শূন্যে ভাসমান ফুলের বাগান। পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান

পৃথিবী এক আশ্চর্য গ্রহ। এই গ্রহে অদ্ভুত আশ্চর্য এমন অনেক বিষয় আছে যেগুলি আজও রহস্যে। গ্রহ সৃষ্টির কারণ থেকে শুরু করে অতীতে অনেক কিছুই আজও অজানা আশ্চর্য রহস্যের। এক্ষেত্রে বলা যেতেই পারে যেমন পৃথিবীর সৃষ্টি কিভাবে হলো, কিভাবে সৃষ্টি হলো মানব জাতীর। সঠিক ধারণা বিজ্ঞানীরা দিতে সক্ষম হলেও সম্পূর্ণটাই গবেষণা ও অনুমানের ভিত্তিতে। আমাদের এই আশ্চর্য গ্রহে আশ্চর্য করার মতো বস্তুর অভাব নেই। সে প্রাকৃতিকই হোক বা মনুষ্যসৃষ্ট। মনুষ্যসৃষ্ট আশ্চর্য সৃষ্টি এই গ্রহে অবশ্য হাতে গোনা কয়েকটা। এই আশ্চর্য নির্মাণ গুলির সংখ্যা সাত টি যে কারণে এগুলি সপ্তম আশ্চর্য নামেও পরিচিত আমাদের কাছে।  

পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান

ফুলের বাগান সকলেরই প্রিয়। বিভিন্ন রং-বেরংয়ের ফুলে মন আপ্লুত হওয়াটা স্বাভাবিক। মনকে প্রশান্ত করতে সুন্দর একটি ফুলের বাগানেই যথেষ্ট। আর এমনি ফুলের বাগান যদি একটু অস্বাভাবিক ভাবে মাটি থেকে অনেকটা ওপরে নির্মিত হয় তবে তাকে সপ্তমাশ্চর্যের একটা আশ্চর্য বলা যেতেই পারে। এমনই এক বাগান আজ থেকে বহু বছর আগেই তৈরি করা হয়েছিল। যা ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান নামে পরিচিত। পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের একটি আশ্চর্য। ইরাকের মরুভূমির মাঝে ইউফ্রেটিস নদীর তীরে আজ থেকে প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দে নির্মাণ করা হয় এই আশ্চর্য ঝুলন্ত উদ্যানটি।  

আরও পড়ুন- কেমন ছিল বিজ্ঞান ভিত্তিক লিওনার্দো

ইরাকের ব্যাবিলন শহর টি মরুভূমি দ্বারা বেষ্টিত হওয়ায় ফুলের বাগান গড়ে তোলাটা একটু অসম্ভবই বটে। যেখানে মরুভূমিতে উদ্ভিত জন্মানোটা সম্ভব নয়। তবে এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন ব্যাবিলনের রাজা নেবুচাদনেজার।শাহজাহান যেমন তার স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শনের জন্য তাজমহল নির্মাণ করেন, ঠিক তেমনি রাজা নেবুচাঁদনেজার তার স্ত্রীর বিনোদনের জন্যই এটি নির্মাণ করেছিলেন। তবে এক্ষেত্রে এটি সমাধি-সৌধ ছিলনা, এটি নির্মিত হয়েছিল রানীর বিনোদনের উদেশ্যে।  

স্ত্রীর বিনোদনের উদ্দেশ্যে বাগান তৈরীর জন্য এক বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন রাজা। কারণ জলের অভাবে সাধারণভাবেই উদ্যান তৈরি অসম্ভব ছিল। তিনি প্রথমেই পাহাড় সমান একটি ভিত তৈরি করেন। যেটির আয়তন ছিল ৮০০ বর্গফুট। তারপরে এটিকে কয়েকটি স্তরে ভাগ করে তার চারপাশ দিয়ে তৈরি করেন বিশাল বারান্দা। এবং তিনি এই বারান্দাতেই নানা রঙের নানা প্রজাতির ফুল ও গাছ লাগিয়ে এটিকে সাজিয়ে তোলেন।  

