পরিযায়ি পাখি, শীতকালিন ভারতীয় পাখি

পরিযায়ি পাখি, শীতকালিন ভারতীয় পাখি: সারাবিশ্বের সবুজায়নের দেশগুলির মধ্যে অন্যতম একটি দেশ হলো ভারতবর্ষ। সারা বিশ্বের নানা ভৌগোলিক পরিবেশ এবং জলবায়ু দেখতে পাওয়া যায়, তার সবকটি পরিবেশ ও জলবায়ুর সমাহার আছে এই ভারতে। পাহাড়-পর্বত থেকে সমুদ্র, নদী থেকে বন-জঙ্গল, ছাড়াও রয়েছে মালভূমি ও মরুভূমিও। জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে বিশ্বের নানা দেশ থেকে কয়েকটি পাখির প্রজাতি ভারতে এসে উপস্থিত হয়। এদের মধ্যে কিছু পরিযায়ী পাখি গ্রীষ্মে আসে আবার কিছু পাখি শীতকালে ভারতে আসে। ভারতবর্ষে আসার শীতকালীন কিছু পাখির বিবরণ নিচে দেওয়া হল। 

সাইবেরিয়ান ক্রেইন – সাইবেরিয়ান ক্রেইন একটি জলচর প্রজাতির পাখি। এশিয়া মহাদেশের বেশ কিছু দেশে এই প্রজাতির পাখি দেখতে পাওয়া যায়। এদের শুধু একটিই প্রজাতি রয়েছে। এদের কোন উপজাতি নেই। এই পরিযায়ী পাখি সাদা রঙের হয়। রাশিয়ার আর্টিক টুন্ড্রায় দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে একটি গোষ্ঠী প্রত্যেক বছরই শীত কালে পূর্ব ভারতে চলে যায়। এদের ওজন চার কেজি থেকে আট কেজি পর্যন্ত হতে পারে এবং এরা লম্বার ১৪০ সেমি পর্যন্ত হয়। 

উত্তরে খুন্তেহাঁস – এই পাখিটি কে প্রায় সারা বিশ্বে দেখতে পাওয়া যায়। শীতকালে এরা অন্যান্য এলাকা থেকে দক্ষিণ ইউরোপ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকার কিছু অংশে এসে উপস্থিত হয়। এই প্রজাতির হাঁসটি মূলত সবুজ রঙের জন্যই পরিচিত। 

ওয়াগ টেইলস্ – এই ওয়াগটেল পাখিগুলি আকারে ছোট হয়। এরা মূলত সাদা বা হলুদ রঙের হয়ে থাকে। এদের কয়েকটি উপপ্রজাতি রয়েছে যা বিশ্বের অন্যান্য দেশে পাওয়া যায়। এই পাখিগুলি শীতকালে ভারতে আসা পাখিদের মধ্যে অন্যতম। 

পরিযায়ি পাখি, শীতকালিন ভারতীয় পাখি

অস্প্রি – এগুলি বাজ পাখির প্রজাতি। এই অস্প্রির প্রধান খাদ্য হলো মাছ। তাই নদনদী এবং সমুদ্রের আশেপাশেই থাকে এবং রাজত্ব করে। এরা দৈর্ঘ্য ২৫ ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে। এদের গায়ের রং বাদামী এবং ধূসর হয়ে থাকে। 

হ্যারিয়ার্স – হ্যারিয়ার একটি দুর্ধর্ষ শিকারি প্রজাতির পাখি। এরা পরিযায়ী শ্রেণীর অন্তর্গত। সমস্ত বিশ্বের মোট ১৩ টি প্রজাতির হ্যারিয়ার রয়েছে। শীতের সময় এই হ্যারিয়ার্স পাখিগুলি ভারত এবং বাংলাদেশ দেখতে পাওয়া যায়। 

