Top 10 Rabindranath Poems in Bengali

Top 10 Rabindranath Poems in Bengali: বাংলা ভাষায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা আমরা সকলেই আমাদের পাঠ্যবইতে পড়েছি। প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষায় বিভিন্ন বিভাগে রবীন্দ্রনাথের কবিতা উল্লেখ করা আছে। শুধুমাত্র কবিতা নয় উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, দর্শন, সংগীত ও রবীন্দ্রনাথের চিত্র অত্যন্ত জনপ্রিয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কিছু বিখ্যাত কবিতা যেগুলি অত্যন্ত জনপ্রিয় সেখান থেকে সেরা ১০ টি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা নিচে উল্লেখ করা হলো। এই ধরনের কবিতা গুলি বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে বা কবিতা প্রতিযোগিতায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারে।

সেরা ১০ টি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা

বিষয়Rabindranath Poems in Bengali
বিভাগশিক্ষামূলক
লেখকরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

Top 10 Rabindranath Poems in Bengali

1. প্রশ্ন (Rabindranath Poems in Bengali)

মা গো, আমায় ছুটি দিতে বল্‌,
সকাল থেকে পড়েছি যে মেলা।
এখন আমি তোমার ঘরে বসে
করব শুধু পড়া-পড়া খেলা।
তুমি বলছ দুপুর এখন সবে,
নাহয় যেন সত্যি হল তাই,
একদিনও কি দুপুরবেলা হলে
বিকেল হল মনে করতে নাই?
আমি তো বেশ ভাবতে পারি মনে
সুয্যি ডুবে গেছে মাঠের শেষে,
বাগ্‌দি-বুড়ি চুবড়ি ভরে নিয়ে
শাক তুলেছে পুকুর-ধারে এসে।
আঁধার হল মাদার-গাছের তলা,
কালি হয়ে এল দিঘির জল,
হাটের থেকে সবাই এল ফিরে,
মাঠের থেকে এল চাষির দল।
মনে কর্‌-না উঠল সাঁঝের তারা,
মনে কর্‌-না সন্ধে হল যেন।
রাতের বেলা দুপুর যদি হয়
দুপুর বেলা রাত হবে না কেন।

2. রবিবার (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা)

সোম মঙ্গল বুধ এরা সব
আসে তাড়াতাড়ি,
এদের ঘরে আছে বুঝি
মস্ত হাওয়াগাড়ি?
রবিবার সে কেন, মা গো,
এমন দেরি করে?
ধীরে ধীরে পৌঁছয় সে
সকল বারের পরে।
আকাশপারে তার বাড়িটি
দূর কি সবার চেয়ে?
সে বুঝি, মা, তোমার মতো
গরিব-ঘরের মেয়ে?
সোম মঙ্গল বুধের খেয়াল
থাকবারই জন্যেই,
বাড়ি-ফেরার দিকে ওদের
একটুও মন নেই।
রবিবারকে কে যে এমন
বিষম তাড়া করে,
ঘণ্টাগুলো বাজায় যেন
আধ ঘণ্টার পরে।
আকাশ-পারে বাড়িতে তার
কাজ আছে সব-চেয়ে
সে বুঝি, মা, তোমার মতো
গরিব-ঘরের মেয়ে।
সোম মঙ্গল বুধের যেন
মুখগুলো সব হাঁড়ি,
ছোটো ছেলের সঙ্গে তাদের
বিষম আড়াআড়ি।
কিন্তু শনির রাতের শেষে
যেমনি উঠি জেগে,
রবিবারের মুখে দেখি
হাসিই আছে লেগে।
যাবার বেলায় যায় সে কেঁদে
মোদের মুখে চেয়ে।
সে বুঝি, মা, তোমার মতো
গরিব ঘরের মেয়ে?

3. জন্মভূমি (Rabindranath Poems in Bengali)

এই যে অসীম স্বদেশভূমি
তুমি যে আমার স্বজনভুমি,
এই নিশ্বাস এই প্রশ্বাস
মা জননী তুমি এ বিশ্বভুমি।

এ মাটি আমার অঙ্গশরীর
চিরবন্ধন স্বদেশপ্রীতি মা,
শুধু এ মুখে তোমার সে ভাষা
এই স্বাধীন বাংলা আমার গাঁ।

তোমার এ বুকে কী স্নেহ-মায়া?
জুরাই হৃদয় জুরাই এ প্রাণ,
আকাশে বাতাসে স্বর্গেরসুখ
মা জননী তুমি আমার এ প্রাণ ।

সীমার মাঝে কী অসীম মা তুমি?
আমার ছোট্ট এ জন্মভূমি,
তোমার এ কোলে মা জন্মমৃত্যু
তুমি যে আমার এ স্বর্গভূমি।

Top 10 Rabindranath Poems in Bengali

4. অকর্মার বিভ্রাট (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা)

লাঙল কাঁদিয়া বলে ছাড়ি দিয়ে গলা,
তুই কোথা হতে এলি ওরে ভাই ফলা?
যেদিন আমার সাথে তোরে দিল জুড়ি
সেই দিন হতে মোর মাথা-খোঁড়াখুঁড়ি।
ফলা কহে, ভালো ভাই, আমি যাই খ’সে,
দেখি তুমি কী আরামে থাক ঘরে ব’সে।
ফলাখানা টুটে গেল, হল্‌খানা তাই
খুশি হয়ে পড়ে থাকে, কোনো কর্ম নাই।
চাষা বলে, এ আপদ আর কেন রাখা,
এরে আজ চলা করে ধরাইব আখা।
হল্‌ বলে, ওরে ফলা, আয় ভাই ধেয়ে–
খাটুনি যে ভালো ছিল জ্বলুনির চেয়ে।

5. এপারে-ওপারে (Rabindranath Poems in Bengali)

রাস্তার ওপারে
বাড়িগুলি ঘেঁষাঘেঁষি সারে সারে।
ওখানে সবাই আছে
ক্ষীণ যত আড়ালের আড়ে-আড়ে কাছে-কাছে।
যা-খুশী প্রসঙ্গ নিয়ে
ইনিয়ে-বিনিয়ে
নানা কণ্ঠে বকে যায় কলস্বরে।
অকারণে হাত ধরে;
যে যাহারে চেনে
পিঠেতে চাপড় দিয়ে নিয়ে যায় টেনে
লক্ষ্যহীন অলিতে গলিতে,
কথা-কাটাকাটি চলে গলাগলি চলিতে চলিতে।
বৃথাই কুশলবার্তা জানিবার ছলে
প্রশ্ন করে বিনা কৌতূহলে।
পরস্পরে দেখা হয়,
বাঁধা ঠাট্টা করে বিনিময়।
কোথা হতে অকস্মাৎ ঘরে ঢুকে
হেসে ওঠে অহেতু কৌতুকে।