এই ভিত্টিকে রাজা নেবুচাদনেজার স্থাপন করেন তার উপাসনালয়ের বিশাল ছাদে। সমস্ত নির্মাণকার্য সম্পন্ন হওয়ার পর এর উচ্চতা দাড়িয়েছিল মাটি থেকে ৮০ ফুট উপরে। এই ভিতএর উপরে সুসজ্জিত ফুলের বাগান- ই ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান নামে পরিচিত। ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান বানাতে কতজন শ্রমিক লেগেছিল, কিভাবে এটি তৈরি হয়েছিল এবং কতজন মালী দের কাজে নিয়োজিত করা হয়েছিল এবার সেটাই জেনে নেওয়া যাক। ৮০০ বর্গফুট আয়তনের এবং ৮০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত ঝুলন্ত উদ্যান ৪০০০ শ্রমিকের রাতদিন অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল। নির্মাণের পর এটি পরিচর্যার জন্য ১০৫০ জন মালী নিয়োগ করা হয়। যারা প্রতিদিন এটির যত্ন নিত ও পরিচর্যা করতো।  

পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান

ঝুলন্ত উদ্যান টিতে নানা রকম ফুলের চারা রোপণ করা হয়েছিল। আনুমানিক প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার রকমের বিভিন্ন প্রজাতির অতীব সুন্দর ফুলের চারা রোপণ করা হয়েছিল উদ্যানটিতে। ফুলের চারা গুলিতে জল দেওয়ার জন্য এর ভিতরেই তার ব্যবস্থা করা হয়। মাটি থেকে ৮০ ফুট উচ্চতায় জল তুলে নিয়ে গাছে জল দেওয়া এটা এক প্রকার অসম্ভব ছিল। সে কারণে বাগানের সুউচ্চ ধাপ গুলিতে জল ওঠানোর ব্যবস্থা করা হয় নদী থেকে। একটি মোটা পেচানো নল উদ্যানের ভিতরে স্থাপন করা হয়েছিল। যে নল দিয়ে নদীর জল সরাসরি গাছগুলি কাছে পৌঁছানো হতো। উদ্যান দেখলে মনে হতো যেন শূন্যে ভাসমান যে কারণে এমন নামকরণ করা হয়েছিল।   

তবে ব্যাবিলনের ভাসমান উদ্যান নিয়ে বিতর্কেরও অন্ত নেই। নানাজনের নানা মত গড়ে উঠেছে উদ্যান ঘিরে। কারো কারো মতে ঝুলন্ত উদ্যান কল্পনামাত্র। আধুনিক গবেষকদের মধ্যে বেশিরভাগ গবেষকদের কাছে ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান সাহিত্যিকদের কল্পনানির্মিত। তবে বিভিন্ন গ্রন্থে ও পুরাণে এই ঝুলন্ত উদ্যান সম্পর্কে অনেক লেখায় পাওয়া যায়। প্রথমে এ বিষয়ে যে লেখা টি পাওয়া গিয়েছিল সেটা আজ থেকে প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ সালের দিকে লেখা। এটির লেখক ছিলেন ব্যবনিয়ান পুরোহিত বেরোসাস। পরবর্তীকালে ব্যাবিলনের নিয়ে যত লেখা পাওয়া যায় তার অধিকাংশ লেখাই এই লেখাকে ভিত্তি করেই লেখা হয়।  

নানা বিতর্কে কারণে অনেকেরই মনে প্রশ্ন জাগতে থাকে ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যানের অস্তিত্বকে ঘিরে। পরবর্তীকালে ১৮৯৯ সালে জার্মান প্রত্নতাত্ত্বিক রবার্ট কোল্ডওয়ে ব্যাবিলন শহরে খননকার্য শুরু করেন। এর ফলে তিনি সেখানে রাজা নেবুচাদনেজারের দুর্গ, প্রাসাদ, প্রাচীর এবং সবশেষে ১৪টি ঘর বিশিষ্ট একটি স্থান খুঁজে পান। এই স্থানটির ছাদ ছিল পাথর দ্বারা নির্মিত। এই সমস্ত আবিষ্কার ব্যাবিলনের অস্তিত্তের প্রমাণ কে আরও জোরালো করে তোলে।

“শূন্যে ভাসমান ফুলের বাগান। পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান”-এ 1-টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন