ইস্টার আইল্যান্ডের রহস্য। মোয়াই কী?

Easter Island
Easter Island

আমাদের পৃথিবী প্রচুর রহস্যের ঝুলি। এখানে একটা রহস্য জাল ছাড়াতে ছাড়াতে মানুষকে চিন্তায় ফেলে দেয় আরো কত রহস্য। পৃথিবীর বুকে এমনই অনেক অদ্ভুত কিছু বস্তু বা ঘটনার মধ্যে একটি রহস্য হয়ে রয়েছে ইস্টার আইল্যান্ড। কম্পিউটারের যুগে পুরো পৃথিবী কে ছোট মনে হলেও ইস্টার আইল্যান্ডের মত কিছু জায়গা পৃথিবীতে থেকেও চেনা জানা দুনিয়া থেকে আলাদা হয়ে রয়ে গিয়েছে। দ্বীপটি মোটামুটি বড় দ্বীপ বলা যায়। লম্বায় ১৫ মাইল এবং প্রায় ১০ মাইল বিস্তৃত এই দ্বীপটি। স্বতন্ত্রভাবে রয়েছে দ্বীপটি। 

ইস্টার আইল্যান্ডের রহস্য, মোয়াই কী

বলা হয় এই দ্বীপের প্রাচীন বাসিন্দারা সর্বপ্রথম এই দ্বীপটির নামকরণ করে রাপা নুই নামে। দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত এই দ্বীপ চিলি দেশের অন্তর্গত। সমগ্র বিশ্বের মানচিত্র অনুযায়ী ইস্টার আইল্যান্ড অন্যান্যদের তুলনায় অনেকটাই বেশি দূরে অবস্থিত। কারণ দ্বীপটি চিলি দেশ থেকে ৩৬৮৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এর সব থেকে কাছের একটি দ্বীপ রয়েছে। তবে তার দূরত্ব খুব কম নয়। এর সবচেয়ে কাছের দ্বীপটি হল পিটকার্ন দ্বীপ। আর এই দ্বীপটি রাপানুই অর্থাৎ ইস্টার আইল্যান্ড থেকে আঠেরশো ছাব্বিশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ইস্টার আইল্যান্ড ঘুরতে যাওয়ার জন্য বিমানের ওপরই নির্ভর করা হয়। বর্তমানে এটি একটি পর্যটনকেন্দ্র। বিমানে করে গেলেও চিলি থেকে যেতে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা সময় লাগে। 

এই দ্বীপে আসলে দেখতে পাওয়া যায় অনেকগুলি পাথরের মূর্তি। এখানে প্রায় ৮৮৭ টি পাথরের মূর্তি রয়েছে। এই সমস্ত পাথরের মূর্তি গুলি মোয়াই নামে পরিচিত। মূর্তিগুলি একটু অদ্ভুত প্রকৃতির দেখতে। মূর্তিগুলির শুধু মুখমন্ডল সাড়া দ্বীপে ছড়ানো থাকতে দেখা যায়। এগুলোর মুখমন্ডল লম্বা। এছাড়াও এর নাকগুলি লম্বা প্রকৃতির দেখতে। গভীর চোখ রয়েছে মূর্তি গুলিতে। এদের ঠোঁটগুলো বেশ চওড়া। কানগুলি দেখতে আবার সরু লম্বাটে প্রকৃতির আয়তক্ষেত্রের মত মাথার দুপাশে রয়েছে।

আরও পড়ুন – বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের রহস্য

প্রথমদিকে সকলেই মূর্তিগুলি দেখে মনে করত এগুলো শুধুমাত্র মাথাটুকু তৈরি কিন্তু তা নয়। ২০১২ সালে খনন কার্য চালিয়ে এই সকল মূর্তির মাটির নিচে দেহের বাকি অংশ খুঁজে পাওয়া যায়। প্রথমে অবাক হতে হয় এই দ্বীপের এতগুলি মূর্তি নিয়ে। রহস্য আরও ঘনীভূত হয় যখন মূর্তির মাথা সাথে সাথে মাটির নিচে দেহ খুঁজে পাওয়া যায়। প্রত্যেকটি মূর্তির উচ্চতা আলাদা আলাদা তবে সবথেকে উঁচু মূর্তি টি হল ৩৩ ফুট। অন্যান্য মূর্তিগুলির উচ্চতা প্রায় এক। ১৪০০ টন এর কাছাকাছি ওজন মূর্তি গুলির।

