বৃশ্চিক ও বিছে কি একই প্রজাতির। বৃশ্চিক বা বিচ্ছু ও বিছার মধ্যে পার্থক্য

আমাদের পৃথিবী জানা-অজানা নানা ধরনের কীটপতঙ্গ ও প্রাণীর সমাহার। গত কয়েক হাজার বছর ধরেই মানুষ নানা প্রজাতির সঙ্গে পরিচিত হয়ে চলেছে প্রতিনিয়ত। নিত্যদিনই নতুন নতুন প্রজাতির কীটপতঙ্গ, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া খোঁজ হয়েই চলেছে। বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছে এমন প্রজাতির কীটপতঙ্গ, ভাইরাস যা আগে কখনোই কেউ দেখে নি। যদিও বা দেখে থাকেন তবে তা সামনে আসেনি। কীটপতঙ্গের এই জানা-অজানা প্রজাতির মধ্যে কিছু বিষাক্ত ও কিছু বিষ হীন। এমন প্রজাতিও এই বিশ্বে রয়েছে যা মানুষের প্রাণহানির কারণ হয়ে দাঁড়ায় মাঝে মাঝে। তবে কীটপতঙ্গের মধ্যে বিষাক্ত প্রজাতি থাকলেও আত্মরক্ষার কারণ ছাড়া এগুলো কখনোই মনুষ্য জাতির জন্য ক্ষতিকর নয়।

পৃথিবীর বুকে থাকা বিষাক্ত প্রজাতির মধ্যে বিচ্ছু বা বিছে, মাকড়সা, শতপদী ও আরও অন্যান্য অনেক কীটপতঙ্গ বর্তমান। কিন্তু অনেকেই এই বিছে ও বিচ্ছু কে একই প্রজাতির মনে করে থাকেন। বৃশ্চিক বা বিচ্ছু আরকনীডা শ্রেণীর, অর্থাৎ এটিকে মাকড়শার জাতভাই বলা চলে। কথ্য বাংলা ভাষায় যেহেতু শতপদী প্রাণীগুলোকে অনেকেই বিছা নামে জেনে থাকেন সে কারণে এই বৃশ্চিক বা বিচুর সাথে শতপদি প্রাণীদেরকে সমপ্রজাতি ভেবে ভুল করে থাকেন।

আরও পড়ুন- কী হবে যদি পৃথিবীতে অক্সিজেনের পরিমাণ সাধারণের থেকে দ্বিগুণ মাত্রায় বেড়ে যায়

আরো পড়ুন- আফ্রিকার ৮ টি বিপদজ্জনক প্রানী

বিচ্ছু বা বৃশ্চিকের সঙ্গে অনেক কীটপতঙ্গের মিল থাকলেও পার্থক্য গুলি খুবই স্পষ্ট। বৃশ্চিক অর্থাৎ স্কোরপিয়ান (Scorpioun) অন্যান্য কীটপতঙ্গের মতই অর্থপড শ্রেণী ভুক্ত। অর্থপড অর্থাৎ সেই সমস্ত কীটপতঙ্গ যেগুলির দেহে অনেকগুলি ভাগ থাকে। যেমন- চিংড়ি, মাকড়সা, কাঁকড়াবিছে, তেঁতুল বিছে, অন্যান্য আরো অনেক বিছে, মিলিপিড প্রভৃতি। 

বিচ্ছু বা কাকরাবিছের প্রজাতির সঙ্গে সেন্টিপিড (Centipede) মিল থাকলেও তারা পৃথক গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। স্করপিয়ন বা বৃশ্চিক মাকড়শার খুবই কাছের একটি প্রজাতি। এদের বলা হয় অর্চানিদা বা আর্কানিদা। বৃশ্চিকের পা মাকড়সার মতোই আট টি। এদের দেহে থাকে দুটি ভাগ, একটি দেহের ভাগ, অপরটি লেজের ভাগ, লেজের শেষভাগে থাকে বিষ থলি যা খুবই বিষাক্ত। এটি বৃশ্চিক দের শিকার করতে ও আত্মরক্ষা করতে সাহায্য করে। সামনের দিকে থাকে কাকরার মত দুটি দাড়া। কাঁকড়ার মত দাড়া এবং বিছে প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে এদের কাঁকড়াবিছে নামে অনেকেই জেনে থাকেন। পতঙ্গের মত এদের ডানা থাকে না, যেটা অবশ্য অন্যান্য প্রাণীদের জন্য একটি ভালো দিক। কারণ বিষাক্ত এই কীট উড়তে পারলে আরও মারাত্মক হয়ে উঠতো। এছাড়া আরেকটি অঙ্গ যা বিছে অর্থাৎ Centipede ও বিচ্ছু কে আলাদা করে, সেটি হলো বৃশ্চিক বা বিচ্ছুর কোন এন্টেনা থাকেনা। যেটি শতপদি দের মাথা সামনের দিকে লক্ষ্য করা যায়। 

এবার জেনে নেওয়া যাক সেন্টিপিড কি। তবেই বিচ্ছু ও বিছা এর মধ্যে পার্থক্যটা স্পষ্ট করা সম্ভব হবে। নতুন ল্যাটিন উপসর্গ থেকে সেন্টি অর্থাৎ শত এবং ল্যাটিন শব্দ পেস থেকে পেডিস অর্থাৎ পা শব্দটি এসেছে। অর্থপোডা শ্রেণীভূক্ত এই প্রজাতি চিলোপডা (Chilopoda) গোষ্ঠীভুক্ত। সেন্টিপিড (Centipede) দের দেহের বাইরের অংশে অনেকগুলি পা দ্বারা বেষ্টিত থাকে। এদের বেশির ভাগ প্রজাতি বিষাক্ত এবং এদের কামড় খুবই বেদনাদায়ক। এদের পায়ের সংখ্যা ৩০ থেকে ৩৫৪ এর মধ্যে হয়ে থাকে। পায়ের সংখ্যা এক এক প্রজাতির একেক রকম হয়। তবে এদের পা এর সংখ্যা সব সময় বিজোড় সংখ্যায় হয়ে থাকে, কখনো ঠিক ১০০ টি হয় না। মাকড়সা ও বৃশ্চিকের মত মাংসাশী হয় বিছেগুলিও। বৃশ্চিক ও বিছে গুলির শারীরিক গঠন ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য গুলি থেকে স্পষ্টতই বোঝা যায় যে দুটি একই শ্রেণীভূক্ত হলেও আলাদা আলাদা গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। বাংলা ভাষায় দুটিকে বিছে নামে ডাকা হলেও দুটি সম্পূর্ণই আলাদা প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। 

মন্তব্য করুন