ভারতের ৫টি অন্ধবিশ্বাসের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। যা আমরা প্রতিনিয়ত মেনে চলেছি

ভারতের ৫টি অন্ধবিশ্বাসের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা

আমরা সকলেই ছোট থেকে বড় হয়েছি, আর এই বড় হওয়ার মাঝেই পরিবারের মা-বাবা ও অন্যান্য গুরুজনের কাছ থেকে কিছু নিয়মকানুন আমাদের প্রতিদিনের দৈনন্দিন অভ্যাস হয়ে উঠেছে। যেগুলি আমরা বছরের পর বছর মেনে চলেছে কিন্তু আমরা কখনই ভেবে দেখিনি এই সমস্ত নিয়মকানুন বা অন্ধবিশ্বাস গুলো বাস্তবে কোনো প্রভাব ফেলে কিনা। কোনদিনই আমরা এই অন্ধবিশ্বাস গুলোর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা খুজেঁ দেখার চেষ্টা করিনি। তবে সমাজে প্রচলিত এই অন্ধবিশ্বাস গুলিকে যদি আপনি নিছকই ভ্রান্ত বলে মনে করেন তবে সেটা অবশ্যই আপনার ভুল ধারণা। কারণ বর্তমান যুগে এই সব রীতিনীতির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা পাওয়া গেছে যা অবশ্যই আপনার জানা দরকার।

১.উত্তর দিকে মুখ দিয়ে না শোবার কারণ:

ছোটবেলা থেকেই মা-বাবার মুখে আপনি শুনে থাকবেন ঘুমানো বা শোবার সময় কখনোই উত্তর দিকে মুখ দিয়ে শোয়া উচিত নয়। হয়তো আপনার পিতা-মাতা আপনাকে উত্তর দিকে মুখ দিয়ে না শোবার কারণ হিসেবে ভুত-প্রেত এর গল্প বলে আপনাকে ভয় দেখাতো। কিন্তু বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী উত্তর দিকে মুখ দিয়ে না শোবার আসল কারণ হলো পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি। স্কুলে পড়ার সময় আমরা বইয়ের পাতায় পড়েছি যে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির দুটি মেরু রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণমেরু। সুতরাং চুম্বকক্ষেত্রের নিয়ম অনুসারে বিপরীত মেরু পরস্পরকে আকর্ষণ করে এবং সমমেরু বিকর্ষণ করে। বৈজ্ঞানিক নিয়ম অনুসারে মানুষের মাথা উত্তর ও পা-এর দিকটা দক্ষিণমেরু হিসেবে গণ্য করা হয়। সেই কারণে মাথা যদি উত্তর দিকে মুখ করে থাকে তবে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির সঙ্গে মানব মস্তিষ্কের এক প্রকারের সংঘর্ষ হয়, যার ফলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পেতে পারে। এটা থেকে একটা কথা প্রমাণিত যে ঘটনাটি কোন অন্ধবিশ্বাস নয় আমাদের পূর্ব জোনেরা প্রাচীনকালেই এই ধরনের চিন্তাধারা নিয়ে এসেছিল, যা আজ বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণিত।

২.মৃত ব্যক্তির শোকযাত্রা থেকে আসার পর স্নান করতে কেন বলা হয়:

আমাদের সমাজে এই নিয়মটি বছরের পর বছর ধরে চলেআসছে যা আমরা বর্তমানেও দেখে এসেছি। কোন মৃত ব্যক্তির শোক যাত্রায় যদি আপনি যান তবে বাড়ি আসার পর আপনাকে স্নান সেরে ঘরে ঢোকার কথা বলা হয়। নিয়মটির কারণ যদি আপনি জানতে চান আপনার পরিবারের কাছে, তবে হয়ত তারা আপনাকে পরিবারের অমঙ্গলের যুক্তি দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে বিজ্ঞানসম্মত দিকটি একেবারেই ভিন্ন। বৈজ্ঞানিক মতে কোন ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর মৃত ব্যক্তির শরীরে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সাথে লড়াই করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, ফলে খুব সহজেই মৃত ব্যক্তির শরীর ব্যাকটেরিয়া দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এর ফলে আপনি যদি মৃত ব্যাক্তির সংস্পর্শে আসেন তবে খুব সহজেই ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থেকে যায়। প্রধানত এই কারনেই কোনো শোক যাত্রা থেকে আসার পর আপনাকে পরনের জামা কাপড় পরিষ্কার করা ও স্নান করার কথা বলা হয়।

৩.সূর্য গ্রহণের সময় বাড়ি থেকে না বেরোনোর কারন কি:

এই ঘটনাটি বইয়ের পাতায় আমরা পড়েছি, বাস্তবে যখন সূর্যগ্রহন হয় তখন এই অন্ধবিশ্বাসটি দেখা যায়। গ্রহণের দিন গ্রহণের যে সময় থাকে তখন পরিবারের কাউকে বাড়ির বাইরে যেতে দেওয়া হয়না। নিয়মটি বহু যুগ আগের থেকে চলে আসছে কিন্তু ঘটনাটি আমরা কুসংস্কার বলে গণ্য করলেও বিজ্ঞানীরা এর অন্য রকম ব্যাখ্যা দিয়েছে। বিজ্ঞান মতে সূর্য গ্রহণের দিন বায়ুমণ্ডলে সূর্য অতিরিক্ত ‘অতিবেগুনি রশ্মি‘ নির্গত করে যা আমাদের শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি চোখের রেটিনায় ক্ষতিগ্রস্থ করে সেই কারণে খালি চোখে সূর্য গ্রহণ দেখতে নিষেধ করা হয়, এছাড়া গর্ভবতী মহিলাদের পক্ষে এই রশ্মি অত্যন্ত ক্ষতিকর। সুতরাং প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ এর ক্ষতিকারক দিক নিয়ে অবগত ছিল। আর সেই কারণেই মানুষ-জনের মধ্যে এই ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি করা হয় যাতে মানুষ নিজেরাই ঘরের মধ্যে থাকে।

আরো পড়ুন- আশ্চর্য এক সমুদ্র, যেখানে কোনো প্রাণী বা বস্তু ডুবে যায় না

৪.দোকানের সামনে লেবু লঙ্কা ঝুলিয়ে রাখার কারণ কি:
ভারতের ৫টি অন্ধবিশ্বাসের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা

আপনারা দেখে থাকবেন প্রত্যেকটি ছোট-বড় দোকানের সামনে একটি সুতোর মধ্যে লেবু ও লঙ্কা ঝুলিয়ে রাখা হয়। অনেকেই হয়তো এটিকে আধ্যাতিক পূজা রূপে দোকানের সামনে ঝুলিয়ে রাখে। কিন্তু বিজ্ঞানসম্মত ভাবে দেখতে গেলে প্রত্যেকদিন যদি নতুন লেবু লঙ্কা বাড়ির দরজা বা দোকানের সামনে ঝুলিয়ে রাখা হয়, তবে সেটি মশা-মাছি ও পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। লেবু ও লঙ্কা ভিটামিন-সি এর উৎস ছাড়াও লেবুতে যে আসিড থাকে সেই আসিড পোকামাকড়কে বাধা দেয়। অতীতে বর্তমান যুগের মতো পোকামাকড় মারার কোনো রকম কীটনাশক ছিলনা, সেই কারণে এই লেবু ও লঙ্কার আবির্ভাব ঘটে বলে মনেকরা হয়।

৫.আয়না বা কাচ ভেঙে গেল অশুভ মনে করা হয় কেন:
ভারতের ৫টি অন্ধবিশ্বাসের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা

অনেকেই হয়তো এই অন্ধবিশ্বাসটি শুনে থাকবেন, যে আয়না বা সীসা ভেঙে গেলে সেটা নিজের জীবনে অশুভ প্রভাব ফেলে তাও আবার ৭ বছরের জন্য। কিন্তু এমনটা বলার কারণ কি অতীতে আজকের যুগের আয়না বা কাঁচ এত কম দামে পাওয়া যেত না। অতীতে কাঁচ বা সীসা পাওয়া গেলেও তা নির্মাণ করতে প্রচুর সময়, পরিশ্রম ব্যয় হত। কারণ তখনকার দিনে কাঁচ বা আয়না সম্পূর্ণভাবে মানুষের হাতে তৈরি হতো, কোন রকম মেশিন ছিল না। সেই কারণে এর মূল্য অনেক বেশি হতো, তাই আমাদের পূর্বপুরুষেরা আয়না ভেঙ্গে যাওয়া নিয়ে পরিবারের অমঙ্গল বা অকল্যানের এই ভ্রান্ত ধারণা সমাজে মধ্যে প্রচলিত করে। যাতে পরিবারের লোকেরা খুব যত্নসহকারে এটিকে ব্যবহার করে।

(Disclaimer: উপরে উল্লেখিত নিবন্ধটি সম্পূর্ণ বিনোদনের ও মানুষকে সচেতন করার জন্য লেখা হয়েছে। আমাদের ওয়েবসাইট কখনোই অন্ধবিশ্বাসকে প্রচার করে না ও অন্ধবিশ্বাসকে বিশ্বাস করে না।)

মন্তব্য করুন