অস্ট্রেলিয়ার সিডনি অপেরা হাউস

সিডনি হলো অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস অঙ্গ রাজ্যের রাজধানী। সিডনির মূল আকর্ষণ হলো সিডনি অপেরা হাউস। এটি নিয়ে রয়েছে মানুষের অনেক কৌতুহল। এই অপেরা হাউস আসলে নানা রকমের শিল্পকলার প্রদর্শনী ভবন। 

সিডনি বন্দরের বেনেলং পয়েন্টে এই অপেরা হাউস টি রয়েছে। এই শিল্প প্রদর্শনী ভবনটি দেখতে অনেকটাই নৌকার পাল এর মত। এই কলা ভবনটির সৌন্দর্য ও ভাস্কর্য দেখে মুগ্ধ হয়েছে গোটা বিশ্ব। ভবনটির আকর্ষণই মূলত এটিকে অস্ট্রেলিয়ার প্রতীক করে তুলেছে গোটা দুনিয়ার কাছে। তবে লিখিতভাবে এটি অস্ট্রেলিয়ার প্রতীক নয়। শুধুমাত্র অধিক পরিচিত হওয়ার কারণে অস্ট্রেলিয়ার কথায় সবার আগে এই স্থাপত্যটির কথাই মনে পড়ে। 

আরও পড়ুন – ভারতের এক অদ্ভুত কারাগার সমুদ্রের মধ্যে

এই দারুন সুন্দর স্থাপত্যটির নকশা যিনি তৈরি করেছিলেন তার নাম হলো জর্ন উটজন। তিনি জন্মেছিলেন ১৯১৮ সালের ৯ই এপ্রিল এবং মারা যান ২৯ শে নভেম্বর ২০০৮ সালে। তিনি ডেনমার্কের বাসিন্দা ছিলেন। বিশিষ্ট এই স্থপতি প্রিজকর পুরস্কার পেয়েছিলেন। তার দ্বারা গঠিত এবং নির্মিত স্থাপত্য শিল্পের অন্যতম হল – সিডনি অপেরা হাউস। তার আরও বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য কলা হল – ব্যাগসওয়ার্ড চার্চ, কুয়েত জাতীয় সংসদ ভবন ইত্যাদি।

সিডনি অপেরা হাউস এর নকশা বানানোর জন্য ১৯৫৭ সালে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। আর জর্ন উটজন এই প্রতিযোগিতাটি জিতেছিলেন। এইরকম প্রতিযোগিতা তিনি আগেও জিতেছিলেন। তাঁর আঁকা নকশা টি বেশ উন্নত মানের ছিল। 

সিডনি অপেরা হাউস

নিউ সাউথ ওয়েলসের সরকার এই স্থাপত্যটি নির্মাণের অনুমতি দিয়েছিল ১৯৫৮ সালে। তবে এটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ১৯৫৯ সালের ২রা মার্চ। নানা সমস্যার মধ্যে কাজ চলছিল এটি নির্মাণের। তবে পরিস্থিতি নানান দিক থেকে জটিল থেকে জটিলতর হতে থাকে। আর এর খরচ ক্রমশ বাড়তে থাকে। প্রথমে 22.9 মিলিয়ন ডলার থেকে পড়ে তা বেড়ে দাঁড়ায় 130 মিলিয়ন ডলারে। 

এটি নির্মাণ করতে প্রায় ১০ হাজার কর্মী লেগেছিল। এই কলা ভবনটি প্রায় ১৪ একর জমির উপর নির্মাণ করা হয়েছিল। এটির গঠন এতটাই জটিল ছিল যেমন অর্থব্যয় হচ্ছিল নির্মাণে তেমনি বারংবার নকশাতেও পরিবর্তন করতে হয়েছিল। 

রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ১৯৭৩ সালের ২০ শে অক্টোবর এই কলাভবন আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। এটি দৈর্ঘ্যে প্রায় ৬০০ ফুটের বেশি আর এর প্রস্থ প্রায় ৩৯৪ ফুট। এই অপেরা হাউসের বৈদ্যুতিক কাজ কর্মের জন্য ৬৪৫ কিমি দৈর্ঘ্যের বৈদ্যুতিক তার ব্যবহার করা হয়েছে। 

এই অপেরা হাউস টির মধ্যে রয়েছে ২৭০০ জনের ধারণক্ষমতা সম্পন্ন কনসার্ট হল, ৫৫০ আসন সম্পন্ন ড্রামা থিয়েটার এবং একটি বড় স্টুডিও এছাড়াও রয়েছে প্রায় ১৫০০ আসন বিশিষ্ট অপেরা থিয়েটার। 

এই কলাভবন ঘুরে দেখতে সারা বিশ্ব থেকে প্রতিবছর প্রায় ৮০ লক্ষ দর্শনার্থীরা আসে। অপেরা হাউসের ভিতর নানা অনুষ্ঠানের পাশাপাশি প্রতিদিন সন্ধ্যায় এই অপেরা হাউজ এর ওপর করা হয় বিশেষ আলোর প্রদর্শনী। ২০০৭ সালে ইউনেস্কো এই অপেরা হাউস কে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এইরকম অত্যাধুনিক এবং বিশিষ্ট এই স্থাপত্যটি কিছু কারণবশত বিশ্বের আশ্চর্য গুলির একটি হওয়ার তালিকা থেকে বাদ পড়লেও মানুষের কাছে এর আকর্ষণ দেখার মত। 

“অস্ট্রেলিয়ার সিডনি অপেরা হাউস”-এ 1-টি মন্তব্য

Leave a Reply