“আনন্দবাজার’ হতে সংবাদ-উচ্ছিষ্ট ঘেঁটে ঘেঁটে
ছুটির মধ্যাহ্নবেলা বিষম বিতর্কে যায় কেটে।
সিনেমা-নটীর ছবি নিয়ে দুই দলে
রূপের তুলনা-দ্বন্দ্ব চলে,
উত্তাপ প্রবল হয় শেষে
বন্ধুবিচ্ছেদের কাছে এসে।
পথপ্রান্তে দ্বারের সম্মুখে বসি
ফেরিওয়ালাদের সাথে হুঁকো-হাতে দর-কষাকষি।
একই সুরে দম দিয়ে বার বার
গ্রামোফোনে চেষ্টা চলে থিয়েটরি গান শিখিবার।
কোথাও কুকুরছানা ঘেউ-ঘেউ আদরের ডাকে
চমক লাগায় বাড়িটাকে।
শিশু কাঁদে মেঝে মাথা হানি,
সাথে চলে গৃহিণীর অসহিষ্ণু তীব্র ধমকানি।
তাস-পিটোনির শব্দ, নিয়ে জিত হার
থেকে থেকে বিষম চিৎকার।
যেদিন ট্যাক্সিতে চ’ড়ে জামাই উদয় হয় আসি
মেয়েতে মেয়েতে হাসাহাসি,
টেপাটেপি, কানাকানি,
অঙ্গরাগে লাজুকেরে সাজিয়ে দেবার টানাটানি।
দেউরিতে ছাতে বারান্দায়
নানাবিধ আনাগোনা ক্ষণে ক্ষণে ছায়া ফেলে যায়।
হেথা দ্বার বন্ধ হয় হোথা দ্বার খোলে,
দড়িতে গামছা ধুতি ফর্‌ফর্‌ শব্দ করি ঝোলে।
অনির্দিষ্ট ধ্বনি চারি পাশে
দিনে রাত্রে কাজের আভাসে।
উঠোনে অনবধানে-খুলে-রাখা কলে
জল বহে যায় কলকলে;
সিঁড়িতে আসিতে যেতে
রাত্রিদিন পথ স্যাঁত্‌সেঁতে।
বেলা হলে ওঠে ঝন্‌ঝনি
বাসন-মাজার ধ্বনি।
বেড়ি হাতা খুন্তি রান্নাঘরে
ঘরকরনার সুরে ঝংকার জাগায় পরস্পরে।
কড়ায় সর্ষের তেল চিড়্‌বিড়্‌ ফোটে,
তারি মধ্যে কইমাছ অকস্মাৎ ছ্যাঁক্‌ করে ওঠে।
বন্দেমাতরম্‌-পেড়ে শাড়ি নিয়ে তাঁতিবউ ডাকে
বউমাকে।
খেলার ট্রাইসিকেলে
ছড়্‌ ছড়্‌ খড়্‌ খড়্‌ আঙিনায় ঘোরে কার ছেলে।
যাদের উদয় অস্ত আপিসের দিক্‌চক্রবালে
তাদের গৃহিণীদের সকালে বিকালে
দিন পরে দিন যায়
দুইবার জোয়ার-ভাঁটায়
ছুটি আর কাজে।
হোথা পড়া-মুখস্থের একঘেয়ে অশ্রান্ত আওয়াজে
ধৈর্য হারাইছে পাড়া,
এগ্‌জামিনেশনে দেয় তাড়া।
প্রাণের প্রবাহে ভেসে
বিবিধ ভঙ্গীতে ওরা মেশে।
চেনা ও অচেনা
লঘু আলাপের ফেনা
আবর্তিয়া তোলে
দেখাশোনা আনাগোনা গতির হিল্লোলে।

রাস্তার এপারে আমি নিঃশব্দ দুপুরে
জীবনের তথ্য যত ফেলে রেখে দূরে
জীবনের তত্ত্ব যত খুঁজি
নিঃসঙ্গ মনের সঙ্গে যুঝি,
সারাদিন চলেছে সন্ধান
দুরূহের ব্যর্থ সমাধান।
মনের ধূসর কূলে
প্রাণের জোয়ার মোরে একদিন দিয়ে গেছে তুলে।
চারি দিকে তীক্ষ্ণ আলো ঝক্‌ঝক্‌ করে
রিক্তরস উদ্দীপ্ত প্রহরে।
ভাবি এই কথা–
ওইখানে ঘনীভূত জনতার বিচিত্র তুচ্ছতা
এলোমেলো আঘাতে সংঘাতে
নানা শব্দ নানা রূপ জাগিয়ে তুলিছে দিনরাতে।
কিছু তার টেঁকে নাকো দীর্ঘকাল,
মাটিগড়া মৃদঙ্গের তাল
ছন্দটারে তার
বদল করিছে বারংবার।
তারি ধাক্কা পেয়ে মন
ক্ষণে-ক্ষণ
ব্যগ্র হয়ে ওঠে জাগি
সর্বব্যাপী সামান্যের সচল স্পর্শের লাগি।
আপনার উচ্চতট হতে
নামিতে পারে না সে যে সমস্তের ঘোলা গঙ্গাস্রোতে।

6. বিচার (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা)

আমার খোকার কত যে দোষ
সে-সব আমি জানি,
লোকের কাছে মানি বা নাই মানি।
দুষ্টামি তার পারি কিম্বা
নারি থামাতে,
ভালোমন্দ বোঝাপড়া
তাতে আমাতে।
বাহির হতে তুমি তারে
যেমনি কর দুষী
যত তোমার খুশি,
সে বিচারে আমার কী বা হয়।
খোকা বলেই ভালোবাসি,
ভালো বলেই নয়।

খোকা আমার কতখানি
সে কি তোমরা বোঝ।
তোমরা শুধু দোষ গুণ তার খোঁজ।
আমি তারে শাসন করি
বুকেতে বেঁধে ,
আমি তারে কাঁদাই যে গো
আপনি কেঁদে।
বিচার করি, শাসন করি,
করি তারে দুষী
আমার যাহা খুশি।
তোমার শাসন আমরা মানি নে গো।
শাসন করা তারেই সাজে
সোহাগ করে যে গো।

