পশ্চিমবঙ্গের ঝিনুক মাশরুম চাষের অগ্রগতি। ওয়েস্টার মাশরুম চাষ ও ব্যবসা পদ্ধতি

সারা বিশ্বে প্রায় ৫০ হাজারেরও বেশি মাশরুম এর প্রজাতি রয়েছে। তার মধ্যে বেশিরভাগই বিষাক্ত বা খাওয়ার অযোগ্য। তবে ১০ হাজারের কিছু বেশি মাশরুমের প্রজাতি গবেষণা ও রেকর্ডে আছে।  

তার মধ্যে 20 টি প্রচলিত মাশরুম রয়েছে যেগুলি হল:
বাটন মাশরুম, ক্রেমিনি মাশরুম, ওয়েস্টার মাশরুম, পোর্টাবেলো মাশরুম, কিং ওয়েস্টার মাশরুম এছাড়াও রয়েছে চেন্টারেল, পোরমিনি, হেজহগ, চিকেন অফ দ্য উড, ব্ল্যাক ট্রামপেট, উড ব্লিউইট, মোরাল, এনোকি, সিমেজী, লায়ন্স মেনি প্রভৃতি প্রজাতি।

ওয়েস্টার মাশরুম চাষ ও ব্যবসা পদ্ধতি

পশ্চিমবঙ্গের মূলত দুটি প্রজাতির মাশরুমই চাষ করা হয়। বাটন মাশরুমওয়েস্টার মাশরুম।ভারতের অন্যান্য জায়গার মত পশ্চিমবঙ্গেও রয়েছে এর ব্যাপক প্রচলন। অনেকেই এই মাশরুম চাষের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের সব থেকে বেশি চাষ করা হয় ওয়েস্টার মাশরুম। তবে শীতের সময় কেউ কেউ করে থাকেন বাটন মাশরুমও। ওয়েস্টার মাশরুম বা ঝিনুক মাশরুম প্রায় সারা বছর চাষ করা হয়।

এই মাশরুমগুলো ঝিনুক এর মত দেখতে বলেই এগুলোর নাম হয়েছে ওয়েস্টার বা ঝিনুক মাশরুম। সাধারণত বাড়িতে ফার্ম করে চাষ করে থাকেন অনেকেই যারা এর কাজের সঙ্গে যুক্ত তারা এই মাশরুম কাঁচা ও শুকনো দুইভাবেই বিক্রি করেন। কাঁচা মাশরুম গুলি তারা মূলত সবজি বাজারে বিক্রি করে থাকেন। তবে মূলত তারা নানা কোম্পানির কাছে মাশরুম বিক্রি করে।

আরো পড়ুন- কি এই হাইড্রোপনিক কাল্টিভেশন এবং কিভাবে করা হয়?

নানা ধরনের কোম্পানি যারা খাদ্য দ্রব্য তৈরি করে তারা সেই খাদ্যদ্রব্যে পুষ্টিকর উপাদান হিসাবে এই মাশরুম ব্যবহার করে। যেমন – নুডুলস, হরলিক্স প্রকৃতি এই জাতীয় খাদ্য সামগ্রী।  

মাশরুমের স্পন বা বিজ কিনে সেগুলিকে চুন ব্যভিস্টিং ইত্যাদি জলে পরিশোধন করা বিচুলি বা খড়ের মধ্যে স্থাপন করা হয়। খরকে ছোট ছোট টুকরো করে পরিশোধন করা হয়। পরিশোধন করা খরকে প্যাকেটে বিজ দিয়ে স্তরে স্তরে সাজিয়ে বেড বা সিলিন্ডার তৈরি করা হয়। মাশরুম বেরোনোর জন্য বেড গুলির গায়ে ছোট ছোট ফুটো করে দিতে হয় প্রায় এরপর ১৫-২০ দিন কেটে গেলে মাশরুমের ছোট ছোট কুরি বেরোতে শুরু করে যাতে কুরি গুলি শুকিয়ে না যায় তার জন্য দিনে দু তিনবার জল স্প্রে করতে হয়।এই বেড গুলিকে দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় এতে করে জায়গা কম লাগে।

এই ঝিনুক মাশরুম এর জন্য শ্রেষ্ঠ তাপমাত্রা হলো ২০° সে থেকে ৩০° সে। বেড তৈরি করলে তিন মাস অবধি তিনবার ফলন পাওয়া যায়। ২৫ থেকে ৩০ দিন পর মাশরুম পারা হয়। সম্পূর্ণ চাষের ঘটনাটি বিশেষ পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে করা হয়। এরপর মাশরুম গুলোকে শুকাতে দেয়া হয়। সেগুলিকে শুকিয়ে প্যাকেট করে নানা কোম্পানির কাছে বিক্রি করা হয়।

এই চাষ বর্তমানে স্বনির্ভর করছে অনেক পরিবারকে। আস্তে আস্তে মানুষের খাদ্যাভাসে অংশ নিচ্ছে মাশরুম। বাংলার অনেকেই মাশরুমে অভ্যস্ত না থাকলেও শরীর স্বাস্থ্যের দিকে নজর রেখে অনেকেই মাশরুমকে খাদ্যতালিকায় বিশেষ মান দিচ্ছে। নানা রকম রেসিপি মাধ্যমে সুস্বাদু খাবার তৈরি হচ্ছে মাশরুম থেকে। এতদিন চীন, জাপান, কোরিয়া, থাইল্যান্ডের জনপ্রিয় সহজলভ্য খাবার ছিল এখন তা ভারতের মানুষ গ্রহণ করছে।

পশ্চিমবঙ্গে এখন প্রায় অনেক জায়গাতেই শুরু হয়েছে এই মাশরুম চাষ। মাশরুম কাঁচা শুকনো দুভাবেই বাজারে পাওয়া যায়। সুস্বাস্থ্যের ও স্বাদের ব্যাপারে  মাশরুম একটি অসাধারণ ফসল হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেছে।

Leave a Reply