যমজ বাচ্চার গ্রাম কেরালা। ৫০০ বেশি যমজ বাচ্চা আছে এই গ্রামে

যমজ বাচ্চার গ্রাম: ভারতবর্ষের বহুবিচিত্র মানুষজন ও গ্রামের কথা আমরা শুনেছি। কোনো জায়গায় ফসল শস্য বিখ্যাত, কোনো গ্রাম নির্দিষ্ট পশুপাখির জন্য বিখ্যাত, কোনো গ্রাম মন্দির ইত্যাদি। ভারতবর্ষের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত কেরালা রাজ্যের এমন একটি গ্রাম রয়েছে যেটি যমজ বাচ্চার গ্রাম নামে পরিচিত। এই গ্রামটির আসল নাম কোদিনহী যা Twins Town নামে পরিচিত।

সারা পৃথিবীতে প্রতি ১০০০ বাচ্চার মধ্যে ৬ টি বাচ্চা যমজ হতে দেখা যায়। কিন্তু এই গ্রামে ৬টি নয় ৫৫০ এর উপর যমজ বাচ্চা দেখতে পাওয়া যায়। যা এক প্রকারের অবিশ্বাস্য। যমজ বাচ্চার গ্রাম বা twins town নামে পরিচিত এই গ্রামে ৪ হাজার লোক বসবাস করে। যেখানে বিভিন্ন ধর্মের লোক দেখা যায়। আর এই ৪ হাজার লোকের মধ্যে ৯০০ জনই যমজ।

এমনও দেখা গেছে যে পরিবারের ২ নয় ৩ টে বাচ্চা জমজ হয়েছে। যমজ বাচ্চা হওয়াটা এই গ্রামের খুবই একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই গ্রামে জমজ বাচ্চা হয়ে আসছে প্রাকৃতিকভাবে এবং দিনের পর দিন এর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

একমাত্র এই কারণেই যমজ বাচ্চার গ্রাম বা টুইন্স টাউন গ্রিনিজ বই তে স্থান পেয়েছে। সারা পৃথিবী থেকে এখানে বহু বিজ্ঞানী এসেছে গ্রামটি পরীক্ষা করার জন্য কিন্তু সঠিক ব্যাখ্যা এখনো কেউ দিতে পারেনি। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এই জমজ বাচ্চাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য আলাদা ডাক্তার ও চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে।

আরো পড়ুন- পৃথিবীতে এমন অনেক দেশ আছে যেখানে সূর্য অস্ত যায় না

যমজ বাচ্চার গ্রাম

বহু বিজ্ঞানীদের ধারণা যে এখনকার জল ও মাটি জমজ বাচ্চার কারন। যমজ বাচ্চার গ্রাম কোদিনহী এর আশেপাশের গ্রামের জলবায়ু এবং পরিবেশ একই রকমের কিন্তু অন্য গ্রামে এই যমজ বাচ্চার প্রভাব দেখা যায় না। অনেক বিজ্ঞানী আবার জেনেটিক তথ্য তুলে ধরেছেন। এক্ষেত্রে অনেকেরই প্রশ্ন যদি জিনগত কারনেই হয় তবে, অনেকে বাইরে থেকে এসে এই গ্রামে বসবাস করেছে এবং তাদেরও পর্যন্ত জমজ বাচ্চা হয়েছে সেই কারণে এই তথ্য বিশ্বাসযোগ্যতা পাইনি।  

২০১৬ সালে একটি গবেষক দল কেরালার এই গ্রামটিতে এসেছিল, যারা মূলত গ্রামবাসীদের জেনেটিক দিকটি বিশদে জানতে চেয়েছিল। তারা ভারতের এই কেরালা গ্রামটির সঙ্গে নাইজেরিয়া, ব্রাজিল ও ভিয়েতনামের কিছু জায়গার মিল খুঁজে পান। কারণ এই দেশ গুলিতে এরকমই যমজ বাচ্চা দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু এই গবেষণার ফল আশাজনক হয়নি, এখনও পর্যন্ত গ্রামটি রহস্যের মধ্যেই রয়েছে। গবেষক দল যেটি বলেন কদিনহী গ্রামে যমজ বাচ্চার শতকরা ভাগ অন্যান্য স্থানের তুলনায় অনেকটাই বেশি এবং যমজ বাচ্চা হওয়ার জন্য এই গ্রামে জেনেটিক দিক অবশ্যই কাজ করে।

যমজ বাচ্চা হলেও বাচ্চাদের মধ্যে কোন রকম শারীরিক অসুস্থতা আসেনি। অন্য বাচ্চাদের মতই স্বাভাবিক জীবনযাপন করে। এখানকার স্কুলগুলিতে শিক্ষকদের মাঝে মাঝে অসুবিধা হয়, যা শাসন করার সময় বা পড়ানোর সময় হতে পারে। স্থানীয় চিকিৎসকদের মতে এখানে যদি কোনো বাচ্চার শরীর খারাপ হয় তবে অন্য জমজ বাচ্চা টিকেও ওষুধ দেয়া হয় যাতে তারও শরীর খারাপ না হয়।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ও বিদেশ থেকেও বহু মানুষ আসে জমজ বাচ্চার গ্রাম দেখতে আবার অনেক স্বামী-স্ত্রী এখানে আসতে ভয় পায় জমজ বাচ্চা হয়ে যাবার ভয়ে।

মন্তব্য করুন