আকাশ প্রদীপ কি? কেন জ্বালানো হয়?

আকাশ প্রদীপ কি? কেন জ্বালানো হয়?

আকাশ প্রদীপ কি: আজও গ্রামবাংলায় কার্তিক মাসের নাম শুনলে প্রথমে যেই জিনিসটার কথা মনে পড়ে তাহলো আকাশ প্রদীপ। হিন্দু মতে কার্তিক মাস হল সবচেয়ে পবিত্র একটি মাস। এই মাসেই জ্বালানো হয় এই বিশেষ আকাশ প্রদীপ। তাই কার্তিক মাসকে আকাশ প্রদীপ এর মাস বলা যায়। এই সময়ে অর্থাৎ আশ্বিন মাসের শেষ থেকে কার্তিক মাসের শেষ দিন পর্যন্ত তেল বা ঘি দিয়ে মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে থাকে সকলে। বহু প্রাচীন হিন্দু ধর্ম ও সংস্কৃতির এই প্রদীপ প্রজ্জ্বলন প্রথাটি। যা বিগত কয়েক বছর আগেও বাড়ি বাড়ি পালন করতে দেখা যেত। তবে সময়ের সাথে সাথে সে আলোটুকুও কমে আসতে শুরু করেছে। আগে গ্রামে ও শহরের সর্বত্র মানুষ তার বাড়িতে এই রীতি মেনে চলত। এখন শুধুমাত্র বাংলার গ্রামেগঞ্জে চোখে পড়ে। মানুষ এখন অনেকটাই সংস্কৃতি বিমুখ। তবে এখনো কোন কোন পরিবার বেশ জাঁকজমক ভাবেই মেনে চলে এই প্রদীপ প্রজ্জলন রীতি। 

কার্তিক মাসে এই প্রদীপ দানের পেছনে যে সকল কারণগুলো উল্লেখ করা হয় তা হলো – কার্তিক মাসে মন্দিরে এবং বাড়িতে যদি প্রদীপ জ্বালানো যায় তাহলে ত্রিদেব প্রসিদ্ধ ভগবান বিষ্ণু পরম সন্তোষ লাভ করেন। মনে করা হয় যাদের মধ্যে অনেক পাপ রয়েছে তারাও যদি কার্তিক মাসে নিয়ম করে শ্রী হরির মন্দিরে অথবা রাধাকৃষ্ণ মন্দিরে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন তাহলে তার পাপ ধীরে ধীরে স্খলন হয়। এই মাসে আকাশ প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করলে শুধু নিজের নয় বরং সমাজের মঙ্গল হয়। 

আকাশ প্রদীপ কি, কেন জ্বালানো হয়

এই ব্যাপারে যে নিয়মগুলো একটু মানা অবশ্যই ভালো তা হল – মূলত প্রদীপ জ্বালানোর জন্য ঘী, কর্পূর, তিলের তেল ব্যবহার করার কথা বেশি বলা হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের জন্য যে তেল বা ঘি ব্যবহৃত হয় তাতে যেন চর্বি জাতীয় বস্তু না থাকে। সব সময় বাড়ির কোনো উঁচু এবং পরিষ্কার স্থানে প্রদীপ জ্বালাতে হয়। তাই অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় একটি বাঁশের খুঁটির ওপর এই প্রদীপ জ্বালানো হয়। শাস্ত্রে বলা হয় এই সময় যদি কেউ শ্রী হরির মন্দিরে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন দেখেন তার মঙ্গল হয়। বছরের এই সময় এই আকাশ প্রদীপ যদি ভক্তি সহকারে ভগবানকে অর্পণ করা হয় তাহলে ভগবানের কৃপা লাভ করা যায়।

আরো পড়ুন- ভূত চতুর্দশী কী? কেন পালন করা হয় দিনটি?

তবে এই ব্যাপারটাকে আরেকটু ভালোভাবে বর্ণনা করে বলা যায় আশ্বিন মাসের সংক্রান্তি থেকে কার্তিক মাসের সংক্রান্তি পর্যন্ত প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলায় আকাশের উদ্দেশ্যে এই প্রদিপ দেওয়া হয়। আসলে যাদের জন্য প্রজ্জলন করা হয় তারা হলেন দামোদর অর্থাৎ ভগবান বিষ্ণু এবং লোলা অর্থাৎ মা লক্ষী। যিনি জগৎপালক অর্থাৎ ভগবান বিষ্ণু এবং যিনি আমাদের জৈবিক ক্ষুধা তৃষ্ণা নিবারণ করেন এবং সমৃদ্ধ করেন অর্থাৎ মা লক্ষ্মী তাদেরকে কৃতজ্ঞতা ও সম্মান জানানোর জন্য এই কার্তিক মাসে আকাশ প্রদীপ প্রজ্জলন করা হয়। এই মাসে প্রত্যেকদিন নিয়ম করে কেউ কেউ এখনো প্রদীপ দান করে থাকেন। আর এর সঠিক সময় হল যখন সদ্য বিকেল শেষে অন্ধকার নামে। এই প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করার জন্য একটি প্রদীপ এর চারপাশে একটি ঘেরা ব্যবহার করা হয় যাতে হওয়ায় তা তাড়াতাড়ি নিভে না যায়। 

এই যে মাটির প্রদীপ ব্যবহার করা হয় এই দিন এর একটি মানে রয়েছে। বলা হয় এই প্রদিপ মানব দেহের প্রতিক। যেমন মানব শরীর পঞ্চ ভূত দ্বারা নির্মিত হয়, তেমনি এই প্রদিপ ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ ও ব্যোম অর্থাৎ মাটি ও জল দ্বারা সৃষ্টি হয়, অনন্ত আকাশের বুকে স্হান হয় এবং অগ্নি-বায়ু জ্বলতে ও জ্বালাতে সাহায্য করে। দেহের প্রতীক এই প্রদীপ দ্বারা শুধু ভগবান বিষ্ণুর কৃপা লাভের উদ্দেশ্যে জানানো হয় তা নয় এর সঙ্গে সঙ্গে এই রীতি দ্বারা কৃতজ্ঞতা জানানো হয় নিজের পূর্বপুরুষদের। বলা হয় পূর্বপুরুষদের আশীর্বাদও নেমে আসে এই আলোর রেখা ধরে। যেহেতু এই সময়কালে যোগনিদ্রা ত্যাগ করে ভগবান শ্রীহরি এবং তিনি এই সময় প্রসন্ন থাকেন তাই এই প্রদীপ জ্বালিয়ে অবশ্যই তাকেও কৃতজ্ঞতা জানানো সকলের সমুচিত। 

Previous articleবাড়িতে কেক কিভাবে তৈরি করা যায়। How to make a cake in bengali
Next articleআমাজন অরণ্যের রহস্য, আদিবাসী, অববাহিকা, জীবজন্তু ও উদ্ভিদ
আমরা Extra Gyaan এর সদস্যরা পেশাগতভাবে ব্লগিং এর সঙ্গে যুক্ত। আমরা ইন্টারনেট, প্রযুক্তি, নাসা, মহাকাশের বিভিন্ন তথ্য, শিক্ষাগত দিক ও খেলাধুলার বিষয়ে নিবন্ধ লিখে থাকি সম্পূর্ণ বাংলা ভাষায়। আমাদের উদ্দেশ্য হলো বাংলা ভাষায় আপনাদের সামনে সেরা তথ্য তুলে ধরা।

Leave a Reply