Top 10 Rabindranath Poems in Bengali

7. বিলাপ (Rabindranath Poems in Bengali)

ওগো এত প্রেম – আশা প্রাণের তিয়াষা
কেমনে আছে সে পাসরি !
তবে সেথা কি হাসে না চাঁদিনী যামিনী ,
সেথা কি বাজে না বাঁশরি !
সখী , হেথা সমীরণ লুটে ফুলবন ,
সেথা কি পবন বহে না !
সে যে তার কথা মোরে কহে অনুক্ষণ
মোর কথা তারে কহে না !
যদি আমারে আজি সে ভুলিবে সজনী
আমারে ভুলাল কেন সে !
ওগো এ চির জীবন করিব রোদন
এই ছিল তার মানসে !
যবে কুসুমশয়নে নয়নে নয়নে
কেটেছিল সুখরাতি রে ,
তবে কে জানিত তার বিরহ আমার
হবে জীবনের সাথী রে !
যদি মনে নাহি রাখে , সুখে যদি থাকে ,
তোরা একবার দেখে আয় —
এই নয়নের তৃষা পরানের আশা
চরণের তলে রেখে আয় ।
আর নিয়ে যা রাধার বিরহের ভার ,
কত আর ঢেকে রাখি বল্ ।
আর পারিস যদি তো আনিস হরিয়ে
এক – ফোঁটা তার আঁখিজল ।
না না , এত প্রেম সখী ভুলিতে যে পারে
তারে আর কেহ সেধো না ।
আমি কথা নাহি কব , দুখ লয়ে রব ,
মনে মনে স ‘ ব বেদনা ।
ওগো মিছে , মিছে সখী , মিছে এই প্রেম ,
মিছে পরানের বাসনা ।
ওগো সুখদিন হায় যবে চলে যায়
আর ফিরে আর আসে না ।

8. বঙ্গভূমির প্রতি (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা)

কেন চেয়ে আছ , গো মা , মুখপানে !
এরা চাহে না তোমারে চাহে না যে ,
আপন মায়েরে নাহি জানে !
এরা তোমায় কিছু দেবে না , দেবে না —
মিথ্যা কহে শুধু কত কী ভানে !
তুমি তো দিতেছ মা , যা আছে তোমারি —
স্বর্ণশস্য তব , জাহ্নবীবারি ,
জ্ঞান ধর্ম কত পুণ্যকাহিনী ।
এরা কী দেবে তোরে , কিছু না , কিছু না —
মিথ্যা কবে শুধু হীন পরানে !
মনের বেদনা রাখো , মা , মনে ,
নয়নবারি নিবারো নয়নে ,
মুখ লুকাও , মা , ধূলিশয়নে —
ভুলে থাকো যত হীন সন্তানে ।
শূন্যপানে চেয়ে প্রহর গণি গণি
দেখো কাটে কি না দীর্ঘ রজনী
দুঃখ জানায়ে কী হবে , জননী ,
নির্মম চেতনহীন পাষাণে !

Top 10 Rabindranath Poems in Bengali

9. দুই বিঘা জমি (Rabindranath Poems in Bengali)

শুধু বিঘে-দুই ছিল মোর ভুঁই, আর সবই গেছে ঋণে।
বাবু বলিলেন, ‘বুঝেছ উপেন? এ জমি লইব কিনে।’
কহিলাম আমি, ‘তুমি ভূস্বামী, ভূমির অন্ত নাই –
চেয়ে দেখো মোর আছে বড়জোর মরিবার মতো ঠাঁই।
শুনি রাজা কহে, ‘বাপু, জানো তো হে, করেছি বাগানখানা,
পেলে দুই বিঘে প্রস্থে ও দিঘে সমান হইবে টানা –
ওটা দিতে হবে।’ কহিলাম তবে বক্ষে জুড়িয়া পাণি
সজল চক্ষে, ‘করুন রক্ষে গরিবের ভিটেখানি।
সপ্তপুরুষ যেথায় মানুষ সে মাটি সোনার বাড়া,
দৈন্যের দায়ে বেচিব সে মায়ে এমনি লক্ষ্মীছাড়া!’
আঁখি করি লাল রাজা ক্ষণকাল রহিল মৌনভাবে,
কহিলেন শেষে ক্রুর হাসি হেসে, ‘আচ্ছা, সে দেখা যাবে।’

