টাইম ক্যাপসুল কি? কি উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়

টাইম ক্যাপসুল কি?: নাম শুনে অনেকেই মনে করতে পারেন যে টাইম ক্যাপসুল হলো অদ্ভুত কোন ক্যাপসুল। যা হয়তো আপনাকে সময় আগে বা পিছনে নিয়ে যেতে পারে। তবে ব্যাপারটি সেরকম নয়। হ্যাঁ! হয়তো এই ক্যাপসুল আপনাকে ভবিষ্যতে বা অতীতে নিয়ে যেতে সক্ষম হবে না, তবে অতীত সম্পর্কে বহু মূল্যবান তথ্য আমাদের সামনে তুলে ধরে এই ক্যাপসুল।

টাইম ক্যাপসুল কি?

টাইম ক্যাপসুল হল এমন এক ক্যাপসুল যার ভিতরটুকু পরিপূর্ণ থাকে ঐতিহাসিক মূল্যবান সমস্ত তথ্য গুলি দ্বারা। এটি সাধারণত ভবিষ্যতের লোকেদের অতীতের সেই সময়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলিতে অবহিত করার একটি প্রচেষ্টা। সহজ ভাষায় বলতে গেলে টাইম ক্যাপসুলের ভিতরে থাকা বিভিন্ন বস্তু যখন বহু বছর পরে খুঁজে বার করা হয় তখন সেই সমস্ত বস্তু দ্বারা প্রাপ্ত তথ্য গুলি সাহায্য করে অতীতের সেই সময়কাল অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে। টাইম ক্যাপসুল মূলত ভবিষ্যতের ঐতিহাসিক, নৃতত্ত্ববিদ, প্রত্নতাত্ত্বিক দের সাহায্য করার উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়।

টাইম ক্যাপসুল তৈরির উদ্দেশ্য:

টাইম ক্যাপসুল কোন বিশেষ তত্ত্ব বা কোনো বিশেষ অনুষ্ঠান সম্পর্কে তথ্য প্রদান করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়। যাতে লিখিত থাকে টাইম ক্যাপসুল নির্মাণের সময়কাল এবং তা কত বছর পর খোলা হবে সেই সময় কাল প্রভৃতি। এতে কখনো থাকে কোন স্থাপত্য নির্মাণ এর সময়কাল, নির্মাতা কে বা করা, তাদের ছবি এবং অন্যান্য তথ্য গুলি; আবার কখনও কখনও সেই সময়ের মুদ্রা, কোন বিশেষ বই অথবা পুতুল। যে কোন কিছুই থাকতে পারে এই সময় ক্যাপসুল এর মধ্যে।

আরও পড়ুন-ইস্টার আইল্যান্ডের রহস্য। মোয়াই কী?

এই ধরনের নিদর্শন কখনো কোন স্থাপত্যের নিচে আবার কখনো মাটির নিচে স্থাপন করা হয়। বিশেষ কারণ ছাড়া বা উল্লিখিত সময় ছাড়া এটি বার করা হয় না। যে কারণে সময়ের সাথে সাথে ইতিহাস উন্মোচনের এই প্রক্রিয়াকে যথাযথই টাইম ক্যাপসুল বলা যায়। পৃথিবী জুড়ে থাকা এমনই কয়েকটি টাইম ক্যাপসুল সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।

পৃথিবীতে বিভিন্ন সময় পাওয়ার টাইম ক্যাপসুল গুলি:

১৭৭৭ সালের দিকে সাটিলো দে লা বিরেরাতে একটি ধর্মীয় মূর্তির মধ্যে একটি টাইম ক্যাপসুল আবিষ্কার করা হয়। এছাড়া ২০১৭ সালের ৩০ শে, নভেম্বর স্পেনের বর্গস শহরে একটি টাইম ক্যাপসুল পাওয়া যায়। যেটিতে যিশুখ্রিস্টের একটি কাঠের মূর্তি ছিল এবং তার ভিতরে লুকানো ছিল অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং অনেক ধরনের সাংস্কৃতিক নথিগুলি। এই নথিগুলো লেখা হয়েছিল ক্যাথেড্রালের চ্যাপলিনের দ্বারা ১৭৭৭ সালের দিকে।

আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে ১৭৯৫ সালের দিকে একটি টাইম ক্যাপসুল তৈরি করেন স্যামুয়েল অ্যাডামস এবং পল রেভার একত্রে। এটি ২০১৪ সালের বোস্টনের ম্যাসাচুসেট্স স্টেট হাউজ থেকে পাওয়া যায়, যেটি বোস্টনে অবস্থিত। যদিও ১৭৯৫ সালের এই ক্যাপসুল ১৮৫৫ সাল নাগাদ একবার খোলা হয়েছিল এবং তাতে নতুন কিছু তথ্য যোগ করে পুনরায় বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২৫৫ বছর পুরানো এই টাইম ক্যাপসুল ভিতরে ছিল সেই সময়ের একটি খবরের কাগজ, ২৪ টি মুদ্রা যা অনেক প্রাচীন, একটি রুপোর পাত্র, জেটিতে ছিল টাইম ক্যাপসুলটি তৈরীর সময় কাল ৪ঠা, জুলাই ১৭৯৫। আমেরিকার স্বাধীনতা লাভের কুড়ি বছর পরে এটি নির্মিত হয়।

১৯০০ সালে নির্মিত আরো একটি টাইম ক্যাপশন খুঁজে পান প্রত্নতাতত্বিকরা। এই টাইম ক্যাপসুলটি “ডেট্রয়েট সেঞ্চুরি বক্স” নামে পরিচিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের ডেট্রয়েট শহরে ১৯০০ সালের ৩১ শে, ডিসেম্বর এই ডেট্রয়েট সেঞ্চুরি বক্স টাইম ক্যাপসুল তৈরি করা হয়। সেই সময়কার মেয়র উইলিয়াম সি মায়বুরি এর তত্ত্বাবধানে এটি তৈরি করা হয়েছিল। একটি তামার বাক্সে অনেকগুলি চিঠি, ভবিষ্যৎবাণী, প্রায় ৫৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ছবি এবং সেই সময়কার কিছু তথ্য সমন্বয়ে তৈরি হয়েছিল এই ক্যাপসুলটি। ১০০ বছর পর সেই একই দিনে অর্থাৎ ২০০০ সালের ৩১ শে, ডিসেম্বর মেয়র ভেনিস আর্চারের সভাপতিত্বে খোলা হয়েছিল। 

এছাড়া সারা বিশ্বজুড়ে অনেক টাইম ক্যাপসুল বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে রয়েছে এবং বর্তমানে নিত্যনতুন ক্যাপসুল ভবিষ্যতের মানুষদের তথ্য প্রদানের উদ্দেশ্যে তৈরি হয়েছে চলেছে।

Leave a Reply