ইস্টার আইল্যান্ডের রহস্য

এই মুর্তী গুলি কারা এবং কেন বানিয়েছিল সেটা নিয়ে গবেষণা কাজ চলছে। কেনই বা সারা দ্বীপ জুড়ে মূর্তিগুলি ছড়িয়ে রয়েছে এটা একটি বড় প্রশ্ন। অবাক হতে হয় কিভাবে মূর্তিগুলোকে স্থাপন করা হয়েছিল তা ভেবে। কারণ সেই সময় এখনকার মতো আধুনিক যন্ত্র ছিলনা। মনে করা হয় দ্বীপটিতে একটি আগ্নেয়গিরির ছিল আর সেখানকার পাথর দিয়েই মূর্তিগুলি নির্মিত। 

কিছু কিছু অনুসন্ধান থেকে মনে করা যায় বেশ প্রাচীনকালে এখানে কিছু জনগোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করতো। সম্ভবত তারা এইসব মূর্তিগুলি নির্মাণ করেছিল। তাদের কিছু কংকাল খুঁজে পাওয়া যায়। তাদের ডিএনএ পরীক্ষা দ্বারা জানা যায় তাদের সঙ্গে আমেরিকার মানুষের মিল তেমন নেই। পরীক্ষা থেকে মনে করা হয় তারা এশিয়া থেকে আগত। কিন্তু সেখান থেকে এই দ্বীপে এসে পৌঁছানোর ঘটনাটা খুবই অস্বাভাবিক মনে হয়। তাদের পক্ষে এই সমস্ত মূর্তি প্রতিস্থাপন সম্ভব নয় এমন দাবি করে অনেকেই। আর একটি অদ্ভুত বিষয় হলো এই যে যখন এই দ্বীপটি খুঁজে পাওয়া যায় তখন দ্বীপে কোন লোকজন ছিল না। এই দ্বীপ থেকে একটা জনগোষ্ঠী কিভাবে উধাও হলো এটাও একটা রহস্য। কারো কারো মতে ইউরোপীয় উপনিবেশিক দের আগমনে নানা রোগ সেখানে ছড়ায় এবং তাদের সঙ্গে আসা ইঁদুর ফসলের ক্ষতি বাড়িয়ে দেয়। যা সেখানকার পরিবেশ মোকাবেলা করতে না পারায় ধীরে ধীরে এখানকার জনগোষ্ঠী শেষ হয়ে যায়। তবে সকল ঘটনা কবে সম্পূর্ণ জানা যাবে তা না বলা গেলেও তার আকর্ষণ থেকে যাবে চিরকাল তা বলাই বাহুল্য। 

Previous articleকয়েকটি সৌভাগ্য সূচক পাখি। বিশ্বের এমন কিছু পাখি যেগুলি সৌভাগ্যের প্রতীক
Next articleমহালয়া কী? মহালয়ার তর্পণ এর সূচনা রহস্য
আমরা Extra Gyaan এর সদস্যরা পেশাগতভাবে ব্লগিং এর সঙ্গে যুক্ত। আমরা ইন্টারনেট, প্রযুক্তি, নাসা, মহাকাশের বিভিন্ন তথ্য, শিক্ষাগত দিক ও খেলাধুলার বিষয়ে নিবন্ধ লিখে থাকি সম্পূর্ণ বাংলা ভাষায়। আমাদের উদ্দেশ্য হলো বাংলা ভাষায় আপনাদের সামনে সেরা তথ্য তুলে ধরা।

1 COMMENT

Leave a Reply