অস্ট্রেলিয়ার 10 টি ঐতিহ্যবাহী স্থান, heritage places in Australia in bengali: আজকের এই নিবন্ধটি অস্ট্রেলিয়ার সেরা দশটি ঐতিহ্যবাহী স্থান সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। এই ঐতিহাসিক ভ্রমণের স্থান গুলির মধ্যে মুনগো জাতীয় উদ্যান, সিডনি অপেরা হাউস, গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ, হাঙ্গর উপসাগর, রয়েল প্রদর্শনী ভবন উল্লেখযোগ্য।
১. মুনগো জাতীয় উদ্যান (Mungo national park):

অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব প্রান্তে নিউ সাউথ ওয়েলসের কাছে এই মুনগো জাতীয় উদ্যানটি অবস্থিত। অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরা থেকে জাতীয় উদ্যান ৭৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি অস্ট্রেলিয়ার ভ্রমণ স্থান গুলির মধ্যে একটি, জায়গাটি মরুভূমির মতো ছোট-বড় টিলায় ভর্তি। আপনাকে এই জায়গা টি উপভোগ করতে হলে নিজের দুই চাকা বা চার চাকা গাড়ি নিয়ে যেতে পারেন।
বিদেশীদের জন্য বিভিন্ন সংস্থার গাড়ি রয়েছে। এই উদ্যানটি ‘unesco এর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’ গুলির মধ্যে একটি। ২৮০০ বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত এই উদ্যানটি। যার মধ্যে প্রায় ১৭ থেকে ১৮ টি ছোট ছোট হ্রদ রয়েছে। এর মধ্যে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম শুকনো হ্রদও রয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার 10 টি ঐতিহ্যবাহী স্থান
২. উবির পাহাড় (Ubirr rock):

‘উবির পাহাড়’ কাকাডু জাতীয় উদ্যানে অবস্থিত। উবির পাহাড় একটি ২৫০ মিটার উঁচু টিলা, যে পাহাড়ে প্রাচীনকালে বিভিন্ন আদিবাসীদের আঁকা ছবি দেখা যায়। এই ছবি গুলো কে প্রত্নতাত্ত্বিকরা অন্যতম সেরা ছবি বলেছেন। এই সব ছবি গুলির মধ্যে মাছ, কচ্ছপ ও বিভিন্ন জলজ প্রাণীর ছবি রয়েছে। উবির পাহাড়ের তলদেশ মসৃণ হওয়ায় তা ছবি আঁকার জন্য যথেষ্ট উপযোগী ছিল সেই সময় বলে মনে করেন প্রত্নতাত্ত্বিকবিদরা।
৩. সিডনি অপেরা হাউস (Sydney Opera House):

সিডনি অপেরা হাউস অস্ট্রেলিয়ার ঐতিহ্যপূর্ন স্থান গুলির মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর। আপনি যদি অস্ট্রেলিয়া ভ্রমনে যান তবে অপেরা হাউস না দেখলে মিস করবেন। সিডনি অপেরা হাউসে নাচ, গানের অনুষ্ঠান, বিভিন্ন ধরনের ছবি প্রদর্শনীর সহ কফি হাউস, রেস্তোরাঁ, হোটেল ইত্যাদির ব্যবস্থা রয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ায় এই হাউস টি তৈরি করা শুরু হয় ১৯৫৯ সালে এবং এর সমাপ্তি হয় ১৯৭৩ সালে। দর্শকদের জন্য ১৯৭৩ সালের ২০ অক্টোবর এটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। নির্মাণে এত বছর সময় লাগার কারণ হলো তৎকালীন স্থানীয়দের আন্দোলন।
অপেরা হাউস বিশ্বের সাতটি আশ্চর্যের মধ্যে অনুমদিত হয়েছিল। গ্রীনিস বইতে এর নাম রয়েছে। সিডনি অপেরা হাউস অস্ট্রেলিয়ার প্রতীক হিসাবে বিভিন্ন ভ্রমণ সংস্থা গুলিতে ব্যাবহৃত হয়।
৪. ফ্রেজার দ্বীপ (Fraser Island):

অস্ট্রেলিয়ার ফ্রেজার দ্বীপ অস্ট্রেলিয়ার ভ্রমণ স্থান গুলির মধ্যে অন্যতম। এই দ্বীপে সমুদ্র সৈকতের উপর দিয়ে আপনি চার চাকার গাড়ি চালিয়ে যেতে পারবেন। এই সমুদ্র সৈকতে বিভিন্ন ছোট ছোট রিসোর্ট আছে। দ্বীপটির আয়তন প্রায় ১৬০০ বর্গ কিলোমিটার, অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেন শহর থেকে প্রায় ৩৫৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি বিশ্বের বৃহত্তম বালির দ্বীপ হিসাবেও পরিচিত।
আরো পড়ুন- আশ্চর্য এক সমুদ্র, যেখানে কোনো প্রাণী বা বস্তু ডুবে যায় না
৫. বৃহৎ প্রবাল প্রাচীর (Great barrier reef):

অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের কাছে পৃথিবীর বৃহত্তম প্রবাল প্রাচীর এর সিস্টেম বা great barrier reef অবস্থিত। প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার জায়গা জুড়ে এই প্রবাল প্রাচীর এর সিস্টেম রয়েছে। সেখানকার সিস্টেমে বিভিন্ন বিলুপ্ত প্রায় প্রাণী থেকে শুরু করে স্টার ফিশ, ক্লাউন ফিশ, স্টোনি কোরাল এর অস্তিত্ব রয়েছে।
এখানে মাছের ১৫০০ প্রজাতি, সামুদ্রিক কচ্ছপের ৬ টি প্রজাতি, সামুদ্রিক সাপের প্রায় ২০ টি প্রজাতি বসবাস করে। এখানকার তাপমাত্রা ২১ ডিগ্রী থেকে ২৮ ডিগ্রী এর মধ্যে থাকে। এই কারণেই এখানে কোরাল প্রজাতির বসবাসের স্থান হয়ে উঠেছে।
heritage places in Australia in bengali
৬. সার্ক উপসাগর(Shark bay):

অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম প্রান্তে সার্ক উপসাগর অবস্থিত। পার্থ শহর থেকে সার্ক উপসাগরের দূরত্ব ৮০০ কিলোমিটার। এই ‘সার্ক বে’ Unesco এর পৃথিবীতে ঐতিহ্যপূর্ন স্থান গুলির মধ্যে একটি। এই উপ সাগরের আয়তন প্রায় ২৩ হাজার বর্গকিলোমিটার। সামুদ্রিক সার্কের উপস্থিতির জন্য এই সাগরের নাম সার্ক উপসাগর।
এই সাগরে অনেক ছোট ছোট দ্বীপ রয়েছে যা ভ্রমণকারীদের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। সার্ক বে এর উপকূল রেখাটি প্রায় ১৫০০ কিলোমিটার লম্বা। ১৯৯১ সালে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ঐতিহ্য হিসেবে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ প্লেসে মনোনীত হয়।
৭. অস্ট্রেলিয়ান কনভিক্ট সাইটস (Australian Convict Sites):

অস্ট্রেলিয়ান কনভিক্ট সাইটস অস্ট্রেলিয়ার ঐতিহ্যপূর্ণ স্থান গুলির মধ্যে একটি। এই স্থানটিও ‘unesco ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটস’ এর মধ্যে একটি। ১৮ থেকে ১৯ শতকে ব্রিটিশ রাজ চলাকালীন এই স্থাপত্য টি নির্মাণ করা হয়েছে।
৮. পূর্ণুলুলু জাতীয় উদ্যান (purnululu national park):

পূর্নলুলু জাতীয় উদ্যান অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত। এই জাতীয় উদ্যানটি বিভিন্ন প্রাকৃতিক পাহাড়-টিলা দ্বারা গঠিত, টিলা গুলি দেখতে খুবই সুন্দর হয়। এই উদ্যানে একটি টিলা আছে যার নাম ‘বাংলো বাংলো’। টিলাটি পর্যটকদের জন্য খুবই বিখ্যাত, বছরের পর বছর ধরে বায়ু, ধুলো- বালির প্রভাবে টিলাটি ক্ষয় হয়ে মসৃন ও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। অস্ট্রেলিয়ায় এই জাতীয় উদ্যানটি ২০০৩ সালে Unesco পৃথিবীর ঐতিহ্য গুলির মধ্যে একটি তে সামিল করা হয়েছে।
[…] […]