চন্দ্রযান-২ এর চোখে ধরা পড়লো সূর্যের অভ্যন্তরের মহাপ্রলয়! কি বলছেন গবেষকরা

আমাদের পৃথিবী যে নক্ষত্র কে প্রদক্ষিণ করে চলেছে সেই নক্ষত্র অর্থাৎ সূর্যকে আমরা সকলেই জানি। তবে এই সূর্যের অভ্যন্তর কতটা মারাত্মক তার পরিমাপ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। প্রতিমুহূর্তে সূর্যের অভ্যন্তরে হয়ে চলেছে প্রচণ্ড বিস্ফোরণ, সূর্যের যে অংশে এই ঘটনা ঘটে চলেছে সেই অঞ্চলকে বলা হয় করোনা (Corona)। এই অন্তর দহনের পোশাকি নাম করোণাল মাস ইজেকশন (Coronal Mass Ejection)। সূর্যের অভ্যন্তরে হয়ে চলা এই মহাপ্রলয় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন যন্ত্রের মাধ্যমে ধরা পড়েছে বিজ্ঞানীদের চোখে। ঠিক সেই রকমই আবারও এক মহাপ্রলয়ের খোঁজ পেল চন্দ্রযান-২। আর সেই সংকেত থেকেই সূর্যমন্ডলের চৌম্বক ক্ষেত্রের পরিমাণ করতে সক্ষম হলেন ভারতীয় গবেষকরা।

IIA (ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোফিজিক্স) এর একদল বিজ্ঞানী সূর্যের পারিপার্শ্বিক অঞ্চল থেকে বেরিয়ে আসা অতি কম মাত্রার রেডিও তরঙ্গ নিয়ে গবেষণা করছিলেন। তবে সম্প্রতি প্রাপ্ত রেডিও তরঙ্গ পূর্বের তুলনায় অনেকটাই স্পষ্ট। সূর্যের অভ্যন্তর থেকে বেরিয়ে আসা এই বিকিরণের এত স্পষ্ট ধারণা নিয়ে পুনরায় গবেষণা শুরু করেছেন তারা। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন করোণাল মাস ইজেকশন (CME) হল সেই ধরনের শক্তি যা সূর্যের অভ্যন্তরে থেকে বেরিয়ে আসা সবথেকে শক্তিশালী বিকিরণ। বিজ্ঞানীদের ধারণা অনুযায়ী CME এর ফলে কয়েক হাজার কণা ঘণ্টায় প্রায় এক লক্ষ মাইল গতিতে ছুটে চলে। এত গতিতে ছুটে আসা কণাগুলি পৃথিবীর পারিপার্শ্বিক অঞ্চলের স্যাটেলাইট সিস্টেমের বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

অধ্যাপক আর রমেশ জানিয়েছেন সূর্য থেকে বেরিয়ে আসা করোণাল মাস ইজেকসন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কেন্দ্রের কাছাকাছি অঞ্চল থেকে ছুটে আসে। তবে সম্প্রতি প্রাপ্ত সংকেত গুলি সূর্যের একেবারে কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে এসেছে। যে অঞ্চলকে বলা হয় ফটোস্ফিয়ার। এই অঞ্চল থেকে বেরিয়ে আসা বিকিরণ এর উপর গবেষণা খুব কম পরিমাণে হয়েছে। তিনি আরো জানান এই ধরনের কণাগুলি পৃথিবীর উপর বিশেষ প্রভাব ফেলতে সক্ষম।

CME থেকে প্রাপ্ত তথ্য গুলির সাহায্যে সূর্যের ভিতরের ভর, ইলেকট্রন এর ঘনত্ব, চৌম্বক ক্ষেত্র সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা সম্ভব হবে। আর এই তথ্যগুলি পেতে সাহায্য করেছে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের রেডিও টেলিস্কোপ। টেলিস্কোপ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে রয়েছে অতিবেগুনি রশ্মি এবং সাদা আলো। বিজ্ঞানীরা সেই তথ্য থেকেই বিকিরণের পোলারাইজেশন পাওয়ার অংক কষে বের করে ফেলেছেন ইতিমধ্যেই।

আরো পড়ুন-চাঁদে ক্রোমিয়াম-ম্যাঙ্গানিজ সনাক্ত করল চন্দ্রযান-২! আশার আলো দেখছে ISRO

সূর্য থেকে বিকিরিত এই ধরনের রেডিও তরঙ্গ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা বর্তমানে বেশ উৎসাহিত। কারণ গবেষকরা জানিয়েছেন সূর্যে ঘটতে থাকা সৌরঝড় যেকোনো সময় আছড়ে পড়তে পারে পৃথিবীতে। এই ঝড়ের প্রভাব পৃথিবীতে পড়ার সম্ভাবনা ১.৬ শতাংশ থেকে প্রায় ১২ শতাংশ পর্যন্ত। এই ধরনের বিপদের হাত থেকে ভবিষ্যতে সুরক্ষিত হওয়ার জন্য বিজ্ঞানীরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে চলেছেন।

“চন্দ্রযান-২ এর চোখে ধরা পড়লো সূর্যের অভ্যন্তরের মহাপ্রলয়! কি বলছেন গবেষকরা”-এ 1-টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন