কী হবে যদি পৃথিবীতে অক্সিজেনের পরিমাণ সাধারণের থেকে দ্বিগুণ মাত্রায় বেড়ে যায়

সিনেমা দেখতে অনেকেই পছন্দ করেন, আর বিশেষ করে যারা হলিউডের সিনেমা দেখতে একটু বেশি পছন্দ করেন তারা অবশ্যই দেখে থাকবেন সাইন্সফিকশন সিনেমাগুলোতে দেখানো বড় বড় প্রাণী গুলিকে। সিনেমা গুলিতে দেখানো বিশাল আকার মৌমাছি গিরগিটি কীটপতঙ্গ ও অন্যান্য প্রাণী গুলোকে দেখলে বোঝা যায় যে সেই প্রাণীগুলি বর্তমানে জীবিত প্রাণীর তুলনায় অনেকটাই বড় এবং বাস্তবে তা একেবারেই অসম্ভব। কিন্তু যদি বলা হয় বর্তমানে যেটা কল্পনা করাও অসম্ভব অতীতে একসময় তারা এই পৃথিবীর বুকেই ঘুরে বেড়াতো। অর্থাৎ পৃথিবীর সৃষ্টির প্রাক্কালে পৃথিবীতে বসবাসকারী প্রাণীগুলি ঠিক সেই সিনেমায় দেখানো প্রাণী গুলির মত বিশালাকার ও ভয়ঙ্কর ছিল।

আজ থেকে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন বছর পূর্বে আমাদের পৃথিবীতে অক্সিজেনের পরিমাণ ছিল আজকের ২১ শতাংশের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ। যে কারণে সেই সময় বসবাসকারী প্রাণীগুলি আজকের প্রাণীর তুলনায় দুই থেকে তিন গুণ বড় আকারের হতো এবং এর সাথেই সেই সময়ে অনেক বড় বড় উদ্ভিদ ছিল যেগুলি মাটি থেকে অনেক লম্বা হতো, বলা চলে প্রায় গগনচুম্বী গাছ ছিল সেই সময়।

কিন্তু কি হবে যদি পৃথিবীতে উপস্থিত অক্সিজেনের মাত্রা ২১ শতাংশ থেকে বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যায়। কি প্রভাব পড়বে আমাদের পৃথিবীর প্রাণী ও উদ্ভিদের উপর। চলুন জেনে নেওয়া যাক। আমাদের গ্রহ ৭৮ শতাংশ নাইট্রোজেন, ২১ শতাংশ অক্সিজেন ও ০.৮ শতাংশ অর্গান জাতীয় গ্যাস দ্বারা বেষ্টিত। এইসব গ্যাস গুলির মধ্যে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় গ্যাস হল অক্সিজেন। যে গ্যাসের উপস্থিতির জন্য পৃথিবীতে প্রাণী ও উদ্ভিদ জীবিত রয়েছে। আমাদের পৃথিবী থেকে অক্সিজেন যদি পাঁচ সেকেন্ডের জন্য সম্পূর্ণ সরে যায় তবে পৃথিবী পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে নিমেষে। বিশাল আকার গগনচুম্বী বাড়িগুলি নিমেষেই ভেঙে পড়বে। কারণ অক্সিজেন না থাকায় কংক্রিটের বাঁধন প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাবে। পৃথিবীতে অক্সিজেন ছাড়া আগুন জ্বালানো সম্ভব হবে না। অক্সিজেন ছাড়া যেহেতু আগুন জ্বালানো সম্ভব নয় সেহেতু সমস্ত রকম যানবাহন ও অন্যান্য মেশিন গুলি বন্ধ হয়ে যাবে। এরোপ্লেন গুলি ও ধীরে ধীরে নিচের দিকে পড়তে শুরু করবে। পৃথিবী ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে যাবে। এটাতো গেল পৃথিবীতে অক্সিজেন না থাকলে কি ঘটবে সেটির একটি উদাহরণ।

আরও পড়ুন- ছোটবেলায় পড়া একে চন্দ্র দুয়ে পক্ষ এর জানা অজানা কিছু রহস্য। অষ্টবসু কারা? পঞ্চবান কী?

