পৃথিবীর ভেতর কি আছে। পৃথিবীর ভেতরের ভূভাগ কেমন

পৃথিবীর ভেতরে কি আছে (Inside of earth): সেটা জানার কৌতূহল হয়ত অনেকের মনেই আছে। পৃথিবীর ভেতরে ভূভাগ কেমন বা পৃথিবীর কেন্দ্রে কি আছে সেটা হয়তো অনেকেই জানতে চান। আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীর উপরিভাগে এত ঘর-বাড়ি, সমুদ্র, পাহাড়-পর্বত দ্বারা বেষ্টিত রয়েছে।  

পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে পৃথিবীর উপরিভাগ কে যদি বিশ্লেষণ করি, তবে পৃথিবীর উপরিভাগে যেখানে আমরা বসবাস করি সেই স্তরটি সবচেয়ে পাতলা কিন্তু শক্ত মাটি, পাথর দিয়ে তৈরি। এই স্তরটিকে “ভুত্বক”(Crust) বলে।   আমরা যদি পৃথিবীর ভেতরে সমুদ্রের সবচেয়ে গভীর জায়গাতেও যাই তবে সেই স্তরটি “ভুত্বকের” অধীনেই পরে। পৃথিবীর গভীরতা শুরু হয় ভূত্বকের নিচে যে স্তরটি আছে সেখান থেকে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গর্ত রয়েছে রাশিয়ায়। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে রাশিয়ার ইঞ্জিনিয়াররা পৃথিবীর ভেতরে মাত্র ১২ কিলোমিটার গর্ত করতে পেরেছে। পৃথিবীর কেন্দ্র পর্যন্ত যেতে গেলে আপনাকে ৬৩৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ গর্ত করতে হবে। যা কার্যত অসম্ভব। অসম্ভব বলার কারণ শুধুমাত্র গভীরতা নয়।

পৃথিবীর ভেতর কি আছে, পৃথিবীর ভেতরের ভূভাগ কেমন

পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে আপনি যত যাবেন পৃথিবীর তাপমাত্রাও তত বাড়তে থাকবে। মনেকরা হয় পৃথিবীর ভেতরের কেন্দ্রের তাপমাত্রা সূর্য পৃষ্ঠের তাপমাত্রার সমান। পৃথিবীর উপরিভাগ ভুত্বক মাত্র ৭০ কিলোমিটার গভীর। যা পৃথিবীর ভেতরের সম্পূর্ণ ভূভাগের কাছে কিছুই নয়। এই ভুত্বক স্তরের নিচের দিকের তাপমাত্রা ৬০০ থেকে ৯০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস হয়ে থাকে।  

আরও পড়ুন- কাগজের আবিষ্কারক কে ছিলেন? নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তু কাগজ আবিষ্কারের ইতিহাস

ভূত্বকের নিচে যে স্তরটি রয়েছে সেটি প্রায় ২৯০০ কিলোমিটার বিস্তৃত। যাকে আমরা “আচ্ছাদন”(Mantle) বলে থাকি। এই স্তরটি গরম পাথরের একটি মোটা স্তর। এই স্তরের উপরিভাগের কিছু কিছু জায়গায় পাথর গলন্ত অবস্থায় রয়েছে। আমাদের পৃথিবীর আগ্নেয়গিরির উৎস এখান থেকেই। এই স্তরের তাপমাত্রা ৪০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি হয়ে থাকে।  “আচ্ছাদন” এই স্তরের নীচে পৃথিবীর মূল স্তরটি রয়েছে। যা বিজ্ঞানীরা দু’ভাগে বিভক্ত করেছে উপরের স্তরটির নাম “আউটার কোর”(Outer core) ও ভেতরে স্তরটি “ইনার কোর”(Inner core) নামে পরিচিত। আউটার কোরটি ২২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।  

পৃথিবীর ভেতরের ভূভাগ কেমন

পৃথিবীর ভেতরে এই স্তরের কাছাকাছি যেতে গেলে আপনাকে ৫১০০ কিলোমিটার গর্ত করতে হবে। এই স্তরের তাপমাত্রা ৪৫০০ থেকে ৫০০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়। আর এই স্তরের কারণেই পৃথিবীর চুম্বকীয় ক্ষমতা এখনও বজায় রয়েছে। বিভিন্ন দিকনির্দেশক যন্ত্র বা কম্পাস এর উপর নির্ভর করে।  

এর নিচের স্তরটি ইনার কোর নামে পরিচিত। এই স্তরটি প্রায় ১২০০ কিলোমিটার বিস্তৃত রয়েছে। এই স্তরটিও লোহা ও নিকেল দ্বারা গঠিত হয়েছে। এই স্তরের তাপমাত্রা ৬০০০ডিগ্রী সেলসিয়াসের কাছাকাছি। পৃথিবীর ভেতরের এই মূল স্তরের তাপমাত্রা এত বেশি হওয়া সত্ত্বেও কঠিন অবস্থায় রয়েছে। এর কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা মনে করে পৃথিবীর সমস্ত স্তর গুলির চাপের কারনে এই স্তরটি কঠিন অবস্থায় রয়েছে।  

পৃথিবীর ভেতরে বিজ্ঞানীরা এই স্তরগুলি কি করে আবিষ্কার করলো তা নিয়ে সবার মনে প্রশ্ন থাকতে পারে। বিজ্ঞানীরা বিস্তারিত জানার জন্য এক ধরনের চুম্বকীয় তরঙ্গ ব্যবহার করে। যে তরঙ্গ পৃথিবীর উপরিভাগ থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত যাওয়ার সময় প্রত্যেকটি স্তরের যে পাথর রয়েছে তার সংস্পর্শে এসে পরিবর্তন হয়। এভাবে বিজ্ঞানীরা একটি গ্রাফ তৈরি করে এবং তা বিশ্লেষণ করেন।

“পৃথিবীর ভেতর কি আছে। পৃথিবীর ভেতরের ভূভাগ কেমন”-এ 2-টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন