রহস্যময় কোণার্ক সূর্য মন্দির

কোণার্ক সূর্য মন্দির: প্রায় সম্পূর্ণ ভারতবর্ষ জুড়ে রয়েছে নানা ধরনের শিল্প ভাস্কর্য ও তাদের সম্পর্কিত নানা ধরনের গল্প। যার মধ্যে কোনার্কের সূর্য মন্দির অন্যতম। আর্ক কথার অর্থ হল সূর্য। এটি উত্তর-পূর্ব ভারত বর্ষের উড়িষ্যা রাজ্যের পুরি জেলার কোনার্ক নামক স্থানে অবস্থিত। ১২৫৫ খ্রিস্টাব্দে পূর্বগঙ্গ রাজ বংশের রাজা নরসিংহ দেব এই মন্দির স্থাপন করেন। সম্পূর্ণ মন্দিরটি একটি রথের আকৃতিতে বানানো। সময়ের সাথে সাথে মন্দিরটির মূখ্য ভাগ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।  

rps20200625 175958
ছবি- নিজস্ব

কোণার্ক সূর্য মন্দির

ঐতিহ্যবাহী এই মন্দিরটি ভারতবর্ষের সাতটি আশ্চর্যের মধ্যেও রয়েছে। হিন্দু ধর্ম অনুসারে সূর্য দেবতার পূজা অর্চনার লক্ষ্যেই এই মন্দির স্থাপন করা হয়েছিল। রথের আকৃতিতে বানানো এই মন্দিরটি দেখতে ১২টি চাকা  এবং ৭ টি ঘোড়া বিশিষ্ট। মানা হয় সূর্য দেবতার রথও ১২ চাকা এবং ৭ ঘোড়া বিশিষ্ট।  

আরও পড়ুন- পশ্চিমবঙ্গের উল্লেখযোগ্য কিছু দুর্গ

শুধু তাই নয় এই চাকাগুলির প্রত্যেকটির মধ্যে আটটি করে দন্ড আছে, যা দিনের আটটি প্রহরের প্রতীক ছিল। এছাড়াও এই মন্দিরের গায়ে ১২৮ রকমের  নৃত্যকলার মূর্তি দেখা  যায়। যাদের মধ্যেম নিপুরী , ভারতনাট্যম নামক  নানা ধরনের  নিত্য কলার নিদর্শন রয়েছে। শুধু তাই নয় এই মন্দিরের গায়ে আরো যত রকমের শিল্পকলার নিদর্শন দেখা যায় তা আজও মানুষের মনকে মুগ্ধ করে। শুধু ভারত নয় বিশ্ব দরবারের শিল্পপ্রীয় মানুষকে অবাক করে এই মন্দিরের শিল্প ও ভাষ্কর্য।  

rps20201109 135022
ছবি- নিজস্ব

আশ্চর্যের বিষয় এই যে সম্পূর্ণ মন্দিরটি পাথর এবং লোহার রড দ্বারা নির্মিত এতে কোনো রকম সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়নি। এবং জানা যায় এই মন্দিরটির চূড়ায় একটি বিশাল আকৃতির চুম্বক  স্থাপিত ছিল। যা বিশালাকৃতির এই মন্দিরটির ভারসাম্য রক্ষা করত।  

যখন থেকে ইংরেজরা ভারতে আধিপত্য জমাতে শুরু করে তখন থেকে পুরি একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দরে পরিণত হয়। সেই সময় মন্দিরের চুড়ার ওই শক্তিশালী চুম্বকের প্রভাবে তাদের জাহাজ দিক ভষ্ট  হত, তাই তারা এই মন্দিরের উপর স্থাপিত চুম্বক সরিয়ে দেয়। আর এরপর থেকে মন্দিরটির ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং এটি ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায়।

আরো পড়ুন- গিজার পিরামিড|খুফুর পিরামিড কাকে বলা হয়

এই মন্দিরটি নিয়ে জনমানুষের মধ্যে রয়েছে আরও নানা ধরনের মত। কারো কারো মতে মন্দিরটিতে আগে পূজা-অর্চনা হলেও এখন তা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়েছে।আবার কেউ কেউ মনে করেন যে প্রথম দিন থেকেই এই মন্দিরে কোন পূজা অর্চনা হয়নি। তবে এই বিষয়ে একটি গল্প প্রচলিত আছে। তা হল – রাজা নরসিংহ দেবর আদেশ ছিল যে এই মন্দিরটি নির্মাণ এর কাজ ১২০০ কর্মী করবে। এবং নির্মাণ কাজ ১২ বছরের মধ্যেই শেষ করতে হবে। না একদিনও কম বেশি, না একজনও কর্মী কম বেশি। এদিকে নির্মাণে কর্মরত এক কর্মীর পূত্র ১২ বছর ধরে তার পিতাকে দেখেনি বলে দেখা করতে কোনার্কের মন্দিরে আসেন। সেখানে তার পিতার সঙ্গে দেখা হয়। সেই সময় মন্দিরে মঙ্গলঘট বসাতে কেউ সক্ষম হচ্ছিল না। তাই তাদের সাহায্য করতে কর্মী পূত্র ধর্মদাস সেই কাজ সম্পন্ন করে।

কিন্তু রাজার আদেশ ছিল ১২০০ কর্মীর একজনও বেশি হলে সকলকে হত্যা করা হবে। তাদের বাঁচাতে তাই ধর্মদাস মন্দিরের চুড়া থেকে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা করে। এই কারনে মন্দির টি অপবীত্র হয়। তাই প্রথম দিন থেকেই এতে পূজার কাজ বন্ধ হয়। আজ মন্দিরটির অধিকাংশ অংশই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।এবং এই ধ্বংসাবশেষ কোণার্ক জাদুঘরে সুসজ্জিত করে রাখা হয়েছে। যাইহোক সবশেষে বলা যায় মন্দিরটিতে পূজা-অর্চনা না হলেও কোনার্কের এই মন্দিরটির শিল্প ও ভাস্কর্যের অন্যতম নিদর্শন হয়ে রয়েছে।

Leave a Reply