৌচাগার রয়েছে। বৃষ্টির সময় বস্তিটির অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যায়। এখানকার বেশিরভাগ লোক বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিকের কাজ করে।   

ভারতের সবচেয়ে জনবহুল বস্তি, মুম্বাইয়ের ধারাভি বস্তি

বস্তিটির মধ্যে অনেক ধরনের হাতের কাজ ঘরে বসে করা হয় যেমন মাটির পাত্র তৈরি, জামা কাপড় সেলাই, পাউরুটি তৈরি, চর্মশিল্প, আবর্জনার পূর্ণ ব্যবহারযোগ্য করে তোলা ইত্যাদি। শুধুমাত্র এই বস্তিটি বছরে ১.৬ বিলিয়ন ডলার আয় করে, যা ধারাভিকে বিশ্বের ধনী বস্তিগুলির মধ্যে সামিল করেছে। বস্তির মানুষজন বস্তিটির মধ্যে একটি ইকোসিস্টেম তৈরি করে নিয়েছে। একটি ক্ষুদ্র শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠেছে বলা যেতে পারে, যা ভারত সরকারের অর্থনীতিকে সাহায্য করছে।

ভারতের সবচেয়ে জনবহুল বস্তি, most populous slum in India in bengali, মুম্বাইয়ের ধারাভি বস্তি, এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম বস্তি
ভারতের সবচেয়ে জনবহুল বস্তি

মুম্বাইয়ের ধারাভি বস্তির মোট জনসংখ্যার মধ্যে হিন্দু ও মুসলিম জাতির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ২০১১ এর জনগণনা অনুসারে বস্তিটির মধ্যে মারাঠি, হিন্দি, উর্দু  ও গুজরাটি ভাষায় কথা বলা লোকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। বস্তিটিতে শিক্ষা বা সাক্ষরতার পরিমাণ ৮৯ শতাংশের কাছাকাছি যা ক্ষুদ্র শিল্পের উন্নতির অন্যতম কারণ।  

আরো পড়ুন- আশ্চর্য এক সমুদ্র, যেখানে কোনো প্রাণী বা বস্তু ডুবে যায় না  

বস্তিটিতে বিদ্যুৎ, রান্নার গ্যাস ও পানীয় জলের কোন সমস্যা নেই। বস্তিটির পুনঃনির্মাণের জন্য সরকারের তরফ থেকে নব্বইয়ের দশক থেকে প্রচেষ্টা করা হচ্ছে, কিন্তু বিভিন্ন কারণে প্রতিবার সেগুলো বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৮ সালে বস্তিটি পুনঃনির্মাণের জন্য দুবাইয়ের একটি কোম্পানিকে দায়িত্ব দেয়া হয়। খবর প্রকাশিত নকশা অনুযায়ী বস্তিটির পার্শ্ববর্তী এলাকায় বহুতল ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হবে এবং বস্তিতে বসবাসকারীদের সেখানে স্থানান্তর করা হবে। যে জায়গায় বর্তমানে বস্তিটি আছে সেই জায়গায় শহরের পরিকাঠামো অনুযায়ী সরকার অন্যান্য কাজে ব্যবহার করবে।

মুম্বাইয়ের ধারাভি বস্তি|এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম বস্তি

সরকারের প্রতিবারের এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো ধারাভি বস্তির স্থানীয় বাসিন্দা নিজেরাই। তারাই প্রত্যেকবার বাধার সৃষ্টি করেছে, কারণ এখানকার লোকদের মতে যদি বস্তিটির স্থানান্তর হয় তবে তাদের জন্য থাকার ব্যবস্থা হলেও বস্তির মধ্যে যে ক্ষুদ্র শিল্প গড়ে তুলেছে সেটার স্থানান্তরের কোন ব্যবস্থা সরকার করেনি। বহু মানুষের জীবন-যাপন এই ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্পের উপর টিকে রয়েছে। বর্তমানে তারা প্রত্যেকে নিজেদের ঘরের সামনে, রাস্তার উপরে বা ঘরের মধ্যে জিনিসপত্র বেচা-কেনা জায়গা গড়ে তুলেছে।   

তাদের আশঙ্কা স্থানান্তরের পর নিজেদের শিল্পকে কিভাবে তারা এগিয়ে নিয়ে যাবে সেটা দেখতে পাচ্ছে না। এ ছাড়াও অপর একটি কারণ হচ্ছে, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে এই ধারাভি বস্তিটিতে ২০০০ সালের পূর্বে যারা এসেছে তারাই কেবল এই প্রকল্পের সুবিধা পাবে ফলে স্বাভাবিকভাবেই ২০০০ সালের পরবর্তী বাসিন্দারা সরকারের এই প্রকল্পকে কখনোই মেনে নেবে না।

মন্তব্য করুন