আশ্চর্য ও অদ্ভুত কাঁকড়া। এমন কিছু প্রজাতি পৃথিবীতে বিরাজমান যারা সাধারন কাঁকড়া থেকে অনেকটাই আলাদা

পৃথিবীর বুকে বিভিন্ন আকৃতি ও বৈচিত্রে পরিপূর্ণ প্রাণীর সংখ্যা যে কত পরিমান তার নির্দিষ্ট কোন সংখ্যা নেই। জানা ও অজানা প্রাণীর বিচিত্র মেলবন্ধন আমাদের এই পৃথিবী। এখানে প্রাণীর সংখ্যা এত অধিক হওয়ার কারণেই সমস্ত ধরনের আশ্চর্য সুন্দর প্রাণীদের দেখা ও তাদের সৌন্দর্যকে উপলব্ধি করা আমাদের সকলের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনা। যে সমস্ত প্রাণীদের দেহের আকৃতি একটু বড় তারা হয়তো আমাদের চোখ এড়িয়ে যেতে পারে না। তবে ছোট আকৃতির প্রাণীরা প্রায়সই আমাদের চোখ এড়িয়ে চলে যায়। এমনই একটি ছোট অথচ এদের এমন অনেক প্রজাতি রয়েছে যাদের সৌন্দর্য ও অদ্ভুত আকার-আকৃতি আপনাদের বিস্মৃত করবে; যে প্রাণীটি হলো কাঁকড়া। কাঁকড়া সকলেরই খুব পরিচিত হলেও এর এমন কিছু প্রজাতি পৃথিবীতে বিরাজমান যারা সাধারন কাঁকড়া থেকে অনেকটাই আলাদা ও চমকপ্রদ।

ওরাংওটাং ক্র্যাব (ORANGUTAN CRAB): 

পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মহাসাগর প্রশান্ত এবং ভারত মহাসাগরের ক্রান্তীয় জলবায়ু যুক্ত অঞ্চলে এই কাঁকড়া দেখতে পাওয়া যায়। কাঁকড়া অন্যান্য প্রজাতিগুলির মধ্যে এই প্রজাতিকে দেখলে আপনার কোনো রক স্টারের কথা সবার প্রথমে মাথায় আসবে। এই প্রজাতিটি মাকরসা কাকড়া অর্থাৎ স্পাইডার ক্র্যাব বা ডেকোরেটর ক্র্যাব পরিবারের সদস্য। মহাসাগরের জলের নিচে বুদবুদ প্রবাল প্রাচীর (BUBBLE CORAL) এর ভিতরে কোন সুরক্ষিত জায়গাতেই থাকতে বেশি পছন্দ করে।

ওরাংওটাং কাঁকড়া এর নাম থেকেই বোঝা যায় যে নামটি কোথা থেকে উদ্ধৃত। এদের দেহে ও পা গুলির চারপাশে ঘিরে থাকা লাল ও বাদামী রঙের লোমগুলো বোর্নিও ও সুমাত্রায় দেখতে পাওয়া ওরাংওটাং বানরের মতোই হয়ে থাকে। যার থেকেই এমন নাম কাঁকড়া টির। এদের দেহে থাকা লোম গুলি এদেরকে শিকারির হাত থেকে রক্ষা করে। প্রবাল প্রাচীর এর থাকা লোমশ কাঁকড়া টিকে দেখে কোন বর্জ্য পদার্থ বলে মনে হয়। বিরল প্রজাতির এই কাকড়া সচরাচর দেখা যায়না, যেকারনে এদের জীবনচক্র ও খাদ্য তালিকা গুলি সম্পর্কে খুবকম ধরনাই পাওয়া গেছে এখনো পর্যন্ত।

আরও পড়ুন-পৃথিবীতে প্রাপ্ত অদ্ভুত দর্শন মাকড়সা

পম – পম ক্র্যাব (POM-POM CRAB):

অদ্ভুত নামের এই কাঁকড়া বক্সার ক্র্যাব নামেও পরিচিত। XANTHIDAE পরিবারের এই ছোট্ট সদস্য ক্রান্তীয় ইন্দো-প্যাসিফিক মহাসাগরের অগভীর পাথরের মাঝে ও সমুদ্র তটে দেখতে পাওয়া যায়। দেখতে খুবই সুন্দর এবং বিভিন্ন রং বিশিষ্ট এই কাকড়ার প্রতিটি পায়ের অগ্রভাগে অ্যানিমন থাকে। যেগুলি এদের শিকারিদের হাত থেকে রক্ষা করে। এদের গায়ে তৈরি চৌকো আকৃতির নকশাগুলি এদেরকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। ছোট আকৃতির এই কাঁকড়া গুলোর নামটাও যেমন অদ্ভুত দেখতে তেমনি সুন্দর।

নাল কাকড়া (HORSESHOE CRAB): 

এর নাম থেকেই কাঁকড়াটি সম্পর্কে একটি মোটামুটি ধারণা চলে আসে। এদিকে বাংলায় নাল কাঁকড়া বলা হয়। নাল কাঁকড়া অন্যান্য সমস্ত প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ও বিস্ময়কর কাঁকড়া। দেখতে খুবই অদ্ভুুত, ঘোড়ার খুরের মত হয় এটি। বিশেষজ্ঞদের মতে এই কাঁকড়া প্রাচীন ডাইনোসর দের সময়কাল থেকে এখনো পর্যন্ত টিকে রয়েছে পৃথিবীর বুকে। প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন বছরেরও বেশি পুরানো এই কাঁকড়া টিকে জীবন্ত জীবাশ্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

এই কাঁকড়া টির দেহের উপরের অংশটি একটি শক্ত খোলস দ্বারা আবৃত থাকে। যদি কখনো জলের স্রোতে এটি উল্টে যায় তখন এরা এদের দেহের শেষভাগে থাকা লেজটি ব্যবহার করে পুনরায় চলতে সক্ষম হয়। এই কাঁকড়া চারটি প্রজাতি রয়েছে। যে চারটির মধ্যে তিনটি দক্ষিণ পূর্ব ও পূর্ব এশিয়ায় এবং বাকি একটি আটলান্টিক উপকূল বরাবর দেখতে পাওয়া যায়। এদের দেহে প্রাপ্ত নীল রঙের রক্তের ঔষধি গুণাবলীর জন্য প্রতিবছর এই কাঁকড়া শিকার করা হয় প্রচুর পরিমাণে।

Previous articleচিনের চ্যাং-৫ মিশন|Chang’e-5 mission in bengali
Next articleবিসিসিআইয়ের বার্ষিক সাধারণ সভা 2020 কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
আমরা Extra Gyaan এর সদস্যরা পেশাগতভাবে ব্লগিং এর সঙ্গে যুক্ত। আমরা ইন্টারনেট, প্রযুক্তি, নাসা, মহাকাশের বিভিন্ন তথ্য, শিক্ষাগত দিক ও খেলাধুলার বিষয়ে নিবন্ধ লিখে থাকি সম্পূর্ণ বাংলা ভাষায়। আমাদের উদ্দেশ্য হলো বাংলা ভাষায় আপনাদের সামনে সেরা তথ্য তুলে ধরা।

Leave a Reply