পরে মাস-দেড়ে ভিটে মাটি ছেড়ে বাহির হইনু পথে –
করিল ডিক্রি, সকলই বিক্রি মিথ্যা দেনার খতে।
এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি ভূরি,
রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।
মনে ভাবিলাম, মোরে ভগবান রাখিবে না মোহগর্তে,
তাই লিখি দিল বিশ্বনিখিল দু বিঘার পরিবর্তে।
সন্ন্যাসীবেশে ফিরি দেশে দেশে হইয়া সাধুর শিষ্য –
কত হেরিলাম মনোহর ধাম, কত মনোরম দৃশ্য।
ভূধরে সাগরে বিজনে নগরে যখন যেখানে ভ্রমি
তবু নিশিদিনে ভুলিতে পারি নে সেই দুই বিঘা জমি।
হাটে মাঠে বাটে এইমত কাটে বছর পনেরো-ষোলো,
একদিন শেষে ফিরিবারে দেশে বড়োই বাসনা হল।।

নমোনমো নম, সুন্দরী মম জননী বঙ্গভূমি!
গঙ্গার তীর, স্নিগ্ধ সমীর জীবন জুড়ালে তুমি।
অবারিত মাঠ, গগনললাট চুমে তব পদধুলি –
ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড় ছোটো ছোটো গ্রামগুলি।
পল্লবঘন আম্রকানন, রাখালের খেলাগেহ –
স্তব্ধ অতল দিঘি কালোজল নিশীথশীতলস্নেহ।
বুক-ভরা-মধু বঙ্গের বধু জল লয়ে যায় ঘরে
মা বলিতে প্রাণ করে আনচান, চোখে আসে জল ভরে।
দুই দিন পরে দ্বিতীয় প্রহরে প্রবেশিনু নিজগ্রামে –
কুমোরের বাড়ি দক্ষিণে ছাড়ি, রথতলা করি বামে,
রাখি হাটখোলা নন্দীর গোলা, মন্দির করি পাছে
তৃষাতুর শেষে পঁহুছিনু এসে আমার বাড়ির কাছে।।

ধিক্ ধিক্ ওরে, শত ধিক্ তোরে নিলাজ কুলটা ভূমি,
যখনি যাহার তখনি তাহার – এই কি জননী তুমি!
সে কি মনে হবে একদিন যবে ছিলে দরিদ্রমাতা
আঁচল ভরিয়া রাখিতে ধরিয়া ফলফুল শাক-পাতা!
আজ কোন্ রীতে কারে ভুলাইতে ধরেছ বিলাসবেশ –
পাঁচরঙা পাতা অঞ্চলে গাঁথা, পুষ্পে খচিত কেশ!
আমি তোর লাগি ফিরেছি বিবাগি গৃহহারা সুখহীন,
তুই হেথা বসি ওরে রাক্ষসী, হাসিয়া কাটাস দিন!
ধনীর আদরে গরব না ধরে! এতই হয়েছ ভিন্ন –
কোনোখানে লেশ নাহি অবশেষ সে দিনের কোনো চিহ্ন!
কল্যাণময়ী ছিলে তুমি অয়ী, ক্ষুধাহরা সুধারাশি।
যত হাসো আজ, যত করো সাজ, ছিলে দেবী – হলে দাসী।।

বিদীর্ণহিয়া ফিরিয়া ফিরিয়া চারি দিকে চেয়ে দেখি –
প্রাচীরের কাছে এখনো যে আছে সেই আমগাছ একি!
বসি তার তলে নয়নের জলে শান্ত হইল ব্যথা,
একে একে মনে উদিল স্মরণে বালককালের কথা।
সেই মনে পড়ে, জ্যৈষ্ঠের ঝড়ে রাত্রে নাহিকো ঘুম,
অতি ভোরে উঠি তাড়াতাড়ি ছুটি আম কুড়াবার ধুম।
সেই সুমধুর স্তব্ধ দুপুর, পাঠশালা-পলায়ন –
ভাবিলাম হায়, আর কি কোথায় ফিরে পাব সে জীবন।
সহসা বাতাস ফেলি গেল শ্বাস শাখা দুলাইয়া গাছে,
দুটি পাকা ফল লভিল ভূতল আমার কোলের কাছে।
ভাবিলাম মনে, বুঝি এতখনে আমারে চিনিল মাতা।
স্নেহের সে দানে বহু সম্মানে বারেক ঠেকানু মাথা।।

