গিজার পিরামিড, খুফুর পিরামিড কাকে বলা হয়: রহস্যে ভরা পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম অদ্ভুত এবং অবাক করা স্থান হল ইজিপ্ট। আর এই স্থানের কথা বললে প্রথমেই মনে পড়ে সপ্তম আশ্চর্যের এক অন্যতম আশ্চর্য পিরামিডের কথা। পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের সর্বপ্রথমে এই পিরামিড নির্মাণ করা হয়েছিল। সেগুলির নির্মাণ হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ৪৫০০ বছর আগে। সারা পৃথিবী জুড়ে অনেক পিরামিড দেখা যায় কিন্তু যদি তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং রহস্যে ঢাকা পিরামিডের কথা বলা হয় তাহলে তা হল গিজার পিরামিড। গিজার পিরামিড সবচেয়ে পুরনো।
৪৫০০ বছর আগে তৈরি এই পিরামিড আজও দাঁড়িয়ে আছে ইজিপ্টের বুকে। আরবি প্রবাদ অনুযায়ী মনে করা হয় পিরামিড সময়কেও হারাতে পারে। এই কথার মানে আজ একভাবে স্পষ্ট। এত বছর ধরে মরুভূমির গরমে টিকে রয়েছে এই পিরামিড গুলি। সাধারণত মানব নির্মিত স্থাপত্য সময়ের সাথে সাথে নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু বালির ঝড়, ভূমিকম্প, মরুভূমির প্রচন্ড উত্তাপ ইত্যাদি এত বছর ধরে সহ্য করেও টিকে রয়েছে পিরামিড গুলি।
মিশরের সবচেয়ে বড় পিরামিড

গিজার পিরামিড, খুফুর পিরামিড কাকে বলা হয়
প্রচলিত আছে এই সমস্ত পিরামিডগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল রাজার মৃত্যুর পর তার দেহকে সুন্দরভাবে সমাধিস্থ করার জন্য। প্রাচীন যুগের লোকেরা মনে করত মৃত্যুর পর মানুষের পুনর্জন্ম হয়। তাই রাজার মৃত্যুর পর তার সমাধিতে প্রয়োজনীয় সামগ্রী এবং ধন-সম্পদ সমাধিস্থ করা হতো। মিশরে এখনো পর্যন্ত ১৩৮ টি পিরামিডের সন্ধান পাওয়া গেছে। মিশরের গিজা শহরে অবস্থিত তিনটি বড় পিরামিড সবচেয়ে প্রসিদ্ধ। এই তিনটির মধ্যে যেটি সবচেয়ে বড় সেটিকে খুফুর পিরামিড বলা হয়। ইজিপ্টের রাজা ছিলেন খুফুর পিরামিড। দ্বিতীয় পিরামিডকে খাফড়ের পিরামিড বলা হয়।
খাকরে ছিলেন রাজা খুফুর পূত্র। পিরামিডের সামনে যে অর্ধ মানব অর্ধ সিংহের মূর্তি রয়েছে তাও এই পিরামিডেরই অংশ। মূর্তি টির নাম হল স্ফিনিক্ম। মূর্তিটিকে নিয়ে প্রচুর সংশয় রয়েছে ইতিহাসবিদদের মনে। কারো কারো মতে রাজা খাফরের মুখ বানানো হয়েছে মূর্তিতে। গিজার এই তিনটি পিরামিডের সবচেয়ে ছোট পিরামিডটি হল মেনকায়ের পিরামিড। খাফরের উত্তরাধিকারী ছিলেন রাজা মেনকায়ের। এই সমস্ত ধারণা গুলো জানা আছে প্রায় অনেকেরই। কিন্তু কিন্তু এগুলি মনে করা যতটা সহজ ততটাই জটিল এর কিছু রহস্য। বর্তমান সময়ে প্রচুর প্রশ্ন নিয়ে অনেকেই ঘুরতে যান বালির শহর গিজাতে। মাত্র কুড়ি বছরের মধ্যে পিরামিড নির্মাণের কাজ শেষ করা হয়েছিল এমনটাই মনে করা হয়।
আরো পড়ুন- ১৯৭২ সালের পাইওনিয়ার-১০ মিশন। পৃথিবী থেকে তৃতীয় সর্বোচ্চ দূরে অবস্থানকারী মহাকাশযান
এমনভাবেই পিরামিড বানানো হয়েছিল যার ফলে পিরামিডের একদিক ৫০০ ডিগ্রি-র সঙ্গে উত্তর দিককে সঠিকভাবে নির্দেশ করে। ইতিহাসবিদরা মনে করেন যখন পিরামিড তৈরি করা হয়েছিল তখন কোনো রকম লোহার যন্ত্র ছিল না। বরং তখন তামার যন্ত্র ও হাতিয়ার ব্যবহার হতো। গবেষণায় দেখা গেছে পিরামিডের ভেতর বেশ কিছু গোপন সুরঙ্গ রয়েছে যেগুলোর সবকটি তদন্ত করা সম্ভব হয়নি আজও। গিজার এই পিরামিডগুলো ভৌগলিক রেখাগুলোর হিসাবে একেবারে কেন্দ্রে অবস্থিত।

এটাই অবাক করা বিষয় যে এই অজানা রহস্য ভরা পিরামিড কিভাবে ভৌগোলিক মাপে নির্মাণ করা হয়েছিল। কারণ সেইসময় জাহাজে করে পুরো পৃথিবী ঘুরে সঠিক মাপ বের করা মোটেও সম্ভবপর ছিল না। হতে পারে এটা কাকতালীয় ঘটনা। কিন্তু এই পিরামিডের পাথর গুলোর ওজন কয়েক টন। হিসাবে দেখা গেছে কুড়ি লক্ষেরও বেশি পাথর সুন্দর ভাবে কেটে নির্মাণ করা হয়েছে এই পিরামিডের। আধুনিক যন্ত্র ছাড়া এত বড় এবং ভারী পাথর সমান করে কেটে এক স্থান থেকে অন্য নিয়ে গিয়ে এই নির্মাণ কাজ করা প্রায় অসম্ভব। এছাড়াও রয়েছে বেশ কিছু অবাক করা রহস্য। যার উত্তর নেই কারো কাছে। অনেকেই এই পিরামিডের রহস্য নিয়ে নানা সম্ভবপর অনুমান দিয়েছে। আর যারা সেগুলো মানতে পারেনি তাদের ধারণা মানুষ নয় বরং ভিনগ্রহীদের দ্বারাই নির্মাণ করা হয়েছিল এই কালজয়ী রহস্যময় পিরামিড। তবে সময়ের সাথে সাথে হারিয়ে যায় অনেক কিছুই তাই হয়তো আজও অজানা রয়ে গিয়েছে পিরামিডের রহস্য।
[…] আরো পড়ুন- গিজার পিরামিড|খুফুর পিরামিড … […]