গলতে শুরু করেছে উত্তর মেরুর বরফ, বিজ্ঞানীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ

পৃথিবীর দুই গোলার্ধে জমে থাকা বরফের পরিমাণ নেহাত কম নয়। আর সেই বিশাল বরফের স্তর গলতে শুরু করেছে সম্প্রতি। আর যদি এমনটাই চলতে থাকে তবে দেখতে দেখতেই পৃথিবী জলের তলায় চলে যাবে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা ঠিক এমনটাই। যে কারণে তাদের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। উত্তর মেরুর একটি অংশ যার নাম ‘লাস্ট আইস এরিয়া’, আর সেই অঞ্চলের বরফ গলতে শুরু করেছে। বিজ্ঞানীদের দুশ্চিন্তা করার কারণ হলো, এই অঞ্চলের সমুদ্রের বরফ সবথেকে বেশি ঘন এবং গত কয়েক দশক ধরে বিশ্ব উষ্ণায়নের কোন প্রভাব পড়েনি এই অঞ্চলে।

উত্তর মেরুর এই অঞ্চলে হঠাৎ অদ্ভুত পরিবর্তন দেখতে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। গত গৃষ্ম ঋতুতে ওই অঞ্চলের জমাট বাঁধা বরফের মাঝে জল নজরে এসেছে তাদের। যে অঞ্চলে একটা সময় জাহাজ নিয়ে যাওয়ার কথা চিন্তাও করা যেত না এখন সেই অঞ্চলে অনায়াসে জাহাজ চলাচল করতে সক্ষম। গত কয়েক দশকে এমন চিত্র আগে কখনো নজরে আসেনি বিজ্ঞানীদের। যে কারণে বিজ্ঞানীরা প্রায় হতবাক। বর্তমানে বিজ্ঞানীদের মাথায় একটাই প্রশ্ন, তাহলে কি শেষ পর্যন্ত বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে উত্তর মেরুর লাস্ট আইস এরিয়াতেও প্রভাব পরল?

জার্নাল কমিউনিকেশন আর্থ এন্ড এনভায়রনমেন্ট এর একটি প্রতিবেদন সূত্রে জানা গিয়েছে,বিজ্ঞানীদের উত্তরে গ্রীনল্যান্ডের ওয়ান্ডেল সাগরে বরফ এর চাই নজরে এসেছে গত বছরের জুলাই মাসের শেষের দিকে এবং আগস্ট মাসের শুরুতে। তাদের অনুমান ছিল আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণেই এমনটা ঘটছে। তবে গত কয়েক দশক ধরে বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উত্তর মেরু এই অঞ্চলের বরফ এতটা পাতলা হয়ে যাবে সেটা কখনোই তারা ধারণা করতে পারেননি।

বিজ্ঞানীরা মনে করছেন শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে উত্তর মেরুর অধিকাংশ বরফ গলে যাবে। তবে সেই তালিকায় লাস্ট আইস এরিয়া এর নাম ছিল না। এই অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়া বিজ্ঞানীদের ধারণা সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছে। গলতে শুরু করেছে সমুদ্রের ঘন বরফ। অ্যাটমোসফিয়ার ফিজিসিস্ট কেন্ট ম্যুর এর মতে, উত্তর মেরুর প্রায় ৩ লক্ষ ৮০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা বরফের নিচেই থাকবে আগামী ২১০০ শতাব্দী পর্যন্ত। কিন্তু উত্তর মেরুর লাস্ট আইস এরিয়ার বরফ গলে যাওয়ায় কেন্ট এর মতবাদ প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

আরো পড়ুন-মহাকাশ যাত্রায় জেফ বেজোসকে টেক্কা দিতে এগিয়ে এলেন আরো এক কোটিপতি

কেন্ট এবিষয়ে আরো বলেন, উত্তর মেরুর মোটা বরফের আস্তরণ বায়ুর শক্তিশালী চাপের কারনে গ্রীনল্যান্ড এর উপকূলবর্তী অঞ্চলে চলে এসেছে। গ্রীনল্যান্ড-এর এই অঞ্চলের উষ্ণতা তুলনামূলক বেশি হওয়ার কারণে জমাটবাঁধা ঘন বরফের আস্তরণ সহজে গলে যায় এবং এই পুরু বরফ বায়ুর চাপ সহ্য করার ক্ষমতা হারিয়েছে। অন্যদিকে কানাডার এলসমেয়র দ্বীপ এই লাস্ট আইস এরিয়ার একটি অংশ যেখানে ২০২০ সালে বরফ ভাঙার খোঁজ পেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। তবে কি কারণে এমন ঘটনা ঘটছে সে নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা তেই রয়ে গেছেন তারা।

মন্তব্য করুন