হেনকালে হায় যমদূতপ্রায় কোথা হতে এল মালী।
ঝুঁটিবাঁধা উড়ে সপ্তম সুরে পাড়িতে লাগিল গালি।
কহিলাম তবে, ‘আমি তো নীরবে দিয়েছি আমার সব –
দুটি ফল তার করি অধিকার, এত তারি কলরব।’
চিনিল না মোরে, নিয়ে গেল ধরে কাঁধে তুলি লাঠিগাছ;
বাবু ছিপ হাতে পারিষদ-সাথে ধরিতেছিলেন মাছ –
শুনে বিবরণ ক্রোধে তিনি কন, ‘মারিয়া করিব খুন।’
বাবু যত বলে পারিষদ-দলে বলে তার শতগুণ।
আমি কহিলাম, ‘শুধু দুটি আম ভিখ মাগি মহাশয়!’
বাবু কহে হেসে, ‘বেটা সাধুবেশে পাকা চোর অতিশয়!’
আমি শুনে হাসি, আঁখিজলে ভাসি, এই ছিল মোরে ঘটে –
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে।

10. জীবন মরণ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা)

ওরা যায়, এরা করে বাস;
অন্ধকার উত্তর বাতাস
বহিয়া কত-না হা-হুতাশ
ধূলি আর মানুষের প্রাণ
উড়াইয়া করিছে প্রয়াণ।
আঁধারেতে রয়েছি বসিয়া;
একই বায়ু যেতেছে শ্বসিয়া
মানুষের মাথার উপরে,
অরণ্যের পল্লবের স্তরে।
যে থাকে সে গেলদের কয়,
“অভাগা, কোথায় পেলি লয়।
আর না শুনিবি তুই কথা,
আর হেরিবি তরুলতা,
চলেছিস মাটিতে মিশিতে,
ঘুমাইতে আঁধার নিশীথে।’
যে যায় সে এই বলে যায়,
“তোদের কিছুই নাই হায়,
অশ্রুজল সাক্ষী আছে তায়।
সুখ যশ হেথা কোথা আছে
সত্য যা তা মৃতদেরি কাছে।
জীব, তোরা ছায়া, তোরা মৃত,
আমরাই জীবন্ত প্রকৃত।

সেরা ১০ টি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা আজকে আমরা এই নিবন্ধে তুলে ধরলাম আশা করি এই সমস্ত কবিতা আপনাদের ভালো লাগবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার ভান্ডার অফুরন্ত সেই কারণে সেরা ১০ টি কবিতা বাছাই করা প্রায় একপ্রকার অসম্ভব। প্রত্যেকটি বিভাগে আপনি সেরা ও মজার বিভিন্ন কবিতা পেয়ে যাবেন। উপরে উল্লেখিত সমস্ত কবিতা ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত যদি কোথাও ভুল ত্রুটি থাকে তবে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। এই ধরনের শিক্ষামূলক নিবন্ধের জন্য আমাদের আমাদের ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ, টুইটার পেজ, ইন্সটাগ্রাম ইত্যাদি প্লাটফর্মে ফলো করতে পারেন। ধন্যবাদ।

FAQ: Top 10 Rabindranath Poems in Bengali

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্যগ্রন্থ গুলো কি কি?

ঘরে বাইরে, চতুরঙ্গ, যোগাযোগ, শেষের কবিতা, দুই বোন, বৌ-ঠাকুরাণীর হাট, রাজর্ষি, চোখের বালি, নৌকাডুবি, প্রজাপতির নির্বন্ধ, গোরা ইত্যাদি হলো রবীন্দ্রনাথের কিছু কাব্যগ্রন্থ এছাড়াও অনেক কাব্যগ্রন্থ রয়েছে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সবচেয়ে বিখ্যাত কবিতা কোনটি?

গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ হল রবীন্দ্রনাথের সবচেয়ে বিখ্যাত কবিতার বই, যে গ্রন্থের জন্য তিনি ১৯১৩ সালের নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম কবিতার নাম কি?

হিন্দু মেলার উপহার হল রবীন্দ্রনাথের প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ।

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কত সালে জন্মগ্রহণ করেন?

১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন।

মন্তব্য করুন