আরও পরুন – সেরা 10 টি ভারতীয় গেমিং চ্যানেল। ভারতীয় গেমিং ইউটিউব চ্যানেল

রোজি পেলিক্যান – শীতকালে উত্তর ভারতে দেখতে পাওয়া যায় রোজি পেলিকান প্রজাতির পাখিগুলি। এরা ইউরোপ থেকে ভারতবর্ষে এসে উপস্থিত হয়। এদের ডানাগুলি আকারে বেশ বড়। এরা মিষ্টি জলের হ্রদ বা ঝিল পছন্দ করে। এই পাখিগুলি ছোট ও মাঝারি আকারের মাছ খেয়ে থাকে। এরা খাবার সন্ধানে অনেক দূর পাড়ি দিতে পারে। এগুলোর শক্তিশালী পা থাকে এবং লম্বা ও চওড়া ঠোঁট থাকে। এরা সাধারণত সাদা বা হালকা গোলাপি রঙের হয়ে থাকে। 

গাডওয়াল – ছোট এবং বাদামী রঙের দেখতে হয় এই গাডওয়াল পাখিটি।এটি ছোটো হাঁসের প্রজাতি। ভারতবর্ষের ভোপালে এরা শীতকাল এসে উপস্থিত হয়। এরা মিষ্টি জলের হ্রদ এবং জলাশয় পছন্দ করে। এই হাঁসের প্রজাতিটি উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপে থেকে আসে। 

ব্লুথ্রোট – এই জাতীয় পাখি গুলি ছোট আকারের পাখি। ভারতের রাজস্থানে এদের শীতকালে দেখতে পাওয়া যায়। এই পাখিগুলি দেখতে বেশ সুন্দর হয়। ইউরোপ থেকে তারা চলে আসে রাজস্থানে। আলাস্কা পর্বতের ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচতে তারা এই সময় ভারতে চলে আসে। পাখি গুলির গলার দিকে বেশ উজ্জ্বল নীল বর্ণের পালক হয় যা তাদের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দেয়। 

আমুর ফ্যালকন – এই প্রজাতির পাখি গুলি আকৃতিতে বেশ বড় হয় না। দক্ষিণ-পূর্ব সাইবেরিয়া ও উত্তর চীন হতে এই পাখিগুলি দলবেঁধে শীতকালে ভারতের উপর দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাড়ি দেয়। তারা সাধারণত নানা কীটপতঙ্গ খেয়ে থাকে। এই পাখি প্রচুর পরিমাণে শিকার হওয়ার ঘটনায় ভারতে এই প্রজাতির পাখি সংরক্ষণ করা হয়। 

শীতকালিন পরিযায়ি পাখি, Migratory birds

এশিয়াটিক স্প্যারোহক – এরা ঈগলের মত পাখি। এই পাখি শিকারি প্রকৃতির হয়ে থাকে। এটি অন্যান্য শিকারী ঈগলের তুলনায় ছোট আকারের। শীতের সময় এরা উত্তরের দেশগুলো থেকে ভারত ও মায়ানমারের চলে আসে। তারা ৫০০ গ্রাম ওজন পর্যন্ত শিকার ধরতে সক্ষম। 

রাফ – মাঝারি আকারের বাদামি ধূসর রঙের পাখি এই রাফ আর্কটিকে তুন্দ্রায় বসবাস করে। সেখানেই তারা সাধারণত ডিম পাড়ে ও বংশবৃদ্ধি করে। সাধারণত গ্রীষ্মের সময় আরামে থাকতে পারলেও ভয়ঙ্কর শীতের হাত থেকে বাঁচতে তারা ওই সময় দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় পারি দেয়। ভারতে প্রচুর খাবারের সন্ধান পাওয়ায় এই সময়ে তারা ভারতে চলে আসে। 

গ্রিটার ফ্লেমিংগো – অন্যান্য ফ্লেমিংগো প্রজাতির মধ্যে গ্রিটার ফ্লেমিংগো সবচেয়ে বড় প্রজাতি। এরা সাধারণত কোন লবণাক্ত জলাশয়ে এসে জমা হয়। এরা দলবদ্ধ ভাবে থাকতে ভালোবাসে। শিকারিদের হাত থেকে বাঁচতে তারা দলবদ্ধভাবে বিচরণ করে। ছোট মাছ, পোকা, শাওলা খায় এরা। ফ্লেমিঙ্গো গুলি ডিম ফোটার পর ধূসর সাদা রংয়ের হয়ে থাকে। ধীরে ধীরে তারা গোলাপি রঙের পরিণত হয়। অক্টোবর-নভেম্বর মাসে তারা অন্যান্য দেশ থেকে ভারতে এসে উপস্থিত হয়। 

মন্তব্য করুন