কিন্তু কি ঘটবে যদি পৃথিবীতে উপস্থিত অক্সিজেনের মাত্রা ২১ শতাংশ থেকে বেড়ে গিয়ে ৪২ শতাংশ হয়ে যায়। কি প্রভাব পড়বে প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের উপরে। অক্সিজেনের মাত্রা ২১ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪২ শতাংশ হয়ে গেলে পৃথিবীতে যা ঘটবে তা খুবই আশ্চর্য ও অবিশ্বাস্য। পৃথিবীতে অক্সিজেনের মাত্রা বেড়ে গেলে পৃথিবীর রূপ পুরোপুরি বদলে যাবে, বদলে যাবে ছোট ছোট পোকামাকড় থেকে শুরু করে সমস্ত প্রাণী ও উদ্ভিদের আয়তন। বর্তমান আকারের চেয়ে দুই থেকে তিন গুণ বড় হয়ে যাবে সমস্ত প্রাণী ও উদ্ভিদ। ছোট পোকামাকড় ও মশা বিশাল মাকড়সার আয়তনের হয়ে যাবে, মাকড়সার আয়তন হবে বড় ইঁদুরের মত, ইঁদুরগুলোর আয়তন হবে খরগোশের মত এবং খরগোশের আয়তন হয়ে যাবে কুকুরের আয়তনের সমান। যদি বলা হয় বড় বড় গাছ গুলোর কথা, তবে এগুলি আরো অনেক বড় হয়ে আকাশ সমান লম্বা হবে। অক্সিজেনের মাত্রা দ্বিগুণ বেড়ে গেলে মানুষের আয়তন ২ মিটার পর্যন্ত লম্বা ও অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে যাবে। আর এই সব জীবজন্তু উদ্ভিদ বাদে আর যে পরিবর্তনগুলি হবে সেগুলো আরো আশ্চর্যজনক। পেট্রোল ও ডিজেলের গাড়ি গুলি চালাবার জন্য জ্বালানীর প্রয়োজন হবে না। কাগজের বানানো প্লেন গুলি কয়েক মাইল পর্যন্ত উড়ে যাবে। কথা গুলি অযৌক্তিক মনে হলেও বিজ্ঞানীদের দাবি কিন্তু ঠিক এমনটাই।

বিজ্ঞানীদের গবেষণায় জানা গেছে আজ থেকে ৩০০ মিলিয়ন বছর পূর্বে যখন পৃথিবীতে অক্সিজেনের পরিমাণ ৩০ শতাংশ, তখন যে সমস্ত প্রাণীর অস্তিত্ব ছিল তাদের আয়তন অনেকটাই বেশি। তাদের জীবাশ্ম থেকে এমনটাই ধারণা দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীরা এও জানান অক্সিজেন সরাসরি শারীরিক গঠন মস্তিষ্কের গঠন ও বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে। কারণ অক্সিজেন শরীরে গ্লুকোজ, লোহিত রক্তকণিকা এবং মস্তিষ্কের একটি অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। অতিরিক্ত অক্সিজেন মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষমতা কে অনেক গুণ বাড়িয়ে দেবে যার ফলে মানুষ অনেক বেশি বুদ্ধিমান ও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। কিন্তু এখানে একটা প্রশ্ন রয়ে যায়। 

অক্সিজেন এর ফলে শুধুই কি লাভ হবে? না তা একেবারেই নয়। অতিরিক্ত অক্সিজেন ডিএনএর ক্ষতি করবে যার জন্য ক্যান্সার এর পরিমাণ বেড়ে যাবে, দৃষ্টিশক্তি কমে যাবে অনেকটাই। অক্সিজেনের কারণে সামান্য আগুনও অনেক বড় ক্ষতি সাধন করতে পারে। লোহার তৈরী সমস্ত জিনিসের উপরে জং পড়ে তা নষ্ট হয়ে যাবে। প্রাণীকুল ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাবে পৃথিবীর বুক থেকে। অর্থাৎ অক্সিজেনের মাত্রা পৃথিবীতে দ্বিগুণ হলে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি, এমনকি প্রাণীকুল নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে অতিরিক্ত অক্সিজেনের কারণে।

মন্তব্য করুন