মিশরের রাজধানী কায়রোতে আড়াই হাজার বছর পুরানো কফিনের খোঁজ পাওয়া গেলো। ১০০ টি কফিন উদ্ধার করলেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা

রহস্যেঘেরা মিসরে আবারো নতুন রহস্যের উন্মোচন ঘটেছে। এমনই দাবী করছেন বিশেষজ্ঞরা ও প্রত্নতাত্ত্বিকরা। প্রায়শই মিশরে প্রাপ্ত মমি গুলি নিত্যনতুন রহস্য টেনে নিয়ে আসছে আমাদের সামনে। চলতি বছরে আবারও বিশেষজ্ঞরা কবরস্থান থেকে প্রায় ১০০ টি কফিন খুঁজে পেয়েছেন। মিশরের পর্যটন ও প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ সম্প্রতি মিশরের রাজধানী কায়রো থেকে উদ্ধার করেছেন এই মমি ও কফিন গুলি।

মিশরের রাজধানী কায়রোর দক্ষিণ অবস্থিত কবরস্থান, যেটির নাম সাক্কারা নেক্রোপলিস, সেখান থেকেই প্রায় ১০০ টির কাছাকাছি কফিন উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। প্রাচীন মিশরের মানুষ মারা গেলে, বিশেষ করে গণ্যমান্য কোন ব্যক্তি মারা গেলে তাদের দেহকে মমি বানিয়ে রাখা হতো। সেই মমি খুঁজে পাওয়া গিয়েছে ১০০ টি কফিনের কয়েকটিতে। এই কফিন গুলোর কয়েকটি বেশ মূল্যবান এবং সোনার প্রলেপ দেওয়া। পর্যটন ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে যতগুলি কফিন উদ্ধার করা হয়েছে তার মধ্যে প্রায় চল্লিশটি কফিন সোনার প্রলেপ মোড়ানো। কয়েকটির মধ্যে সোনার মূর্তি উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি প্রত্নতত্ত্ববিদদের। যেসমস্ত কফিন, মমি ও সোনার মূর্তি উদ্ধার করা হয়েছে তার সবই গবেষণা করার জন্য গবেষণা কেন্দ্রে নিয়ে গিয়েছেন তারা।

আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে পলিমেইক শাসনকালে এই কফিনগুলো মাটির তলায় কবর দেওয়া হয়, এমনটাই দাবি করেছেন প্রত্নতত্ত্ববিদেরা। পলিমেয়িক শাসনকাল মিশরের ছিল প্রায় ৩২০ থেকে ৩৩০ খ্রিস্টপূর্ব পর্যন্ত। প্রায় ৩০০ বছরের রাজত্বকাল ছিলো মিশরে। এই সময়কালে বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তির মমি, সোনার মূর্তি, মূল্যবান বস্তু কফিনবন্দি করে সাক্কারা নেক্রোপলিসে কবরস্থানে কবর দেয়া হয়েছিল। যেগুলি ধীরে ধীরে উদ্ধার হয়ে চলেছে।

আরও পড়ুন-সোনার কুকুরের মূর্তি উন্মোচন হলো তুর্কমেনিস্তানে। আলবাই কুকুর কি?

মিশরের পর্যটন ও প্রত্নতত্ত্ব মন্ত্রী খালেদ এল-আনানী জানান এই সমস্ত কফিন, কফিনে প্রাপ্ত মমি, সোনার মূর্তি গুলির উপর গবেষণা করা হবে। খতিয়ে দেখা হবে এগুলোর সময়কাল ও নানা তথ্য। সমস্ত প্রকার তথ্য সংগ্রহের পরে এগুলি মিশরের রাজধানী কায়রোর তিনটি জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য রাখা হবে। প্রত্নতত্ত্ব মন্ত্রী খালেদ এল-আনানি এও জানান কফিন ও মামি গুলিকে জনসাধারণের সামনে নিয়ে আসবার আগে এগুলি সম্পর্কে সমস্ত রকম তথ্য সংগ্রহ করতে চায় প্রশাসন। তবে এই ১০০ টি কফিন ছাড়াও আরো একটি কফিন সাক্কারা নেক্রোপলিসে কবরস্থান থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। তবে রহস্যে ঘেরা এই কফিন সম্পর্কে এখনো কিছুই বলতে নারাজ মিশরের প্রশাসন। 

এই ঘটনার কয়েকদিন আগেও আরো কয়েকটি কফিন উদ্ধার করা হয়েছিল ওই একই কবরস্থান থেকে। এই কবরস্থানে অবস্থিত একটি কুয়োর ভিতর থেকে খুঁজে বার করা হয়েছিল কফিন গুলিকে। প্রথম পর্যায় ১৩ টি কফিন পেলেও পরবর্তী ধাপে আরও ১৪ টি খুঁজে বার করেন প্রত্নতত্ত্ববিদদের একটি দল। তারা জানিয়েছেন একসাথে এতগুলো কফিন খুঁজে পাওয়ার ঘটনা এই প্রথম। সম্প্রতি প্রাপ্ত কফিন গুলির মধ্যে বেশ কয়েকটি সোনায় মোড়ানো কফিন থাকলেও পূর্বে যে ২৭ টি কফিন পাওয়া যায় তার সবকয়টি কাঠের তৈরি ও নানা রঙ ও নকশা আঁকা। এগুলোর বেশ কয়েকটি কফিনে মমিও পাওয়া যায়। তবে মামী গুলি কাদের, সে বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি এখনো। 

এর আগে ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসের কাছাকাছি মিশরের প্রত্নাত্ত্বিকদের একটি দল সক্কারায় অবস্থিত পিরামিড, যেগুলি স্টেপ পিরামিড নামে পরিচিত, তার পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে অনেকগুলো প্রাণীর সন্ধান পায়। যেগুলি মমি অবস্থায় ছিল। এই প্রাণী গুলির মধ্যে ছিল সাপ, কুমির, বিড়াল ও পাখি। অদূর ভবিষ্যতে এই সমস্ত কিছুরই রহস্য ভেদ করতে পারবেন বলে আশাবাদী মিশরের প্রত্নতত্ত্ববিদেরা।

মন্তব্য করুন