ইতিহাসের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি কে জানেন? মানসা মুসার ইতিহাস

ইতিহাসের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি
ইতিহাসের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি

ধনী হতে কে না চায়, অনেকেই স্বপ্ন দেখে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হওয়ার। তবে সকলের তা হওয়া না হলেও এমন কিছু ব্যক্তি আছেন বা ছিলেন যারা অবশ্যই বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির তালিকায় পড়েন। আর ইতিহাসের এমনই একজন সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হলেন মানসা মুসা। পশ্চিম আফ্রিকার মালি সাম্রাজ্যের অধিপতি ছিলেন মানসা মুসা। আজ থেকে প্রায় 750 বছর আগে 1280 শতকে জন্মেছিলেন মানসা মুসা। 33 বছর বয়সে মানসা মুসা মালি সাম্রাজ্যের রাজা হন।

বর্তমানের ঘানা এবং মালি এর বৃহত্তম স্থান নিয়ে মুসার সাম্রাজ্য ছিল। মানসা মুসা বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি প্রচুর সম্পত্তির মালিক ছিলেন। মনে করা হয় মূলত লবন এবং সোনার ব্যবসার দ্বারা তিনি সমৃদ্ধ হয়েছিলেন। শোনা যায় যখন মূসা হজের যাত্রা শুরু করেন তখন তার সাথে 100 এর বেশি উট ছিল। যেগুলির প্রত্যেকটির ওপর 135 কিলো সোনা সাজানো ছিল। সঠিকভাবে কেউই বলতে পারে না মুসার কাছে কত ধন সম্পত্তি ছিল। তবে কিছু বিশেষজ্ঞের অনুমান অনুযায়ী সেই সময় কালে সম্ভবত মুসা 400 বিলিয়ন ডলারের মালিক ছিল। মালি সাম্রাজ্য আফ্রিকার সবচেয়ে বড় এবং ধনী রাজ্য ছিল। 

ইতিহাসের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি

1280 সালে মালির এক রাজ পরিবারে জন্ম হয়েছিল মুসার। মুসা 1312 সালে মালি সাম্রাজ্যের রাজা হয়েছিলেন। মনসা হলো একটি উপাধি যা রাজা হওয়ার পর মুসা পান। মানসা কথার অর্থ হল সম্রাট, বিজয়ী বা সুলতান। মুসা যখন রাজা ঘোষিত হন তখন ইউরোপের দেশ গুলিতে সম্পদের অভাবের কারণে গৃহযুদ্ধ চলছিল। অন্যদিকে তখন মালিতে স্বর্ণ যুগ চলছিল। মালিতে লবণ, সোনা ইত্যাদি বস্তু প্রচুর পরিমাণে ছিল। পশ্চিম আফ্রিকার মুসার সাম্রাজ্য তখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সোনা উৎপাদনকারী রাজ্য ছিল, যা পরবর্তী সময়ে বৃদ্ধি পেয়েছিল টিম্বাক্টু থেকে আটলান্টিক মহাসাগরের আগ পর্যন্ত। 

আরও পড়ুন – সম্প্রতি মিশরে পাওয়া গেল আরো এক প্রাচীন ইতিহাস

বর্তমানের সেনেগাল, গাম্বিয়া, বুর্কিনা ফাসো এবং নাইজেরিয়া তৎকালীন মালি রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। রাজ্যের সীমা বাড়ার সাথে সাথে বাণিজ্যের বৃদ্ধি ঘটে। এতে সেখানকার সমাজের উন্নতি হয়। মনে করা হয় মুসার সেনাবাহিনীতে 2 লক্ষ লোক ছিল। যাদের মধ্যে 40 হাজার জন ছিল ধনুর্ধর। তৎকালীন সময়ে মুসার সাম্রাজ্যে এই বিপুল পরিমাণ সৈন্য ছিল। তবে রাজা মুসার সমৃদ্ধি থাকা সত্বেও তাদের ব্যাপারে বাইরের দেশের লোকেরা খুব কমই জানত। মুসা ছিলেন একজন মুসলিম শাসক। তাই যে কোন সাধারণ মুসলিম ব্যক্তির মতোই তিনি মক্কায় তীর্থযাত্রা করতে চেয়েছিলেন। তিনি  তীর্থযাত্রায় তার সঙ্গে 60 হাজার লোক নিয়ে রওনা হন। মুসা এই বিপুল পরিমান লোকজন নিয়ে সাহারা মরুভূমি এবং ইজিপ্ট হয়ে মক্কায় গিয়েছিলেন। তাদের সঙ্গে ছিল রাজ পরিবারের সদস্যরা, ব্যবসায়ী, দাস, সৈন, নৃত্য ও সঙ্গীত শিল্পীরাও। মুসার তীর্থ যাত্রা ছিল এক আশ্চর্য ঘটনা। কারণ বিপুল পরিমাণ জনসংখ্যা এবং প্রচুর সোনা নিয়ে তারা যাত্রা করেছিল। 

ইতিহাসের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি

যাত্রাপথে কায়রো শহরে পৌঁছে মুসা দরিদ্র মানুষের আধিক্য দেখে তাদেরকে প্রচুর সোনা দান করেন। মক্কায় পৌঁছে তিনি অনেক ঘর নির্মাণ করান যাতে তীর্থে আসা মানুষের উপকার হয়। তীর্থে বেরিয়ে যাত্রাপথে তিনি অনেক কিছু দেখেন। যেমন বড় বড় ইমারত, মসজিদ, বিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়, নানা জায়গার শিক্ষাব্যবস্থা, কারিগরি, শিল্প ইত্যাদি। এই সমস্ত কিছু দেখার পর মুসা প্রচুর পরিমাণে বই-পুস্তক কিনে নেয় এবং সঙ্গে করে কারিগর, শিক্ষক মালিতে নিয়ে আসেন। মালিতে এসে বিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়, মসজিদ নির্মাণ করেন। এতে করে সাম্রাজ্যের প্রগতি বৃদ্ধি পায়। টিম্বাক্টু ছিল এখানকার বিশিষ্ট শহর। এরপর থেকে দেশ বিদেশের মানুষ এই জায়গার ব্যাপারে জানতে পারে এবং সেখানে ভ্রমণ ও বাণিজ্যের কারণে আসতে থাকে। প্রচুর শিক্ষার্থিরা বাইরে থেকে সেখানে পড়তে যেত। 

তবে মুসার মৃত্যুর পর 100 বছরের মধ্যে মালি সাম্রাজ্য নষ্ট হয়ে যায়। অন্যান্য ছোট বড় গোষ্ঠী দ্বারা পরে এই সাম্রাজ্যের শক্তি নষ্ট হয়। তবে সাম্রাজ্য ধ্বংস হলেও থেকে গেছে একটা বিশিষ্ট নাম ‘মানসা মুসা’। আজও ইতিহাসের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির নাম খুঁজলে পাওয়া যায় যে নামটা তা হলো মানসা মুসা। 

Previous articleJSW সঙ্গে চুক্তি ঋষভ পন্থের। টেস্ট সিরিজ জেতার পর সুখবর পন্থের জন্য
Next articleপাবজি এর মতোই আরেকটি ব্যাটেল রয়েল গেম আনতে চলেছে ক্রাফটন

1 COMMENT

Leave a Reply